চট্টগ্রামে ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রো বলেছেন, ইতালি একটি পরিবেশবান্ধব দেশ। সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জি-২০ সম্মেলনে বায়োফুয়েল ইনিশিয়েটিভে সই করেছেন। ফলে বাংলাদেশে বর্জ্য থেকে জ্বালানি উৎপাদনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রে ইতালি বর্জ্য থেকে জ্বালানি উৎপাদনে কারিগরি সহায়তা দিতে আগ্রহী।
বুধবার (৪ অক্টোবর) চট্টগ্রামের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
ইতালির রাষ্ট্রদূত বলেন, গত বছর ইতালি-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পার করেছে। বাংলাদেশের সপ্তম রপ্তানি বাণিজ্যকেন্দ্র ইতালি। বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে প্রচুর তৈরিপোশাক রপ্তানি হয়। ভবিষ্যৎ বাজার চাহিদানুযায়ী রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে তৈরি পোশাক বৈচিত্র্যকরণের বিকল্প নেই।
তিনি ইতালির ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশের ফুড প্রসেসিং, মেশিনারিজ, আইসিটি, শিপবিল্ডিং এবং অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রায় দুই লাখ জনশক্তি ইতালিতে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। গতবছর প্রায় ১.২ বিলিয়ন ইউরো রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন তারা। ভবিষ্যতেও বৈধপথে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি আমদানি করা হবে। এক্ষেত্রে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে যৌথভাবে টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার এবং ম্যানেজমেন্ট এডুকেশন সেন্টার করার বিষয়ে মতপ্রকাশ করেন তিনি।
সভায় চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, ইতালিতে রপ্তানিকৃত বাংলাদেশি পণ্যের অধিকাংশই তৈরিপোশাক। তাই রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বাংলাদেশ থেকে আম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফল, মিঠাপানির মাছ, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক খেলনা এবং বাইসাইকেল ইত্যাদি আমদানির জন্য আহ্বান জানান। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে উল্লেখযোগ্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে চট্টগ্রাম অঞ্চল বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। বিনিয়োগের বিভিন্ন সুবিধা ব্যবহার করে চট্টগ্রামে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে ইতালিয়ান ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
এছাড়া ওমর হাজ্জাজ বাংলাদেশের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তীতে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো ইতালিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো যাতে কোটামুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখে সেজন্য রাষ্ট্রদূতের সহায়তা কামনা করেন। একই সঙ্গে ২০৪১ সালের মধ্যে মোট জ্বালানি চাহিদার ৪০ শতাংশ পরিবেশবান্ধব নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে মেটানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন শিল্পকারখানায় রুফটপ সোলার স্থাপনে বিনিয়োগ করছে শিল্পমালিকরা। এক্ষেত্রে ইতালি বিনিয়োগকারীদের এ সেক্টরে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজের সভাপতিত্বে আয়োজিত সভায় চেম্বার সহ-সভাপতি রাইসা মাহবুব, ইতালির অনারারি কনসাল মীর্জা সালমান ইস্পাহানী, তুরস্কের অনারারি কনসাল জেনারেল সালাহ্উদ্দীন কাসেম খান, চেম্বার পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ, মো. রকিবুর রহমান টুটুল, মাহফুজুল হক শাহ, মোহাম্মদ মনির উদ্দিন ও ওমর মুক্তাদির, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি এ এম মাহবুব চৌধুরী, বিকেএমইএ পরিচালক আহমেদ নুর ফয়সাল, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান, মেরিডিয়ান গ্রুপের পরিচালক আকিব কামাল, বাংলাদেশ-কোরিয়া ট্রেনিং সেন্টারের অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার নুরুজ্জামান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মোরশেদুল হকসহ ইউরো এক্সিম ব্যাংক, বিএসআরএম গ্রুপ এবং ব্র্যাক প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
সভায় অন্যদের মধ্যে ফিলিপাইনের অনারারি কনসাল এম এ আউয়াল, চেম্বার পরিচালক এ কে এম আক্তার হোসেন, মো. অহীদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন, জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর ও আখতার উদ্দিন মাহমুদসহ ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
