1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

পার্বত্য চট্টগ্রাম: জননিরাপত্তার স্বার্থে চালাতে হবে চিরুনি তল্লাশি

মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ১ জুলাই, ২০২৩

পাহাড়ে হঠাৎই সন্ত্রাসী তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার খবর মিলেছে। শান্তিচুক্তির পর মাঝে বেশ কয়েক বছর পাহাড় ছিল শান্ত। কিন্তু সেই শান্ত জনপদ হঠাৎ করেই সন্ত্রাসী তৎপরতার কারণে অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে শুরু করেছে। এক্ষেত্রে জঙ্গিগোষ্ঠীর মধ্যে দেখা যাচ্ছে একটি ত্রিদেশীয় পরিকল্পনা। ভারতেও জঙ্গিগোষ্ঠীর তৎপরতা সম্প্রতি বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ি জনপদে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পেছনে কাজ করছে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট, বম পার্টি বা বোম পার্টি। এই বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনটিই পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী তৎপরতার বাড়িয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ ২০১৭ সালে। সন্ত্রাসী সংগঠনটি আত্মপ্রকাশের পর ২০২২ সালের জুন মাসে রাঙামাটি জেলার বেলাইছড়ি উপজেলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির একটি ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে তিনজনকে হত্যা করে।

চলতি বছরে কেএনএফ পার্বত্য চট্টগ্রামে গর্ভবতী মায়েদের জন্য চিকিৎসা কনভয়কে এসকর্ট করা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি কনভয়কে আক্রমণ করলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নিহত ও দুই সেনা আহত হন। এ বছরের মে মাসে তারা বান্দরবানের রুমা উপজেলার অন্তর্গত সুংসুংপাড়ায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর টহল টিমের ওপর গুলিবর্ষণ করলে সেনাবাহিনীর দুইজন সদস্য নিহত হন। এ ছাড়া আরও দুইজন কর্মকর্তা আহত হন। এই সন্ত্রাসী সংগঠনটির সঙ্গে জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়ারও সম্পর্ক থাকার প্রমাণ মিলেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে অস্ত্র ও বোমা তৈরির সরঞ্জামের সঙ্গে একে-২২ রাইফেলসহ জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়া ও কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের সদস্যরা গ্রেপ্তার হয়েছে। কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের সঙ্গে কারেন বিদ্রোহীদের সম্পর্কের কথাও সংবাদমাধ্যমে এসেছে।

কুকি-চিনরা তিনটি দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বাস করে এবং সীমান্তবর্তী রাষ্ট্রের সংস্কৃতি ও ভৌগোলিক অবস্থানের সঙ্গে তারা মানিয়ে চলে। কিন্তু বাংলাদেশে কুকি-চিনের যে গোষ্ঠী অপতৎপরতা চালাচ্ছে, তারা খুব বেশিদিন টিকে থাকতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। কারণ এ ধরনের সন্ত্রাসী সংগঠন টিকে থাকার জন্য যে ধরনের সামাজিক ও রাজনৈতিক পূর্বশর্তগুলো থাকা প্রয়োজন, তার কোনোটিই কুকি-চিনের জন্য পূরণ হয়নি। আমাদের পর্যবেক্ষণ বলে, কুকি-চিন সন্ত্রাসী সংগঠন একসঙ্গে তিনটি দেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা চালাচ্ছে। এই জঙ্গি সংগঠনকে দমাতে হলে আমাদের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি আন্তঃদেশীয় সমন্বয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। আন্তঃদেশীয় সমন্বয় কেন জরুরি তা একটু ভেবে দেখা জরুরি।

যখনই এই জঙ্গি সংগঠনগুলো আর নিজেদের নিরাপদ মনে করে না, তখন তারা সচরাচর সীমানা অতিক্রম করে অন্য একটি দেশে চলে যায়। এভাবে তারা সীমান্তবর্তী এলাকায় থেকে নিরাপদ থাকার একটি সুযোগ করে নেয়। তাদের জন্য সীমানার পাশে থাকাটাই নিরাপদ। তাই আন্তঃদেশীয় সমন্বয় থাকলে সীমান্তবর্তী এলাকায় নিরাপত্তা এবং এই সংগঠনকে দমানোর পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হবে। অর্থাৎ কুকি-চিন সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে হলে আন্তঃদেশীয় সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। জঙ্গিরা সীমান্ত অতিক্রম করে যদি বারবার নিরাপদ থাকার সুযোগ পায়, তাহলে তাদের নির্মূল করা কঠিন। হবে। এ জন্যই সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে আন্তঃদেশীয় সহযোগিতা বাড়ানো প্রয়োজন। দেশের অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সক্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে যেসব সীমান্তে এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী অবাধে বিচরণ করছে, সেসব সীমান্তবর্তী রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের একজোট হয়ে কাজ করা জরুরি।

পাহাড়ে কুকি-চিন নামক সন্ত্রাসী সংগঠনের তৎপরতা বাড়ায় আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। কেন নেই, সে বিষয়টি পরিষ্কার করতে পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী ইতিহাস পর্যালোচনা করা যাক। পার্বত্য চট্টগ্রামে যে ক’টি সন্ত্রাসী সংগঠন রয়েছে তাদের তুলনায় কুকি-চিন খুবই ছোট সন্ত্রাসী সংগঠন। পার্বত্য অঞ্চলের জঙ্গি সংগঠনের বিরাট একটি অংশকে বাংলাদেশ রাজনৈতিক, সামরিক ও নানা প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। তাই কুকি-চিনের মতো সংগঠনকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারার কোনো কারণ নেই। তবে এখানে কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। আমরা দেখছি, কুকি-চিন কিংবা কেএনএফের মতো সংগঠন বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার পরও তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষত কেএনএফের কয়েকটি ঘাঁটি সামরিক বাহিনীর দখলে আসার পরও তারা কীভাবে অস্ত্র সংগ্রহ করছে এবং কীভাবে তারা নিজেদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে, সে প্রশ্নটি কারও কারও মনে ভিড় করছে। বিষয়টি বুঝতে হলে প্রথমে পাহাড়ের ভূ-প্রকৃতি এবং অবকাঠামোর কথা আমাদের ভাবতে হবে। পাহাড়ের ভূ-প্রকৃতি বিবেচনায় এসব সন্ত্রাসী সংগঠনের কয়েকটি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া গেছে মাত্র। কিন্তু ওদের অন্য ঘাঁটিগুলো তো শনাক্ত করা যায়নি। তা ছাড়া যখনই অভিযান চালিয়ে এসব সংগঠনের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়, তখন তারা পার্বত্য গ্রামে আত্মগোপন করে। এ কথাও ভাবতে হবে, ছয়টি সংখ্যালঘু জাতিসত্তা কুকি-চিন ভাষায় কথা বলে। কিন্তু এই সংখ্যালঘু জাতিসত্তার সংখ্যাও পার্বত্য অঞ্চলের অন্য জনগোষ্ঠীর তুলনায় সামান্যই।

এত স্বল্পসংখ্যক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সন্ত্রাসীরা ক’দিন পর লুকিয়ে থাকার জায়গা খুঁজে পাবে না। কারণ পার্বত্য অঞ্চলে চিরুনি তল্লাশি চালানো হলে কুকি-চিন সন্ত্রাসীদের লুকিয়ে থাকার জায়গা আরও সংকীর্ণ হয়ে আসবে। তাই আপাতত সন্ত্রাসীদের লুকিয়ে থাকার জায়গা নিয়ে চিন্তা না করে বরং অবৈধ অস্ত্র সরবরাহকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা দেখছি, পার্বত্য অঞ্চলের একাধিক জায়গায় অবৈধ অস্ত্র বিক্রি হয়। এসব অবৈধ অস্ত্র অনেক সময় পার্বত্য গ্রামেও সংরক্ষিত থাকে। পার্বত্য গ্রামে সংরক্ষিত অস্ত্রের উৎস সন্ধান করা জরুরি। পাশাপাশি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো অবৈধ অস্ত্র কেনার টাকা কোথা থেকে পায়, তাও খতিয়ে দেখা জরুরি। তাদের অর্থ আয়ের উৎস অনুসন্ধান করে অর্থ সরবরাহের পথ একেবারে রুদ্ধ করতে হবে। তাহলে এই সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো বেশি সক্রিয় থাকতে পারবে না।

সচরাচর পার্বত্য অঞ্চলে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো চাঁদাবাজি কিংবা ওই এলাকার মানুষকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় করে। তারা যেন পার্বত্য জীবনে এই সুযোগ না পায়, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর হতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর হলে এসব সন্ত্রাসী সংগঠনের ক্ষমতা কমতে শুরু করবে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সমঝোতা, সামরিক বাহিনীর চিরুনি অভিযান, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মনোযোগ বাড়ানো এবং সমাজের অভ্যন্তরে তরুণদের সমন্বয় করার বিকল্প নেই। কারণ এসবের সমন্বয়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর প্রধান আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, দেশে জঙ্গিবাদ নির্মূল করা কঠিন কিছু নয়। যদি উপরোক্ত বিষয়গুলো সমন্বয়ের মাধ্যমে সত্যিই নিশ্চিত করা যায়, তাহলে জঙ্গি সংগঠন নিয়ে আমাদের মাথা ঘামাতে হবে না।

পার্বত্য অঞ্চলে শান্তিচুক্তির বিরুদ্ধপক্ষ সংগঠনগুলোর আন্তঃকোন্দলের কারণে রক্তপাত ঘটছে। এমনকি পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর যারা এই চুক্তির পক্ষে ছিলেন তাদের অনেকে পরবর্তী সময়ে পক্ষত্যাগ করেন। পরবর্তী সময়ে পার্বত্য অঞ্চলে তাদের রাজনীতি এবং নিজেদের মধ্যকার নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই। এলাকাভিত্তিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য পার্বত্য অঞ্চলে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সূত্রপাত ঘটে। তখন আমরা দেখেছি, পার্বত্য অঞ্চলের স্বীকৃত দল বিভক্ত হয়েছে। সেখানকার নেতৃত্বে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগ রয়েছে। শান্তিচুক্তি অনুসারে সবাই যদি শান্তি স্থাপনের পক্ষাবলম্বন করত, তা হলে সেখানে এমন অবস্থা কোনোদিন থাকতে পারত না। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের পর পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে। এই মুহূর্তে শান্তির বিপরীতে গিয়ে কেউ টিকে থাকতে পারবে না। তাই আন্তঃদলীয় কোন্দল নির্মূল করার জন্য স্বীকৃত নেতৃত্ব পার্বত্যাঞ্চলে গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে সন্তু লার্মার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। কিন্তু তার নেতৃত্ব গণতান্ত্রিকভাবে স্বীকৃত নয়। তাই পার্বত্যাঞ্চলে গণতান্ত্রিক পরিবেশ গড়ে তোলা জরুরি হয়ে গেছে। আমরা যদি তাদের নেতৃত্ব গড়ে তোলার সুযোগ করে দিতে পারি, তাহলে সন্ত্রাসী নেতৃত্ব গড়ে ওঠার যে প্রবণতা এখন দেখা যাচ্ছে তা আর থাকবে না।

লেখক: মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ – নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ

নির্বাচিত

নেকড়ের তৃষ্ণা নিবারণের ভিডিও ভাইরাল

নির্বাচনকে ঘিরে ষড়যন্ত্রের বিষয়ে নেতাকর্মীদের সতর্ক করলেন শেখ হাসিনা

অক্সফোর্ড-এস্ট্রোজেনেকা ভ্যাক্সিনের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো স্বাভাবিক? কোনগুলো নয়?

নভেম্বরের শেষে ডেঙ্গু আক্রান্ত কমার আশা

রোববার প্রধানমন্ত্রী বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শনে যাচ্ছেন

কেএনএফের কেন্দ্রীয় প্রধান সমন্বয়ক গ্রেফতার

যাত্রীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা সেবা দেবে রেলওয়ে

বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বদা প্রস্তুত বাংলাদেশ: শেখ হাসিনা

সিরাজগঞ্জে অবরোধ ভেঙে রাস্তায় নামলেই খাবারের প্যাকেট পাচ্ছেন চালকরা

আ’লীগ পুনরায় সরকার গঠন করতে পারবে নাকি অন্য কিছু জড়িত?