1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা যেভাবে বদলে দিলো মিরপুরের হকার ব্যবস্থাপনা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ১০ অক্টোবর, ২০২২

রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা মিরপুর ১০-এর গোলচত্বর ফুটপাতে কিছুদিন আগেও স্বাচ্ছন্দে হাঁটাচলা করা সম্ভব হতো না। ফুটপাতের অধিকাংশ স্থানই দখলে থাকতো হকারদের। একদিকে হকার ও ক্রেতাদের চাপ অন্যদিকে রাস্তায় গাড়ি, রিকশা থামিয়ে রাখা হতো। এখন দিনে পথচারীদের আর সে সমস্যায় পড়তে হয় না। ফুটপাতের দোকানগুলো বিকাল ৪টা পর্যন্ত বসতে পারছে না। সুযোগ পাচ্ছে চিহ্নিত করে দেওয়া নির্দিষ্ট স্থানে বিকাল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বসার। উত্তর সিটির সাথে হকারদের ব্যবস্থাপনায় একসাথে কাজ করছে ব্র্যাক।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের একটি পরিকল্পনায় মিরপুর ১০ নম্বর এলাকার হকাররা অনেকটাই ব্যবস্থাপনার মধ্যে চলে এসেছে। কোনো হকারকে উচ্ছেদ না করেই ব্যবস্থাপনার মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে তাদের। এছাড়া হকারদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করে তাদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন কাজেও সম্পৃক্ত করবে ঢাকা উত্তর সিটি।

এর আগেও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের রাস্তা ও ফুটপাত থেকে হকারদের উচ্ছেদের জন্য এবং তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন উত্তরের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। তিনি উত্তরের বিভিন্ন রাস্তায় সময় বেধে দিয়েও হকারদের বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছিলেন কিন্তু তা আর আলোর মুখ দেখেনি।

তবে ঢাকা উত্তরের বর্তমান উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। তারা বলছেন হকারদের উচ্ছেদ করে ব্যবস্থাপনায় আনা সম্ভব নয়। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে বিভিন্ন পণ্যের দোকানের জোন আলাদা করে ব্যবস্থা নিলে এর সুফল পাবে নগরবাসী।

মিরপুর ১০ গোলচত্বর এলাকায় সপ্তাহে পাঁচদিন বিকাল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশনের চিহ্নিত করে দেওয়া ফুটপাতে বসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে হকারদের। নির্দিষ্ট সময়ের পরে রাস্তার উপর কিংবা ফুটপাতে রাখতে পারছে না কোনো মালামাল। সময় শেষে সরিয়ে ফেলতে হচ্ছে ফুটপাত থেকে।

শুধু মিরপুর ১০ এলাকা নয়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার আওতাধীন সড়ক ও পথচারী চলাচলের জায়গায় বসা হকারদের একটি নিয়মের আওতায় আনবে ঢাকা উত্তর। এরই অংশ হিসেবে মিরপুর ১০ এলাকাকে তারা পাইলট প্রকল্প হিসেবে নিয়েছে।

সরেজমিনে মিরপুর-১০ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অন্য সময়ের মতো সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ফুটপাতে তেমন হকার দেখা যায় না। সিটি কর্পোরেশনের বেঁধে দেওয়া সময় বিকাল ৪টা থেকে তারা কার্যক্রম শুরু করে। তবে এখনও পুরো ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

ঢাকা উত্তরের এমন উদ্যোগ স্বাগত জানিয়েছে এলাকাবাসী। এমনকি হকাররাও এতে খুশি।

মিরপুর-১০ এর বাসিন্দা সুস্মিতা দাস বলেন, “ফুটপাত এখন অনেকটাই খালি হয়েছে। আগের মতো চলাচলে খুব সমস্যা হচ্ছে না। তবে এখনও ফুটপাতের মধ্যে হকাররা দোকানের আসবাব রেখে দেয়। আমরা চাই পুরো নিয়ন্ত্রণে আসুক।”

এ এলাকার হকার জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, “সিটি কর্পোরেশন আমাদের উচ্ছেদ না করে যদি ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনতে চায় সেক্ষেত্রে আমরা স্বাচ্ছন্দে গ্রহণ করবো। এখন ৬ ঘণ্টা নির্ধারণ করে দিয়েছে আমরা ঐ সময়েই বসি। আয় কিছু কম হলেও ভয় থাকে না উচ্ছেদের।”

হকাররা জানায় সিটি কর্পোরেশনের বেধে দেওয়া দোকানের অবকাঠামো (পোর্টেবল মোবাইল দোকান) তৈরী করতে তারা কিছুদিন সময় চেয়ে নিয়েছে। এ মাসের মধ্যেই সেটা সম্পন্ন হবে বলে তারা আশাবাদী।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের সহায়তায় উত্তর সিটি হকারদের জীবিকার ব্যাঘাত না ঘটিয়ে পরিকল্পনার মাধ্যমে এ সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করার জন্য সেপ্টেম্বরের ১৯ তারিখ থেকে কাজ শুরু করেছে।

ফুটপাতে হকারদের স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হবে না এবং কোনও প্রকার ফি আদায় করা যাবে না বলেও জানিয়েছে উত্তর সিটি কর্পোরেশন। পাইলটিং হিসেবে মিরপুর-১০ এলাকার হকারদের তালিকা করছে উত্তর সিটি।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ হুমায়ুন রশীদ জনি বলেন, “আমরা এ মাসের মধ্যে মিরপুর-১০ এলাকা পুরোপুরি ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসতে পারবো। ‘গণপরিসরে স্ট্রিট ভেন্ডর ব্যবস্থাপনা’ নামে একটি অ্যাপসের মাধ্যমে আমরা এ এলাকার হকারদের তথ্য নিচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা প্রায় ১৬০০ জনের তথ্য নিয়েছি। এ এলাকায় প্রায় ২০০০ হকার রয়েছে।”

তিনি বলেন, “সবার তথ্য নিয়ে এরপরে ব্যবস্থাপনায় যাবো। যাদের একাধিক দোকান রয়েছে সেগুলো থেকে একটি রেখে বাকিগুলো বাতিল করা হবে। আমরা পর্যায়ক্রমে তাদের আগ্রহের ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ তৈরী করে দিবো।”

গত ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের স্ট্রিট ভেন্ডর কার্যক্রম পাইলটিং বাস্তবায়ন কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে উত্তর সিটির বোর্ড সভায় পাইলটিং কার্যক্রমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মিরপুর-১০ গোলচত্বরের প্রধান রাস্তার নির্দিষ্ট সীমানায় কোনও যানবাহন থামবে না। গণপরিসরে হকারমুক্ত জোন চিহ্নিত করা হবে। পণ্যের ধরন অনুসারে নির্ধারিত জোন অনুযায়ী চিহ্নিত স্থানে বসতে হবে। হকার ব্যবস্থাপনা কমিটি যাচাইবাছাই করে হকার তালিকা ও ডাটাবেজ প্রস্তুত করবে। এছাড়াও সিদ্ধান্ত হয়, ফুটপাতে জনসাধারণের স্বাভাবিক চলাচল, সুষ্ঠু ব্যবসায়িক পরিবেশ, শৃঙ্খলা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অক্ষুণ্ণ রাখতে অঞ্চল পর্যায়ে হকারদের মনিটরিং টিম গঠন করা হবে।

ঢাকা উত্তর সিটি জানায়, উত্তর সিটির নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির সহযোগিতায় হকারদের ব্যবস্থাপনা হবে। এছাড়া বর্জ্য অপসারণের জন্য পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কাজে লাগানো হবে। এছাড়া মনিটরিংয়ের জন্যও সিটি কর্পোরেশন থেকে টিম করে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মাকসুদ হাসেম বলেন, “আমাদের উদ্যোগের মূল হচ্ছে স্ট্রিট ভেন্ডরদের জন্য একটি নীতিমালা তৈরী করা। আমরা এলাকাভিত্তিক হকারদের বসাতে তাদের তালিকা প্রস্তুত করছি। মিরপুর-১০ এলাকায় আমরা একটা শৃঙ্খলায় নিয়ে এসেছি। ফুটপাতে একটি নির্দিষ্ট স্থান চিহ্নিত করা থাকবে সেখানেই দোকান বসাতে হবে। পথচারীদের হাঁটার পথ রেখেই ফুটপাতে দোকান বসাতে হবে।”

“আমরা বেশ কয়েকবার মিরপুর-১০ এর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে হকার উচ্ছেদ করেছি। কিন্তু তারা উচ্ছেদেরও পরেও এসে বসে যায়। এজন্য একটা নীতিমালা তৈরী করা হবে।”

ব্র্যাক আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (ইউডিপি) প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর মোঃ ওয়াসিম আক্তার বলেন, “আমরা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সাথে হকারদের ব্যবস্থাপনায় একটি কাজের রূপরেখা তৈরী করেছি। আমরা কাউকে উচ্ছেদ না করে এবং পথচারীদের কোনো সমস্যা না দিয়ে ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসতে চাই। পাইলটিং এলাকায় আমাদের পর্যালোচনা চলছে। তবে আমাদের কাজ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়নি।”

ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, “ফুটপাতগুলো হকারমুক্ত করতে হলে টেকসই ব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই। হকারদের জন্য আমরা একটি মডেল তৈরি করে নীতিমালার মধ্যে নিয়ে আসবো। উন্নত দেশের মতো আমরা কম ব্যস্ত রাস্তায় হলিডে মার্কেট ও সন্ধ্যাকালীন মার্কেট ব্যবস্থা চালু করবো।”

মেয়র বলেন, “পর্যায়ক্রমে হকারদের বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবো। মিরপুর এলাকায় পাইলটিং শুরু করেছি। পর্যায়ক্রমে পুরো উত্তর সিটিকে ব্যবস্থাপনার মধ্যে নিয়ে আসবো।”

এদিকে গতমাস থেকে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও পথচারীদের চলাচলের জায়গা হকারদের দখলমুক্ত করার পদক্ষেপ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। সড়কগুলোকে গুরুত্ব অনুসারে লাল, হলুদ ও সবুজ জোনে ভাগ করেছে। লাল চিহ্নিত জোনে কয়েকদিন পর পর অভিযান চালালেও ব্যবস্থাপনায় আসছে না হকার।

হকারদের শৃঙ্খলায় আনতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন বলেন, “হকারদের উচ্ছেদ কার্যক্রম কখনোই টেকসই কোনো সমাধান নয়। আমরা বিভিন্ন সময় উত্তর ও দক্ষিণ সিটিকে হকারদের ব্যবস্থাপনায় পরামর্শ দিয়েছি যাতে তাদের উচ্ছেদ না করে ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসে। এজন্য হকারদের ব্যবস্থাপনায় পেশিশক্তির কোনো ধরনের প্রভাব রাখা যাবে না। থাকলেই পরিকল্পনা কাজে আসবে না।”

উল্লেখ্য, পৃথিবীর সব দেশেই কমবেশি হকার রয়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও হকাররা নিয়মের মধ্যে ব্যবসা করছে। থাইল্যান্ডে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ফুটপাতের একাংশে হকার বসতে দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট সময়ের পরে নিজেরাই ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে স্থানটি ঝাড়ু দিয়ে চলে যায়। মালয়েশিয়ায় হকারদের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। ওই সীমার ভেতরেই হকাররা ব্যবসা করে। ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশে হলিডে মার্কেট আছে। কলকাতায় হকারদের জন্য স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া আছে।

অথচ বাংলাদেশের হকারদের নিয়ে টেকসই কোনো ব্যবস্থাপনা নেই। তারা ফুটপাত, রাস্তা, এমনকি সড়ক দখল করেও দোকান বসায়।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ