1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ধানের দেশে বেড়েছে পানের চাষ

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ২ অক্টোবর, ২০২৩

পান-সুপারি দিয়ে আতিথেয়তা উত্তরের পুরোনো সংস্কৃতি। ভাওয়াইয়ার সুর সমৃদ্ধ উত্তর জনপদে বছরের পর বছর ধরে মেহমানদারিতে রাখা হচ্ছে পান-সুপারি। এ যেন উত্তরের মানুষের আতিথেয়তার ঐতিহ্য। এ কারণে ধানের দেশে পানের কদর কমেনি, বরং পানের চাষ বেড়েছে দ্বিগুণ হারে। এতে করে ধান, পাট, তামাকের পাশাপাশি রংপুর অঞ্চলের পান এখন অর্থকরী ফসলের অংশ হয়েছে। প্রতি বছর পানে হচ্ছে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য। সেই সঙ্গে পরিত্যক্ত জমি পান চাষের আওতায় আসায় কৃষকের আয়ও বেড়েছে।

পান চাষে দিন বদলের সেই গল্প বলছিলেন রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার চৈত্রকোল ইউনিয়নের দানিশনগর গ্রামের সুরুজ মিয়া। একসময় তার জীবন যুদ্ধে লেগেছিল অভাব-অনটন। সংসারে দুঃখ ছিল তার নিত্যসঙ্গী। তখন কষ্ট দূর করতে স্বল্প পুঁজিতে পান চাষে মনোনিবেশ করেন তিনি। ধৈর্য আর পরিশ্রমে বদলে যেতে থাকে তার জীবন। পানের ব্যাপক ফলনে তার জীবনে নেমে আসা দরিদ্রতার কারণে হন নিরুদ্দেশ। পানের বরজে ভাগ্যের চাকা ঘুরে হাসি ফুটে সুরুজ মিয়ার পরিবারে।

এখন সুরুজ মিয়ার মতো অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী এই গ্রামের অনেক পান চাষি। দিন বদলের হাওয়ায় পান চাষে বদলে গেছে এই উপজেলার মানুষের জীবনচিত্র। শুধু সুরুজ মিয়া নন এখন পীরগঞ্জ উপজেলার আড়াই হাজারের বেশি কৃষক পান চাষ করে তাদের সংসারে হাসি ফুটিয়েছে। এমন সাফল্যে পান চাষে ঝুঁকে পড়ছে রংপুর জেলার চাষিরা। এতে করে দিন দিন রংপুরে ছড়িয়ে পড়ছে পানের গ্রাম।

পানচাষি সুরুজ মিয়া জানান, ২০১৩ সাল থেকে ৫০ শতক জমিতে পান চাষ করেন। সব খরচ বাদ দিয়ে এখন প্রতি বছরে ২ থেকে ৪ লাখ টাকা আয় হচ্ছে তার। সুরুজ মিয়ার পান চাষ দেখে বর্তমানে ওই এলাকার প্রায় ৭০ ভাগ চাষিই পান চাষ করছেন। একই ইউনিয়নের পীরেরহাট ও দানিশনগর গ্রামের কৃষক আবদুল ওয়াহ আলী, আব্দুর রশিদ, মিজানুর রহমান, মিঠিপুর ইউনিয়নের একবারপুর গ্রামের আলামিন মিয়া, নুরুন্নবী সরকার, পাঁচগাছি ইউনিয়নের আমোদপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম জানান, এ বছর পানের ফলন খুব ভালো হয়েছে।

বর্তমানে রংপুরের আট উপজেলার মধ্যে পীরগঞ্জে সবচেয়ে বেশি পান চাষ হচ্ছে। এই উপজেলার ১৫ ইউনিয়নের মধ্যে অন্তত আট-দশটিতে সাধারণ চাষিরা অন্যান্য চাষাবাদের সঙ্গে পান চাষ করছে। উৎপাদন খরচ বেশি হলেও বছরের অধিকাংশ সময়ই পানের দাম ভালো পাওয়া যায়। তাই অন্যান্য ফসলের সঙ্গে চাষিরা পান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রংপুর কৃষি অঞ্চল তথা রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলায় ধান, পাট, আলু, ভুট্টা, তামাকের আবাদ নিয়ে ব্যস্ত থাকত কৃষক। তাই এক যুগে আগেও রংপুরের হাটবাজার দখল করেছিল পটুয়াখালীর মহেশখালির পান। বর্তমানে রংপুর কৃষি অঞ্চলে প্রায় পাঁচশ হেক্টর জমি পান চাষের আওতায় এসেছে। হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন প্রায় ৭ শমিক ৩৯ মেট্রিক টন। ফলে রংপুর কৃষি অঞ্চলে পানের উৎপাদন সাড়ে তিন হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়েছে।

এদিকে রংপুরে ২০১৯ সালে ৭৩ হেক্টর জমিতে পানের বরজ ছিল। বর্তমানে ২০২৩ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ১৩৮ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। রংপুরের সবচেয়ে বেশি পান উৎপাদন হচ্ছে পীরগঞ্জ উপজেলায়। এছাড়া রংপুর সদর, বদরগঞ্জসহ জেলার আট উপজেলাতেই পানের উৎপাদন বেড়েই চলেছে। সারা বছর পান পাতা বিক্রি করে আয় হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। তাদের মতে বরজে পান আছে মানে টাকার সংস্থান তৈরি হয়ে আছে।

পান চাষের জন্য বিখ্যাত হয়েছে রংপুর সদর উপজেলার পানবাজার গ্রাম। একসময় এ গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ পান চাষের ওপর নির্ভরশীল ছিল। পান বাজার থেকে পানের চাষ ছড়িয়েছে পার্শ্ববর্তী তারাগঞ্জ উপজেলা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। পানবাজার গ্রামের কৃষক হারেশ মিয়া ২৫ শতক জমিতে ৭৫ হাজার টাকা খরচ করে পানের বরজ করেছেন। প্রতি তিন থেকে চার মাস পরপর বরজ থেকে পানের পাতা তুলে বিক্রি করছেন তিনি। এতে করে প্রতি বছর খরচ বাদ দিয়ে তার প্রায় ৮০ হাজার টাকা করে আয় হচ্ছে।

পানচাষি আশরাফুল ইসলাম ও মোস্তাফিজার রহমান জানান, আগে তারা ধান, পাট, আলুর  চাষাবাদ করতেন। এখন আবহাওয়ার ওপর ভরসা নেই। ঝড়-বন্যার পানিতে ধান নষ্ট হয়ে যায়, আলুতে ব্লাইড ধরে। ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে চিন্তায় থাকতে হয়। কিন্তু পানের দাম সারা বছরই ভালো থাকে। এখানে ঝুঁকি ও খাটুনি কম কিন্তু আয় বেশি। তাই পান চাষ করে তাদের সংসারে অনেক উন্নতি হয়েছে।

পীরগঞ্জের পাঁচগাছী ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরাবাদের পান চাষি সুরেশ রায় বলেন, চার মাস পরিশ্রম করার পর একবার ধান, পাট, আলু ঘরে তোলা যায়। অপরদিকে পানপাতা সারা বছরই বিক্রি করে টাকা আসে। একবার পানের বরজ গড়ে তোলা হলে তা প্রায় এক যুগ ধরে টিকে থাকে। ফলে একবার পানে বিনিয়োগ করলে এক যুগ ধরে এর ফসল ভোগ করা যায়।

একই এলাকার সুমন মিয়া জানান, ৪০ শতক জমি থেকে তিন মাস পরপর পান তোলা যায়। পান তোলার পর বরজে সেচ, সার, বরজ মেরামত করতে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। এই জমির পান বিক্রি করে বছরে প্রায় ৭০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা আয় করা যায়। মৌসুমভেদে পানের দাম উঠানামা করলেও শ্রমিক খরচ কম থাকায় পান চাষে লাভ বেশি।

চাষিরা জানান, পান গাছ লাগানোর ছয় মাসের পর থেকেই ফলন পাওয়া যায়। আর একবার লাগানো গাছ থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২০ বছর অনায়াসে সংগ্রহ করা যায় পান পাতা। ধানসহ অন্যান্য ফসলের তুলনায় পান চাষে লাভের পরিমাণ অনেক বেশি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে পানের বাম্পার ফলন হয়। আর ফলন ভালো হলে বাজারে দাম ভালো পাওয়া যায়।

পাঁচগাছী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া বলেন, আমার ইউনিয়নের এনায়েতপুর, জাহাঙ্গীরাবাদ, নাসিরাবাদ, পানেয়া গ্রামের অনেক চাষি এখন পান চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের পান চাষে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। প্রতি একর পানের বরজ থেকে বছরে খরচ বাদ দিয়ে কৃষকরা প্রায় ৫ লাখ টাকা আয় করতে পারছে।

তিনি আরও বলেন, সরকারি সহায়তা ও স্বল্পসুদে ঋণ পেলে আগামীতে পীরগঞ্জসহ রংপুর জেলায় পানের চাষ আরও বাড়বে। বর্তমানে রংপুরের পান চাষিরা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় পান সরবরাহ করছে বলেও তিনি জানান।

কৃষি সম্প্রসারণ রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক আফতাব হোসেন বলেন, পান অর্থকরী ফসল। অন্য ফসলের তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় রংপুর অঞ্চলে পান চাষে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে। বর্তমানে পান চাষের আওতা বেড়েছে। এছাড়া পান রংপুর অঞ্চলের আতিথেয়তার অন্যতম উপকরণ। তাই দেশে পানের চাহিদা ও বাজার দুটোই ভালো।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ