1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের প্রত্যাশা ও প্রতিফলন

মো. শামসুল আলম চৌধুরী : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ৩০ জুলাই, ২০২৩

রাজনীতি, অর্থনীতি, প্রযুক্তি ও সামরিকসহ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশটির নাম আমেরিকা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে থেকেই কৌশলগত কারণে বিশ্বের সমমনা ও শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে একচেটিয়া কর্তৃত্ব বজায় রেখে চলছে। আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসে চাকরি এবং অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সুবাদে দেশটির বিভিন্ন পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে পরিচয় ও কাজের প্রেক্ষাপটে কিছু বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করায় আজকের বিষয়টি লেখার সাহস পেয়েছি। সবচেয়ে ধনী এ দেশটির বাজার যে কোনো রপ্তানিমুখী দেশের জন্য আকর্ষণীয়। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সামগ্রিক রপ্তানি ৪৯.৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১০.৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০২০-২১ সালে ছিল ৬.৯৭ বিলিয়ন ডলার। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের টানাপোড়েন বিশেষ ভূমিকা রেখেছে কারণ যুক্তরাষ্ট্র তার ব্যবসার একটি ভালো অংশ চীন থেকে সরিয়ে নিয়েছে।

আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানির ধারাবাহিকতা রক্ষা ও সম্প্রসারণ করার লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে স্থিতিশীল সম্পর্ক থাকাটা জরুরি। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মধ্যমানের শক্তি বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যার দেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। অবস্থান, জনসংখ্যা, অর্থনৈতিক সম্ভাবনা, চলমান অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাংলাদেশকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আঞ্চলিক সংযোগ ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ একটি সম্ভাব্য কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে চলেছে। ২০০৮-এ মাথাপিছু আয় ৪৮৬ ডলার হলেও ২০০৯ সাল থেকে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ২৮০০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশের অসামান্য ও অবিস্মরণীয় ধারাবাহিক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতীয়তাবাদী নেতৃত্ব সারা বিশ্বে এমনকি মার্কিন প্রশাসনেও ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় আমেরিকার অন্যতম প্রধান মিত্র। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাস দমন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক সহযোগিতা রয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশসহ মার্কিন প্রশাসনের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক উদ্যোগগুলোতে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অন্যতম। যুক্তরাষ্ট্র কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশকে ১৫০ মিলিয়নেরও বেশি ডোজ অনুদান দিয়েছে। ২০১৩ সালের জুন মাসে তাজরীন ফ্যাশনস অগ্নিকাণ্ড এবং রানা প্লাজা ভবন ধসের পর শ্রম অধিকার এবং কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তায় গুরুতর ত্রুটির কথা উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে। ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশের অভিজাত আধাসামরিক বাহিনী, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (RAB) এবং RAB-এর সাতজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বাংলাদেশ বরাবরই উল্লিখিত বিষয়গুলোর উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রেখে জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে ও নিষেধাজ্ঞা রহিত করার সব প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যকে সমর্থন করে ২৪ মে, ২০২৩ তারিখে যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। এ নীতির অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশি ব্যক্তির জন্য ভিসা প্রদান সীমিত করতে সক্ষম হবে। এর মধ্যে বর্তমান ও প্রাক্তন বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক, বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।

বাংলাদেশ সরকারও আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। যে কারণে বিরোধী দলগুলো প্রতিনিয়ত সভা-সমাবেশ করে স্বাধীনভাবেই তাদের মতপ্রকাশ করে চলেছে। খোলাচোখে দৃশ্যমান আলোচ্য বিষয়গুলোর কারণে সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনা লক্ষ করা যাচ্ছে। উচ্চাকাঙ্ক্ষী, ধর্ম নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক দুটি মিত্র দেশের মধ্যে আস্থা-অনাস্থার প্রেক্ষাপটগুলো সাধারণ মানুষগুলোকে ভাবিয়ে তুলেছে, যা ভ্রাতৃপ্রতিম দুই দেশের সরকার ও জনগণের জন্য বিব্রতকর। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ অসামান্য কিছু সফলতা অর্জন করেছে। ১৯৯০ সালের পর বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদী বা সামরিক সরকারের অনুপস্থিতি গণতান্ত্রিক উন্নয়নে সবচেয়ে বড় সাফল্য। সন্ত্রাস দমনে শতভাগ সফলতা, অসাম্প্রদায়িক আদর্শ রাষ্ট্রব্যবস্থা, ঈর্ষণীয় অর্থনৈতিক, সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর পুনর্বাসন ইত্যাদি। ধারাবাহিক এ সফলতা এগিয়ে নিতে প্রয়োজন মিত্র দেশগুলোর অবিরাম ও অকৃপণ সহযোগিতা। যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করে মনে হয়, দ্বিপক্ষীয় সমস্যাগুলো দুই দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। বর্তমান প্রেক্ষাপটে কূটনৈতিক সফলতার জন্য সময়ক্ষেপণ না করে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করা আবশ্যক। বাংলাদেশের অর্জিত সফলতাগুলো সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিমা দেশগুলোর উচিত বাংলাদেশের অর্জনগুলোকে দৃশ্যমান সমর্থন এবং স্বীকৃতি দেওয়া, যা বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের জন্য অনুকরণীয় হতে ভূমিকা রাখতে সহায়তা করবে। তাহলে দারিদ্র্য ও সন্ত্রাসমুক্ত, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব প্রতিষ্ঠিত হবে।

লেখক: মো. শামসুল আলম চৌধুরী – ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.), পিএসসি, এমবিএ (জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়), ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক কূটনীতিক।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ