1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

উন্নয়নে বদলে যাচ্ছে ঢাকা!

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৩

উত্তরার বাসিন্দা ৩৯ বছর বয়সী সোহেলি নাসরিন যানজটের মধ্যে প্রতিনিয়ত অফিস করেন মতিঝিলে। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টায় অফিস শেষ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১০টা বেজে যায়। রবিবার (৫ নভেম্বর) থেকে উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেল চলাচল শুরু হওয়ার ঘোষণায় যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। অন্তত দুই-তিন ঘণ্টা জীবন (সময়) ফিরে পাবেন ভাবতেই তিনি আনন্দিত। সোহেলি ও তার মতো আরও হাজারো ঢাকাবাসীর জীবন সহজতর করে তুলতে ইতোমধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হয়েছে। মেট্রোরেল ও এক্সপ্রেসওয়ের নিচের রাস্তা করা হয়েছে প্রশস্ত। এই উন্নয়নের ধারা লক্ষ্য করে প্রশ্ন উঠছে— যানজট ও জনসংখ্যাবহুল দূষিত শহরের তালিকায় বারবার উঠে আসা রাজধানী ঢাকা কি আসলেই বদলাচ্ছে?

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, ঢাকা একটা রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মেট্রোরেলে সব বয়সীদের যে নিরাপদ চলাচলের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখা যায়, সেটা ভীষণ আনন্দ দেয়। তবে পরিবহনের যে চাহিদা আমাদের, সেটার তুলনায় এখনও এটা খুবই কম। মোট পাঁচটি রুটে মেট্রো লাইন চালু হলে তবেই সার্বিক সমাধান সম্ভব হবে। সেদিক থেকে চাহিদা জোগানে ফারাক আছে। এছাড়া প্রধান সড়কে যানবাহনের শৃঙ্খলা ও ফুটপাতগুলো চলাচল উপযোগী করলে ফলাফল দ্রুত আসবে।

শনিবার (৪ নভেম্বর) মতিঝিল রুট পর্যন্ত মেট্রোরেল উদ্বোধন হওয়ার কারণে যে পরিবর্তন সূচিত হতে যাচ্ছে— তার সুফল পাবে উত্তরার বাইরের বাসিন্দারাও। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানের মধ্যে ভ্রমণের সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাই মিরপুর ও গাজীপুর এলাকার বাসিন্দারাও শহরের মধ্যে যাতায়াতের এ উন্নতি উপভোগ করতে পারবেন।

বিমানবন্দর থেকে কুড়িল, মহাখালী ও তেজগাঁও হয়ে ফার্মগেট পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার বিস্তৃত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ইতোমধ্যে চালু হয়েছে। মাত্র ৮ মিনিটে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেটে আসার বিরল অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে রাজধানীবাসী। এই এক্সপ্রেসওয়েটি রাজধানীর ব্যস্ত সড়কগুলোর বিকল্প সড়ক হিসেবে কাজ করছে। মাত্র ৮০ টাকার বিনিময়ে বেঁচে যাচ্ছে কয়েকঘণ্টা।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের (এনবিইআর) এক গবেষণায় উঠে আসে, বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহর ঢাকা। ১৫২টি দেশের ১২০০টির বেশি শহরের মোটরযানের গড় গতি নিয়ে এ গবেষণা করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘দ্য ফাস্ট, দ্য স্লো, অ্যান্ড দ্য কনজাস্টেড: আরবান ট্রান্সপোর্টেশন ইন রিচ অ্যান্ড পুওর কান্ট্রিস’ শীর্ষক ওই গবেষণা গত আগস্টে প্রকাশিত হয়।

বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকায় যানবাহনের গড় গতি ঘণ্টায় মাত্র ৬ দশমিক ৪ কিলোমিটারে নেমে এসেছে, যা হাঁটার গতির চেয়ে সামান্য বেশি। প্রতিবেদনে জোর দিয়ে ঢাকায় যানজটের কারণে বছরে প্রায় ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক পরিসরে এই ভয়াবহ উপস্থাপনার দিন শেষ হতে শুরু করেছে। নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আখতার হোসেন মনে করেন, বদলাতে শুরু করেছে ঢাকা। তবে সেটা কেবল শুরু। আরও অনেক নিয়মতান্ত্রিক পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ফলাফল পেতে আরও কয়েকবছর সময় লাগবে।

তিনি বলেন, ‘আগে মেট্রোর মতো সার্ভিস আমাদের দেশে দেখিনি। এগুলো অনেক দীর্ঘ প্রকল্প, শেষ হতে সময় লেগেছে। কিন্তু এখন যখন নিরাপদ অনুভূতি নিয়ে সব বয়সীদেরকে মেট্রো ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে, সেটার আনন্দ তুলনাহীন। তবে পরিবহনের যে চাহিদা সেটার তুলনায় এখনও কম। বিনিয়োগ হিসাবে এর প্রভাব অনেক বেশি। কিন্তু এটা মানুষের কাজে লাগবে। ঢাকার সত্যিকার বদল আনতে চাইলে গণপরিবহন আরও দরকার। প্রান্তিক জনগণ ও নিম্নবিত্তের জন্য রাজধানীতে কখনোই পরিবহনের ব্যবস্থা ছিল না, এখনও নেই। ফলে বাসের দিকটা আরও বেশি বিবেচনায় আনা দরকার। একইসঙ্গে মেট্রো ও এক্সপ্রেসওয়ের নিচের রাস্তায় শৃঙ্খলা দরকার’

তিনি বলেন, ‘প্রধান সড়ক থেকে রিকশা-অটোরিকশা সরানো দরকার। এগুলো এলাকাভিত্তিক চলার অনুমোদন থাকলে কম দূরত্বের ক্ষেত্রে মানুষ এর সেবা নিতে পারে। যানবাহনের ধীরগতি নিয়ন্ত্রণটা খুব দরকার। নাহলে অনেক সার্ভিস দিয়েও ফলাফল পাবেন না। সুন্দর প্রশস্ত ফুটপাত তৈরি করে যদি মানুষের হাঁটার সুযোগ করে দিতে না পারেন, তাহলে এর ফলাফল মানুষ আসলে পাবে না।’

সিডিউল-বেজড গণপরিবহন ব্যবস্থাপনা নগরের চরিত্র তৈরি করে উল্লেখ করে এআরআইয়ের সাবেক পরিচালক ও বুয়েটের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘মেট্রোর মধ্য দিয়ে আমরা সেটা পেলাম, কিন্তু শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন দিয়ে যানজট নিরসন হবে না। শক্তিশালী পলিসি দরকার, যার মাধ্যমে নগরের পরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়ন হবে। সড়কের সক্ষমতা বাড়ছে, কিন্তু ঢাকায় রোজ যানবাহন যুক্ত হচ্ছে। ফলে সুফল পেতে হলে ছোটগাড়ির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মেট্রো আছে এরকম অন্য শহরের যানজট কমানোর জন্য ছোট যানবাহনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হয়েছে। সেটা না করে কেবল অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছোট ছোট গাড়ি ও রাজধানীর বাইরের মানুষদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে— যেটা ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। রাজধানী বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব না হলে অন্তত প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ শুরুর সময় এসেছে।’


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ