1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

রিজার্ভ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই 

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০২২

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বখ্যাত সাময়িকী নিউজউইকের সর্বশেষ সংস্করণ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও দারিদ্র্য দূরীকরণের সাফল্য নিয়ে একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনের দাবি অনুসারে, বাংলাদেশ একটি নবীন রাষ্ট্রের সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে দ্রুত ধাবিত হচ্ছে। দেশটি ২০২১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন এবং অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে দ্বিতীয় অর্ধশতকে প্রবেশ করেছে।

বাংলাদেশ বর্তমানে এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির অন্যতম একটি দেশ। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে প্রজ্ঞা ও শক্তিশালী নেতৃত্ব দিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন।

দেশীয় উদ্যোক্তাদের হাত ধরে শিল্প খাতের উন্নয়ন বাংলাদেশের অর্থনীতিকে কৃষির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে একটি শিল্পপ্রধান রাষ্ট্রে পরিণত করার দিকে নিয়ে গেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০১০ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শিল্প খাতের অবদান ছিল ২০ শতাংশেরও কম। কিন্তু ২০১৮ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ। বাংলাদেশের জিডিপিতে উৎপাদন খাতের অবদান ১৯৮০ সালের পর হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি এবং ৯০-এর দশকের তুলনায় রফতানির পরিমাণ বেড়েছে ২০ গুণ।

এটি সর্বজনবিদিত, যে কোনো দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা, আমদানি ব্যয় নির্বাহ, দেশীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন রোধ, বাজার স্থিতিশীল রাখা, বাজেট বাস্তবায়ন, বৃহৎ প্রকল্পের অর্থের জোগান, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ ইত্যাদি নিশ্চিতকল্পে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গড়ে তোলে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুসারে, ১৯৮১-৮২ অর্থবছর থেকে দেশের রিজার্ভে বিদেশি মুদ্রার মজুত শুরু হয় এবং ওই অর্থবছর শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১২ কোটি ১০ লাখ ডলার।

পাঁচ বছর পর ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছর শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭১ কোটি ৫০ লাখ ডলারে। ১৯৯১-৯২ অর্থবছর শেষে ১০০ কোটি বা ১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে তা হয় ১ দশমিক ৬০ বিলিয়ন। ১৯৯২-৯৩ থেকে ২০০৪-০৫ অর্থবছরে তা দেড় থেকে ৩-৪ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে হ্রাস-বৃদ্ধি পেলেও ২০০৫-০৬ অর্থবছর শেষে রিজার্ভ অতিক্রম করে ৫ বিলিয়ন ডলার।

২০০৯-১০ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা ছাড়িয়ে যায় যথাক্রমে ১০ বিলিয়ন ও ১৫ বিলিয়ন ডলার। এরপর অর্থনীতির এই সূচক ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৪ সালের এপ্রিলে হয় ২০ বিলিয়ন এবং ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারিতে হয় ২৫ বিলিয়ন ডলারের অধিক। ২০১৬ সালের জুনে তা অতিক্রম করে ৩০ বিলিয়ন ডলার।

করোনা মহামারি দুঃসময়ের মধ্যে ২০২০ সালের ৩ জুন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ছাড়ায় ৩৪ বিলিয়ন ডলার। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে ২৪ জুনে হয় ৩৫ বিলিয়ন এবং এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৩০ জুনে ছাড়ায় ৩৬ বিলিয়ন ডলার। একই বছরের ৩০ ডিসেম্বর ৪৩ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে।

গত ২৪ জুলাই গণমাধ্যমে প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২১ সালে আগস্টে রিজার্ভ বেড়ে হয়েছিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। চলতি অর্থবছর শেষে রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও গত ১০ মে এশিয়ার ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেনা ২ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করার কারণে রিজার্ভের পরিমাণ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে।

ছয় দিনের ব্যবধানে রিজার্ভে আরও ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার যুক্ত হয়ে ১৬ মে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে হয় ৪২ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ছাড়াও ভুটান, ভারত, ইরান, নেপাল, মিয়ানমার, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও মালদ্বীপ আকুর সদস্য এবং ওই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশের আমদানিকৃত পণ্যের বিল দুই মাস অন্তর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি ঘিরে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার চলমান ও আগামী দিনের পূর্বাভাস, পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধের ফলে চলতি অর্থবছরজুড়েই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অনেকাংশে চাপে থাকার আশঙ্কা করছে বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার বর্তমান রিজার্ভ সন্তোষজনক কিনা সে বিষয়ে অহেতুক কিছু বিতর্ক-বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থার (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘রিজার্ভ নিয়ে আমি চিন্তিত হওয়ার মতো কিছু দেখছি না। আমাদের রিজার্ভ যখন ৩০ বিলিয়ন ডলার হয়েছিল, তখন তো আমরা খুব খুশি হয়েছিলাম। ৩০ বিলিয়নে যদি খুশি হই, তাহলে ৪২ বিলিয়নে নেমে এলে কষ্ট পাওয়ার কী আছে।’

দেশের অর্থনীতিবিদরা রিজার্ভ কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমদানি ব্যয়ের বিপুল বৃদ্ধি এবং রেমিট্যান্সের ধীরগতিকেই মূল কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি ও রপ্তানির বিশাল ব্যবধানও এর অন্যতম কারণ। গণমাধ্যম সূত্রমতে, গত অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্য বেড়েছে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলার। এ সময়ে আমদানি বিল পরিশোধ হয়েছে ৬৬ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি এবং রপ্তানি আয় এসেছে ৪৩ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের নয় মাসের চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৫ দশমিক ১৪ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক নিরাপদ মান অনুযায়ী স্বাভাবিক সময়ে কমপক্ষে তিন মাস, খাদ্যপণ্য আমদানি করতে হলে পাঁচ মাস এবং বিশ্বব্যাপী অপরিহার্য পণ্যের বাজারে অস্থিরতা থাকলে সাত মাসের সমান আমদানি ব্যয়ের রিজার্ভ থাকার বিধান রয়েছে। বর্তমানে দেশে ব্যাপক পরিমাণে খাদ্য আমদানি, বিশ্ব পণ্যবাজারে অস্থিরতা এবং বৈদেশিক আয়-ব্যয়ে বিদ্যমান বড় ঘাটতি বিবেচনায় বাংলাদেশের রিজার্ভও এখন সাত মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান থাকা উচিত বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, আন্তর্জাতিক পণ্যবাজারের ঊর্ধ্বমুখিতায় ২০২০ সালে প্রতি মাসে গড়ে আমদানি ব্যয় হতো ৩৫০ কোটি ডলার। ২০২১ সালে তা বেড়ে ৪৫০ থেকে ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০২২ সালে তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে ৭৫০ কোটি থেকে ৭৯০ কোটি ডলারে। আমদানি ব্যয় মেটাতে বাংলাদেশের রিজার্ভ সমন্বয় অধিকতর প্রায়োগিক হওয়া সমীচীন মনে করি।

বর্তমানে বিশ্বের সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভধারী দেশ হিসাবে প্রথম অবস্থানে রয়েছে এশিয়ার অর্থনৈতিক পরাশক্তি চীন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত চীনের স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অফ ফরেন এক্সচেঞ্জের তথ্যমতে, ২০২১ সালের অক্টোবর শেষে চীনের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩ দশমিক ২১৮ ট্রিলিয়ন বা ৩ হাজার ২১৮ বিলিয়ন ডলার।

একক দেশ হিসাবে চীনের রিজার্ভ বিশ্বের সর্বোচ্চ হলেও ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশটির বৈদেশিক ঋণ ও দেনার স্থিতি ছিল ২ দশমিক ৬৮ ট্রিলিয়ন বা ২ হাজার ৬৮০ বিলিয়ন ডলার। উল্লেখিত সময়ে ১ দশমিক ৪০৫ ট্রিলিয়ন ডলার নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে জাপান। তৃতীয় রিজার্ভধারী দেশ ইউরোপের সুইজারল্যান্ডের রয়েছে ১ দশমিক ৩৬ ট্রিলিয়ন ডলার। চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে ভারত ও রাশিয়া।

দেশগুলোর রিজার্ভের পরিমাণ যথাক্রমে ৬৪২ দশমিক ০১৯ এবং ৬২৪ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত অন্যান্য দেশের মধ্যে তাইওয়ানের ৫৪৪ দশমিক ৯০, হংকংয়ের ৪৯৭, দক্ষিণ কোরিয়ার ৪৬৪, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরবের ৪৫৪ দশমিক ৫০ এবং সিঙ্গাপুরের ৪১৮ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে।

চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে, বিশ্বের উন্নত ও বৃহৎ অর্থনীতির অনেক দেশই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণে তেমন মনোযোগী নয়। যেমন বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের দিক থেকে রয়েছে ২১তম স্থানে। আগস্ট ২০২১-এ তাদের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল মাত্র ১৪ হাজার ২২১ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমার প্রবণতা দৃশ্যমান হচ্ছে। আমদানি পণ্যের ক্রমবর্ধমান ব্যয় মেটাতে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপের মধ্যে পড়েছে। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের (আরবিআই) তথ্যসূত্রে গত ১৫ জুলাই পর্যন্ত রিজার্ভ ৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন কমে ৫৭২ দশমিক ৭ বিলিয়নে পৌঁছেছে।

২০২১ সালের মার্চ শেষে বৈদেশিক ঋণ ও দেনার স্থিতির পরিমাণ ২ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৫৭০ বিলিয়ন ডলার। স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের (এসবিপি) প্রতিবেদন মতে, ২০২১ সালের ৫ নভেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানের রিজার্ভের স্থিতি ছিল ২৪ দশমিক ০২৫ বিলিয়ন ডলার।

আগস্টেও এর পরিমাণ ছিল সর্বোচ্চ ২৭ দশমিক ০৬৮ বিলিয়ন ডলার। পাকিস্তানের রিজার্ভের ৬৫ শতাংশই হলো বৈদেশিক ঋণ ও অনুদাননির্ভর। দেশটির বৈদেশিক ঋণ ও দেনার পরিমাণ ৮ দশমিক ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২১ সালের ৩০ জুনে এসে দাঁড়ায় ১২২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারে।

পর্যটন ও রেমিট্যান্সনির্ভর অর্থনীতির দেশ নেপালের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও দ্রুত কমতে শুরু করায় সেদেশে অপ্রচলিত ও শৌখিন পণ্যের আমদানি সীমিত করা হয়েছে। ২০২১ সালে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত নেপালের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন এবং বৈদেশিক ঋণ ৭ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। আফগানিস্তান, ভুটান ও মালদ্বীপের রিজার্ভের পরিমাণ যথাক্রমে ৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন, ১ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন এবং ৮০০ মিলিয়ন ডলার। উল্লেখিত তথ্য-উপাত্ত বিবেচনায় আমাদের দেশের রিজার্ভ নিয়ে শঙ্কিত হওয়া যুক্তিযুক্ত নয়।

ইতোমধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখতে নানামুখী সংস্কারের পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংস্থাটির মতে, এখনো ভালো অবস্থানে রয়েছে দেশের রিজার্ভ এবং গৃহীত পদক্ষেপের কারণে রিজার্ভ আবার ভলো অবস্থানে যাবে। পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে-ব্যাংকগুলোর আমদানির খরচ মেটাতে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ, আমদানি বা ঋণপত্র বা এলসি খোলার ২৪ ঘণ্টা আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানানোর পাশাপাশি রপ্তানিকারকের রিটেনশন বা প্রত্যাবাসন কোটা (ইআরকিউ) হিসাবে জমা বিদেশি মুদ্রার ৫০ শতাংশ নগদায়ন করা, ‘ডলার’ বন্ডে বিনিয়োগের সীমা তুলে সুদ হার কমানো, রেমিট্যান্স ও বেশকিছু পণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনা ঘোষণা ইত্যাদি।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এক্ষেত্রে আরও কঠোর হওয়ার সুযোগ আছে। রপ্তানির সঙ্গে সঙ্গে রেমিট্যান্সও বাড়াতে হবে। অনাবশ্যক ও বিলাসী পণ্যের আমদানি সীমিত বা বন্ধ করতে হবে। সম্প্রতি সরকার কর্তৃক ২৫ শতাংশ বর্ধিত অপ্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি মার্জিন আরেক দফা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। বিলাসী পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে গাড়ি ও ইলেকট্রনিক পণ্য আমদানিতে এলসি মার্জিন ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক পর্যায়ে ধরে রাখার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের অহেতুক বিদেশ ভ্রমণে অনুমোদন না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

নিতান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তারা আর বিদেশে যেতে পারবেন না। এসব পদক্ষেপ বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে। গত ২৫ জুলাই মন্ত্রিসভার বৈঠকেও ব্যয় কমাতে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প স্থগিত করা, খরচ কমানোসহ বেশকিছু নির্দেশনা এবং কোন প্রকল্পের জন্য কত শতাংশ টাকা ব্যয় করা যাবে তা সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

চলমান অর্থনৈতিক সংকট সমাধানে বর্তমান সরকার দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যয় সংকোচনের উদ্যোগ নিয়েছে। বিদ্যুতের ব্যয় কমাতে অফিস-আদালতে এসির ব্যবহার বন্ধসহ নানা কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, মাননীয় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমাদের বিশ্ব পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলতে হয়। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অস্বাভাবিক পরিস্থিতি চলছে। এ অস্বাভাবিক সময় ম্যানেজ করার জন্য যা প্রয়োজন, সরকার তা-ই করছে। সময় যখন কঠিন, তখন আমাদেরও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

মূলত ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকে পরিত্রাণে গৃহীত বৈশ্বিক উদ্যোগও প্রশংসনীয়। বিকল্প পথে খাদ্যসামগ্রী রপ্তানি-বিতরণে যুদ্ধরত দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি আশাব্যঞ্জক। বছর শেষে বৈশ্বিক সমস্যা উত্তরণে অত্যুজ্জ্বল আলোয় উদ্ভাসিত নতুন পরিবেশ দৃশ্যমান হবে-এ প্রত্যাশায় নিবন্ধের ইতি টানছি।

লেখক : ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী – সমাজ ও অপরাধবিজ্ঞানী, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ