দেশের মৎস্য সম্পদের সুরক্ষা ও মাছের বংশ বিস্তারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল শুক্রবার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। এ কারণে উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে গেছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলের হাজার হাজার জেলে। মূলত মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য এক সপ্তাহ ধরে প্রস্তুতি নিয়েছে তারা।
শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম নগরীর ফিশারিঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, জেলেরা কেউ কিনারে মেরামত করা জাল টেনে ট্রলারে তুলছে। কেউ বা ট্রলারগুলোর খন্দলে বরফ আর প্রয়োজনীয় বাজার করে প্রস্তুতি নিচ্ছে সাগরযাত্রার। তেল, ড্রাম, রশি ও সব ধরনের সামগ্রী বোঝাই করার পর পরখ করে নেয়া হচ্ছে ফিশিং ট্রলার।
জেলেরা জানান, গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতেই অনেকে পাড়ি দিয়েছে সাগরে। আবার সকালেও সাগরে নামার প্রস্তুতি নেয় অনেক জেলে।
জেলেরা আরো জানান, নিষেধাজ্ঞার ফলে তারা আর্থিক অভাব-অনটনের মধ্যে দিন পার করেছে। অনেক জেলে ঋণগ্রস্তও হয়ে পড়েছে। তাই সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে ঋণমুক্ত হওয়ার চেষ্টা করবে তারা।
বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা কয়েক জেলে জানান, মাঝারি কিংবা বড় সাইজের ট্রলার নিয়ে সাগরে নামতে খরচ হয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। অনেকেই ঋণ করে এই টাকা সংগ্রহ করেছে। তিন দিন আগে চট্টগ্রাম নগরীর ফিশারিঘাটে আসে তারা। এরপর জাল, নৌকা ঠিক করে। শুক্রবার রাতে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার প্রস্তুতি ছিল তাদের।
এদিকে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে জেলেরা খাদ্য সহায়তা হিসেবে চাল পেলেও তা ছিল অপ্রতুল। উত্তর চট্টলা উপকূলীয় জলদাস সমবায় কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক লিটন জলদাস বলেন, ‘উত্তর চট্টগ্রামে পাঁচ হাজার ৬০০ নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। অনেক জেলে চাল পাননি। জেলেরা অভাবে পড়ে চড়া সুদে ঋণ নিচ্ছে।’
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী জানান, জেলেরা ২২ দিনের সরকারি নির্দেশনা পালন করেছে। নিষেধাজ্ঞার সময় কোনো ট্রলার সাগরে যেতে দেয়া হয়নি। তাই নিষেধাজ্ঞার পরপরই জেলেরা গভীর সাগরে মাছ শিকার করতে যাচ্ছেন।
জেলেদের খাদ্য সহায়তায় অপ্রতুলতার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ২৬ হাজার ৯৯২ জন। আমরা স্থানীয় ওয়ার্ড, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দেয়া তালিকা অনুযায়ী চাল দিয়েছি।’
উল্লেখ্য, গতকাল শুক্রবার মধ্যরাতে শেষ হয় ইলিশ শিকারে সরকারের জারি করা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। রাত ১২টার পর থেকেই গভীর সাগরে ইলিশ শিকারের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে মাছধরার ট্রলারগুলো। এবার প্রচুর বড় আকারের ইলিশ পাওয়ার আশা করছে তারা।