1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ইইউ প্রতিনিধি ও বাংলাদেশের আগত নির্বাচন নিয়ে কিছু কথা

মুজতবা আহমেদ মুরশেদ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৩

বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের সময় দূরে নয়। রাজপথে এর উত্তাপ বাড়ছে। নিজের পক্ষে নির্বাচনী আবেগ টানতে প্রতিটি রাজনৈতিক দল সব রকমের চেষ্টা চালাচ্ছে। বাংলাদেশের নির্বাচন এবং রাষ্ট্রব্যবস্থায় গণতন্ত্রের স্থিতি ও বিকাশ নিয়ে বহির্বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোও কথা বলছে।

এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকায় হাজির ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষকদল। নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইওনাউ দিমিত্রা। অনেক বৈঠক করেছে দলটি। বুঝতে চেষ্টা করেছে নির্বাচনী হাওয়া কেমন! কতটুকু সংঘাতময় হবে, অথবা হবে না।

নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় সরকারি প্রভাব পড়বে কী! কেমন হবে নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি! তাদের আগ্রহ ও আশাবাদ, বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও সহিংসতামুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে।

সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও সহিংসতামুক্ত পরিবেশে হওয়ার; কিন্তু বিরোধীদের অবস্থান ভিন্ন। এই মতপার্থক্যের ভেতর দিয়েই ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিরা বিশ্লেষণ করতে পারবেন নির্বাচনের সময় বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসা প্রতিনিধিরা কতটুকু নিরাপদ অবস্থায় দেশব্যাপী ছোটাছুটি করতে সক্ষম হবেন।

পশ্চিমা বিশ্বের অতি প্রভাবশালী একটি দেশের রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি সুদীর্ঘ বছর।

সে পরিপ্রেক্ষিতে ধারণা প্রকাশ করে বলা যায়, ভোটের দিন এবং আগের তিন মাসকে নির্বাচনের সময় হিসেবে দেখে না পশ্চিমারা। বেশ লম্বা সময়কে নির্বাচনকাল হিসেবে বিবেচনা করে, যাতে নির্বাচনের বছর এবং তার পরের কয়েক মাস যুক্ত। ফলে নির্বাচনী পরিবেশ বলতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, বিরোধী দলগুলোর সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা, ভোটদান প্রক্রিয়ায় নাগরিক সমাজের স্থানসহ সার্বিক মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো যুক্ত। বিরোধীদের সঙ্গে সরকার কিভাবে আচরণ করছে, এটি তাদের গভীর মনোযোগের বিষয়।

ঢাকায় প্রতিনিধিদল আসার আগে ইউরোপের মাটিতে বাংলাদেশের আসছে নির্বাচন নিয়ে একটা আলাদা বিষয়ের অবতারণা ঘটেছে।

তা হলো বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ভূমিকা রাখতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্য চিঠি লিখেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেলকে। ১২ জুন তাঁরা ওই চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিদাতারা হলেন ইভান স্টিফেনেক (স্লোভাকিয়া), মিকেইলা সিজদ্রোভা (চেক প্রজাতন্ত্র), অ্যান্দ্রে কোভাচভ (বুলগেরিয়া), কারেন মেলচিয়র (ডেনমার্ক), হ্যাভিয়ের নারত (স্পেন) ও হেইডি হাউতালা (ফিনল্যান্ড)। প্রসঙ্গত, ইউরোপীয় ইউনিয়ভুক্ত দেশগুলো হলো : অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্র, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হাঙ্গেরি, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রুমানিয়া, স্লোভাকিয়া,  স্লোভেনিয়া, স্পেন ও সুইডেন।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এই সদস্যরা চিঠিতে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে উদ্বেগ এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছে। তারা নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করেছে এবং সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। ক্ষমতা সংহত করার জন্য সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের, নির্যাতন, অপহরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। ঢাকায় অবস্থানরত ইইউ ডেলিগেশনের মাথায় নিঃসন্দেহে তাঁদের চিঠির সারবস্তু বিরাজমান। বলা ভালো, এটিকেই তাত্ত্বিক ফ্রেম ধরে সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে টেবিলে হিসাব কষবে। কেন তারা বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে মাথা ঘামায়? এ জন্য যে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সম্মিলিত চাপ রয়েছে, যেন বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা সঠিক মাত্রায় থাকে এবং একই সঙ্গে ওই সব দেশের মানবিক সমাজের লোকজন এমন পোশাক ক্রয় করতে অনাগ্রহী, যে পোশাকে শ্রমিকের দুঃখ লেগে থাকে। অতএব তাদের মতে, একটি দেশে সুশাসন না থাকলে সেখানে গণতান্ত্রিক ভিত মজবুত হয় না, শ্রমিকের জীবনযাপনও সচ্ছল থাকে না।

দৃশ্যমানরূপে বাংলাদেশে ইইউয়ের দুই বিলিয়ন ডলারের এফডিআই মজুদ রয়েছে। ইইউয়ের বিনিয়োগ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেন, ‘আমি মনে করি, বাংলাদেশের দিক থেকে নীতিমালা পরিবর্তন করা হলে তা দ্রুত পরিবর্তিত হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যবসা করার জন্য একটি চমৎকার জায়গা।’ সম্প্রতি ‘স্ট্রেংদেনিং বাংলাদেশ-ইইউ ট্রেড অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন : ইস্যুজ অ্যান্ড পলিসি প্রায়রিটিজ’ শিরোনামে এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ইউরোপের ২৭ দেশে বছরে বাংলাদেশ এখন ২৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। এর পরিমাণ আরো ১৮ বিলিয়ন বাড়ানো সম্ভব সক্ষমতা ও পণ্যের বৈচিত্র্য বাড়িয়ে। ২০০০-০১ সালে ইউকে এবং ইইউতে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি ছিল ২.৫ বিলিয়ন ডলারের। গত ২০-২১ বছরে তা এখন ১০ গুণ বেড়ে ২৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। ইউরোপে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের শতকরা ৯০ ভাগই তৈরি পোশাক। আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো থেকে নেট এফডিআই প্রবাহ গত পাঁচ বছরে ৩.৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা এই সময়ের মধ্যে মোট এফডিআই প্রবাহের প্রায় এক-চতুর্থাংশ।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটাতে এখানে উন্নত প্রযুক্তি ও প্রযুক্তি জ্ঞান দরকার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমাদের বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। তবে আমাদের রপ্তানি পণ্যের বেশির ভাগই হলো গার্মেন্ট প্রডাক্ট। এখানে বৈচিত্র্য দরকার। সহযোগিতা চুক্তির ফলে আমরা যদি উন্নত প্রযুক্তি ও প্রযুক্তি জ্ঞান পাই, তাহলে সেটা আমাদের জন্য অনেক লাভজনক হবে। আমাদের পণ্যের মান বাড়ানো এবং পণ্যের ভেরিয়েশন বাড়ানো সম্ভব হবে। আর বিনিয়োগ আমরা আকৃষ্ট করতে পারব। সুতরাং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর একটি গভীর সম্পর্ক আছে এবং তারই পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থের নিরাপত্তা এবং তাদের দেশের জনগণের পোশাক সরবরাহ বিঘ্নহীন রাখতে তারা বাংলাদেশের নিজস্ব রাজনৈতিক বিষয়ে একটি স্বর উত্থাপন করতে পছন্দ করে। তারা চাইছে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও সহিংসতামুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠিত হোক। এ পরিপ্রেক্ষিতে যেটুকু পর্যবেক্ষণে ধরা পড়ছে তা হলো ইইউ কাঠামো বাংলাদেশ সরকারের উদ্দেশে বলতে চায়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার চালকের মূল আসনে এবং সরকারের ভূমিকা অনেক। এর প্রমাণ, ইইউ পার্লামেন্ট সদস্যদের চিঠি ও ভাষা। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা কি এমন নয় যে এখানে বিরোধী দল বিএনপি, তারা নিজেরাই গণতান্ত্রিক নয়? বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় তাদের অধিষ্ঠান গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ঘটেনি। একই সঙ্গে বলা দরকার, তাদের শাসনামলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জনসভায় তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশ্যে গ্রেনেড হামলা হয় এবং দলের প্রধান নেতারা ভাগ্যগুণে বেঁচে গেলেও ২৪ জন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

তাহলে প্রশ্ন উত্থাপিত কি হবে না, রাজনীতির পথ রক্তাক্ত করার অরাজনৈতিক খেলায় পারদর্শী বিএনপি আগামী নির্বাচনে বিঘ্ন ঘটাতে, রক্তাক্ত করতে পিছপা হবে কি? ইতিহাসের ভেতর থেকে পাওয়া উত্তর হলো, তারা শুদ্ধ পথে কাজ করবে না। তারা চাইবে, যেকোনো প্রক্রিয়ায় আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরতে। এমন মানসিকতাসম্পন্ন বিরোধী রাজনীতি করা দল থাকায় কেবল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ওপর আগামী নির্বাচন সংঘাতহীন, সুষ্ঠু ও অবাধ করা নির্ভর করে না। এ বিষয়টি বহির্বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলোর অনুধাবন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে এ-ও সত্য, ক্ষমতাসীন দলকে সুযোগ করে দিতে হবে নির্বাচনে অন্যান্য দলের যথাযথভাবে অংশগ্রহণ করে প্রচারণার। দায়িত্ব নিতে হবে অভিভাবকের মতো জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে।

লেখক: মুজতবা আহমেদ মুরশেদ – কবি, কথাশিল্পী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ