1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

এএফপিতে বিতর্কিত ফ্যাক্টচেকার কদরুদ্দিনের প্রশ্নবিদ্ধ ফ্যাক্টচেক

আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

অনেকেই জানেন কম্পিউটার ভাইরাসের প্রোগ্রামাররা এন্টি-ভাইরাস কোম্পানিতে কাজ পান। অনেক এন্টি ভাইরাস কোম্পানির বিরুদ্ধেও অভিযোগ ওঠে যে, প্রোডাক্টের চাহিদা তৈরি করতে তারা নিজেরাই ভাইরাস ছড়িয়েছে।

গুজবকে বিশ্বের অন্যতম সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। এজন্য মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ফ্যাক্টচেকিং প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশেও ফ্যাক্টচেক করার জন্য কয়েকটি সংগঠন কাজ করছে। কিন্তু তাদের কেউ নিজেরাই গুজব ছড়িয়ে ফ্যাক্টচেক করে কিনা এমন প্রশ্ন উঠেছে কারণ অনেক পোস্ট ভাইরাল হওয়ার আগেই খুব কম সময়ের মধ্যে যাচাই করা হয়ে যায়। তবে ফ্যাক্টচেকের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পক্ষপাত বড় একটি সমস্যা।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিবেচনায় ফ্যাক্টচেক করার অভিযোগ নতুন নয়। এতে সবচেয়ে বিতর্কিত নাম কদরুদ্দিন শিশির। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে লেখা থিসিস ও জামাত শিবির সংশ্লিষ্টতার কারণে তিনি অনেকবার সমালোচিত হয়েছেন। এছাড়া বিএনপি জামাতের প্রচার করা গুজব এড়িয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। গুজব ছড়ানোর জন্য সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি নুরুল হক নুরু। তার সকল বক্তব্যেই মিথ্যাচার থাকে। মৃত্যুর গুজব ছড়িয়েও ফ্যাক্টচেকারদের দৃষ্টি এড়িয়ে গেছেন তিনি। ২১শে আগস্ট বা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তারেক রহমানসহ অনেক সেলিব্রিটিদের ভয়াবহ মিথ্যাচার তারা না শোনার ভান করে।

বিতর্কিত ফ্যাক্টচেকার কদরুদ্দিন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত মতামত/বিশ্লেষণ অনুসন্ধান করে সরকারের পক্ষে যায় এমন ৩৫ জন লেখকের ফ্যাক্টচেক করার দাবি করেছেন। তার এই প্রশ্নবিদ্ধ ফ্যাক্টচেকিং এএফপিতে প্রকাশিত হয়েছে। নাম উল্লেখ না করে ১৪ জনের একাডেমিক যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। নাম উল্লেখ করা হয়েছে তিন জনের।

কদরুদ্দিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডোরিন চৌধুরী নামের এক ফেইক কলামিস্ট ভারতীয় অভিনেত্রীর ছবি ব্যবহার করে, ভুয়া পরিচয়ে লেখালেখি করে।
পৃথ্বীরাজ চতুর্বেদী সম্পর্কে অভিযোগ তিনি লেখায় মিসকোট করেছেন। এছাড়া ব্যাংকক পোস্টের লেখক ফুমিকোর একাডেমিক তথ্য পাওয়া যায় নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অপর ৩২ জনের নাম প্রকাশ করা হয় নি, অথচ সরকারপন্থী বলে অভিযুক্ত করা হয়েছে। গ্রহণযোগ্য অভিযোগ থাকলে তাদের নাম উল্লেখ করা হতো – এতে কোনো সন্দেহ নেই।

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছর সেপ্টেম্বরে ভালো লেখকের সন্ধান করেছে। যেহেতু তাদের লেখায় উন্নয়ন প্রসঙ্গ স্থান পেয়েছে অতএব তারা সরকারের নিযুক্ত লেখক। মন্ত্রণালয়ের উক্ত ঘোষণার পর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এসব লেখকের লেখালেখি শুরু হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

অভিযুক্ত লেখকরা পরিচিত কেউ নন। তবে অনুসন্ধানে সেপ্টেম্বরের আগের লেখাও পাওয়া গেছে। রহস্যজনক বিষয় হচ্ছে সরকারের মার্সিনারি লেখক বলে অভিযোগ করা ডোরিন চৌধুরী ও পৃথ্বিরাজের লেখা প্রকাশ করেছে নিউ এজ ও ডেইলি স্টার। অথচ প্রকাশকদের বিরুদ্ধে কদরের কোনো প্রশ্ন বা আপত্তি নেই!

লেখকের অস্তিত্ব আছে কিনা তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যমের। এছাড়া ছদ্মনামে লেখার প্রচলন বিশ্বে কম নেই ‌ এক্ষেত্রে লেখক বিভ্রান্তিকর তথ্য উপাত্ত দিয়ে অপপ্রচার করেছেন কিনা সেটাই বিবেচ্য।

ডেইলি স্টারে দুই লেখকের সব লেখা ও অথর প্রোফাইল ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে। তবে নিউ এজের লেখাগুলো এখনো রয়ে গেছে। এ দুটি সংবাদপত্র সরকারপন্থী না হলেও দোষ চাপানো হচ্ছে সরকারের ঘাড়ে। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক – নিশ্চিত না হয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় কোনো দেশের সরকারকে দায়ী করা কোন ধরনের সততা? একজন ফ্যাক্টচেকার কি ফ্যাক্টের সত্যতা নিশ্চিত না হয়ে অনুমানের উপর অভিযোগ তুলতে পারে?

প্রতিবেদনটি পড়লে বোঝা যায়, মূলত অভিযোগ একজনের বিরুদ্ধে কিন্তু প্রচার করা হচ্ছে যেন ৩৫ জনই ভুয়া।

পর্যবেক্ষণে মনে হচ্ছে, ফ্যাক্টচেকার কদরুদ্দিন নিজেই ডেইলি স্টার ও নিউ এজকে ব্যবহার করে ডরিন চৌধুরী নামের চরিত্র তৈরি করেছে। প্রভাবশালী কাউকে এক্সপোজ করা বা স্টিং অপারেশন সাংবাদিকতার জগতে নতুন কোনো ধারনা নয়, যদি অনেক দেশে এটি নিষিদ্ধ। কিন্তু এক্ষেত্রে যা ঘটেছে তাকে স্টিং অপারেশন বলারও সুযোগ নেই। তবে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় স্পেস পেতে এমন পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে অনুমান করা যায়।

কোন মিডিয়ায় কে বা কারা লেখালেখি করছে তা নিয়ে কোনো সাংবাদিকেরই মাথাব্যথা থাকার কথা নয়। তারা যা লিখছে সেখানে ভুল তথ্য বা অপপ্রচারের উপাদান আছে কিনা সেটাই বিবেচ্য। কিন্তু কদরুদ্দিন একজনকে ভুয়া প্রমাণ করে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে লেখালেখি করেন এমন সকলকে প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে। সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ ছাড়া এমন অভিযোগ যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তা বোঝার জন্য সাধারণ বিবেচনাই যথেষ্ট। এছাড়া ডেইলি স্টার বা নিউ এজে কেউ ভুয়া পরিচয়ে কলাম লিখতে পারে তা কারো কল্পনায়ও বোধহয় ছিল না।

আমার বদ্ধমূল ধারনা, জামাত শিবিরের কর্মী কদরুদ্দিন নিজেই ডরিন চৌধুরীকে তৈরি করে ফ্যাক্টচেক করার পরিকল্পনা করেছে। নির্বাচনের আগে সম্ভবত এমন আরও কিছু ফ্যাক্ট আনার চেষ্টা করবে যার গ্রাউন্ড কদর বা তার সহযোগীরা তৈরি করে রেখেছে বা তৈরি করছে। সরকারের উচিত এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

সূত্র:
১. নিউ এজে ডরিন চৌধুরীর প্রোফাইল

https://www.newagebd.net/credit/Doreen%20Chowdhury

২. ডরিন চৌধুরী লেখা
https://www.newagebd.net/article/173752/call-put-out-for-international-attention

৩. ডেইলি স্টারে প্রকাশিত লেখাগুলো প্রিন্ট ভার্সন ও গুগল ক্যাশে এখনো রয়ে গেছে

লেখক : আবদুল্লাহ হারুন জুয়েল – সাবেক ছাত্রনেতা ও কলামিস্ট 


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ