1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

রাজনীতিতে সহিংসতা নয়, প্রয়োজন সমঝোতা

ড. প্রণব কুমার পান্ডে : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২২

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রায় ১৪ বছরে বাংলাদেশ নতুনরূপে আবির্ভূত হয়েছে পৃথিবীর মানচিত্রে। আজ থেকে ঠিক এক দশক আগেও বাংলাদেশ সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক ধারণা ছিল। বিশেষত আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশকে একটি দারিদ্র্যপীড়িত রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করা হতো। স্বাধীনতা-উত্তরকালে হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির সাথে তুলনা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু চেষ্টা করেছিলেন বাংলাদেশকে একটি স্বনির্ভর রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ভয়াবহতায় সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশ পুনরায় অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে গিয়েছিল। ১৯৭৫ পরবর্তী ইতিহাস সকলের জানা। সেনাবাহিনী শাসিত সরকার গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করে অস্ত্রের মুখে দেশ শাসনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিল। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে এরশাদের পতনের মাধ্যমে ১৯৯১ সালে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলেও দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকেনি। বাংলাদেশ বদলে যেতে শুরু করে ২০০৯ সাল থেকে। আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় এলে দিন বদলের সনদ বাস্তবায়নের লক্ষ্য সামনে রেখে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা শুরু করেছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তাঁর চেষ্টা সফল হয়েছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

এই পরিবর্তিত বাংলাদেশের অর্জনকে শুধু আওয়ামী লীগ নয়, আন্তর্জাতিক মহল স্বীকৃতি দিয়েছে। তাছাড়া ২০২০ সাল পরবর্তী সময়ে করোনা অতিমারি মোকাবিলায় বর্তমান সরকারের সফলতা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। করোনা অতিমারি থেকে বের হয়ে পৃথিবী যখন স্বাভাবিকতার দিকে ফিরছে, ঠিক সেই সময় রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করে। একটা পর্যায়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়, যার প্রভাবে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়তে শুরু করে। ঠিক সে অবস্থায় দাঁড়িয়ে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের সরকার বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে শুরু করে।

আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সরকারকে অভ্যন্তরীণ বাজারে তেলসহ কিছু পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করতে বাধ্য করেছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের উদ্যোগে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, যার প্রভাব মানুষের জীবনের ওপর পড়তে শুরু করেছে। তবে, সরকার যখন সঠিকভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে, ঠিক সেই সময় বাংলাদেশের বিরোধী দল-বিএনপি-আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে এক ধরনের সহিংসতা তৈরির প্রচেষ্টা শুরু করেছে।

গত সাড়ে তের বছরে আওয়ামী লীগের আমলে দেশে ব্যাপক উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে কেন এই ধরনের প্রচেষ্টা– সেটি সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। অনেকেই প্রশ্ন প্রশ্ন করতে শুরু করেছে কী কারণে দেশে এই ধরনের অপচেষ্টা চলছে?

নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন কিছু নয়। প্রতি পাঁচ বছর পর পর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধী দল সহিংস আন্দোলন শুরু করে। এর আগেও আমরা দেখেছি ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী জোট কীভাবে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিল। পেট্রোলবোমা দিয়ে মানুষকে জ্যান্ত পুড়িয়ে ফেলার মতো ঘটনা ঘটেছিল সেই সময়। তাহলে কি আমরা সেই একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি প্রত্যক্ষ করার দিকে ধাবিত হচ্ছি? সাম্প্রতিক সময়ে এই দলটি যে ধরনের ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত করার প্রচেষ্টা শুরু করেছে তা সেদিকেই ইঙ্গিত করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই ঘটনা তারা কি শুধু আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই ঘটাচ্ছে, নাকি তাদের আগের কাজের ধারাবাহিকতায় তারা এই ঘটনা ঘটাচ্ছে?

এই রাজনৈতিক দলের অস্থিতিশীলতা তৈরির একটি ইতিহাস রয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫ সালে হত্যার পরে পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় চার নেতাকে নৃশংসভাবে জেলের অভ্যন্তরে হত্যা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে দেশে পাকিস্তানপন্থী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছিল। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাসনামলে অনেক সেনাবাহিনীর অফিসারকে হত্যা করা হয়েছিল, যাদের হত্যার বিচার হয়নি।

পরবর্তীতে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে (২০০১-২০০৪) বাংলাদেশে একদিকে যেমন বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা সংঘটিত হয়েছে, ঠিক তেমনি সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। সেই সময়ে দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার কথা আমাদের আজও ভাবিয়ে তোলে। কীভাবে বাংলাদেশের মাটিকে ব্যবহার করে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ভারতের উলফা বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর কাছে অস্ত্র পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টা হাতে নেওয়া হয়েছিল? কীভাবে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে সেটি বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তির ইন্ধনে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা করার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেত্রীকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের কায়দায় পরিচালিত সেই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনাকে মেরে ফেলে আওয়ামী লীগকে দুর্বল করে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করা। একই সাথে আরও বেশ কয়েকবার শেখ হাসিনাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল।

রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সাম্প্রদায়িক শক্তি কীভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল সেটিও বাংলাদেশের জনগণ প্রত্যক্ষ করেছে। বিএনপির শাসনামলে স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়িতে পতাকা তুলে দেওয়ার মাধ্যমে জাতিকে চরমভাবে অপমানিত করা হয়েছিল। এই দলটি একইভাবে ২০১৪ সালে নির্বাচন বয়কট করে নির্বাচনকে প্রতিহত হওয়ার ঘোষণা প্রদানের মাধ্যমে প্রায় তিন মাসের অধিক সময় হরতাল ডেকে জনগণের জীবন বিপর্যস্ত করেছিল। সেই সময়ে পেট্রোলবোমার ভয়াবহতার কথা মনে হলে আজও বাংলাদেশের জনগণ আঁতকে ওঠে। বাস, ট্রাক, ট্রেনসহ পুলিশের গাড়িতে পেট্রোল বোমা মেরে কয়েকশ’ মানুষকে জীবন্ত লাশ বানানো হয়েছিল সেই সময়। আবার অনেক মানুষ সেই বোমার দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে আজকেও বেঁচে আছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার অধিকার যেকোনও রাজনৈতিক দলের রয়েছে। কিন্তু নির্বাচন প্রতিহত করার নামে জনগণের জানমালের ক্ষতি করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার অধিকার কোনও দলের নেই। তারা একই কাজ করেছিল ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময়।

অনেক লম্বা সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে অবস্থান করায় দলটি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হলেও আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবার মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে, যার আলামত আমরা ইতোমধ্যে লক্ষ করতে শুরু করেছে। সরকারের বিভিন্ন নীতির বিরোধিতার নামে বিভিন্ন সভা-সমিতি থেকে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। ইতোমধ্যে আমরা মুন্সীগঞ্জের ঘটনা দেখেছি? কীভাবে বাঁশের লাঠি এবং বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র দিয়ে পুলিশের ওপরে হামলা করেছে এই দলটির নেতাকর্মীরা। পুলিশ জীবন রক্ষার্থে গুলি চালালে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের একজন সদস্য নিহত হয়, যা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের মাধ্যমে পুলিশের ওপরে ইচ্ছাকৃত আঘাত করার ভিডিও প্রত্যক্ষ করেছি। একই সাথে জনসভায় দাঁড়িয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা পুলিশকে প্রতিহত করার ঘোষণা প্রদানের মাধ্যমে তাদের সমর্থকদের উসকে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপির একজন নেতা মঞ্চে দাঁড়িয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য অস্ত্রের লাইসেন্স চেয়েছেন। তাদের এই বক্তব্যগুলো বিভিন্ন মিডিয়ায় মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

এই ঘটনাগুলোর মাধ্যমে যে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে উঠেছে সেটি হচ্ছে এই দলটি আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে এক ধরনের অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে চায়। এই অস্থিতিশীলতা তৈরি হলে শুধু সরকারই বিপদে পড়বে না, একই সাথে জনগণের জীবন বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে আওয়ামী লীগের শাসনামলে অনেক ব্যতিক্রমী অর্জন যেমন রয়েছে, ঠিক তেমনি কোনও কোনও ক্ষেত্রে সরকার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারপরেও সামগ্রিকভাবে উন্নয়নের যে ধারা অব্যাহত রয়েছে, সেটিকে বাধাগ্রস্ত করবার জন্য এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করার অভিপ্রায়ে বিরোধী দলের এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় জড়িয়ে পড়া বাংলাদেশের জনগণ কখনোই ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করবে না।

তারা শুধু পুলিশের ওপরই হামলা চালায়নি, অনেক ক্ষেত্রে টেলিভিশনের সাংবাদিকদের ওপরও হামলা চালিয়েছে। অতিসম্প্রতি দেশ টেলিভিশনের রিপোর্টার আনোয়ার হোসেন এবং ক্যামেরাম্যান দেলোয়ার হোসেনের ওপরে আক্রমণ চালিয়েছে বিএনপির সমর্থকরা। তাদের অপরাধ ছিল বিএনপি সদস্যরা যখন আওয়ামী লীগের কর্মীদের ওপর চড়াও হয়েছিল সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ করেছিল তারা। বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ করে এই দলটির সমর্থকরা। এই ধরনের সশস্ত্র আক্রমণ এবং মানসিকতা কোনোটিই দেশের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার জন্য কাঙ্ক্ষিত নয়।

দেশের সরকার যখন করোনা অতিমারির মতো দুর্যোগ মোকাবিলা করে ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করছে, ঠিক সেই সময় বিরোধী দলের উচিত ছিল সরকারকে সমর্থন করা এবং একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্বাচন কমিশনের ডাকে সাড়া দেওয়া। কিন্তু তারা কোনোটিই না করে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির মাধ্যমে পাকিস্তানপন্থি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়, যা বাংলাদেশের মানুষ কখনোই মেনে নেবে না। ফলে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের উচিত সম্মিলিতভাবে এ ধরনের অপচেষ্টা প্রতিহত করা। কারণ, রাজনীতিতে সহিংসতা কোনও সমাধান দিতে পারে না। আলোচনার মাধ্যমেই সকল সমস্যার সমাধান আসতে পারে।

লেখক: ড. প্রণব কুমার পান্ডে – অধ্যাপক, লোক-প্রশাসন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ