1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বিএনপির নীরবতা তাদের অস্তিত্বহীনতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৩

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন দল আগ্রহী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বিতরণ করছে। দেশের উল্লেখযোগ্য এবং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিএনপি ছাড়া অধিকাংশই নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী বিএনপি এ নির্বাচন বয়কটে অটল রয়েছে। জানা গেছে, এটা তাদের শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত। এও জানা যাচ্ছে, দলটির তৃণমূল থেকে অনেক প্রভাবশালী নেতৃত্ব নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে চাপ দিলেও কোনো সাড়া মিলছে না। বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়, শীর্ষ পর্যায়ের কোন জায়গা থেকে এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া মিলছে না।

নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল তারা বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে কোনো উদ্যোগ নেবে কি না? জবাবে তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, সংবিধান মোতাবেক নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব তাদের, কোনো দলকে নির্বাচনে আনা সে দায়িত্বের অংশ নয়। তার পরও কমিশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে বিএনপিকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু বিএনপির তরফে কোনো আগ্রহ দেখানো হয়নি। তফসিল ঘোষণার পরও কমিশনের একজন সদস্য জানিয়েছেন, বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে,তাহলে প্রয়োজনে তফসিল সংশোধনের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। এ ক্ষেত্রে আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে সংসদ নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রস্তাবিত ৭ জানুয়ারির স্থলে কিছুটা পিছিয়ে দেওয়ার সুযোগ এখনও রয়েছে। তবে খুব বেশি সময় নেই, কেননা তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠান পর্যন্ত সার্বিক প্রস্তুতির জন্য কমিশনের কমপক্ষে ছয় সপ্তাহ সময় দরকার। সুতরাং বিএনপি সত্যিই নির্বাচন বর্জন করতে যাচ্ছে, নাকি দেরিতে হলেও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন একটি ‘যৌক্তিক অবস্থানে’ নিয়ে যাবে; এটাই এখন দেখার বিষয়।

এখানে ‘যৌক্তিক অবস্থান’ বলছি এ কারণে, এখন পর্যন্ত বিএনপি নেতৃত্বাধীন মাত্র কয়েকটি দল এ নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্তে অটল থাকলেও নিবন্ধিত ৪৯টি রাজনৈতিক দলের অধিকাংশই অংশগ্রহণের জন্য তাদের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে বিএনপির উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সাবেক সংসদ সদস্য এবং সিনিয়র নেতাও তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম বা অন্যান্য দলের নেতা দল অথবা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। এহেন পরিস্থিতিতে সরকার একতরফাভাবে নির্বাচন করতে যাচ্ছে বিএনপির এমন দাবিকে যৌক্তিক ভাবার কোনো অবকাশ নেই। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সদম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি ছাড়া সব দলই যেখানে এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, সে ক্ষেত্রে এটি কোনো বিবেচনাতেই একতরফা নির্বাচন নয়। বাস্তবতা হচ্ছে তাদের নেতৃত্বে এত দিন ধরে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্য দলগুলো এবং কিছু নেতা পর্যন্ত যেখানে এ নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে যৌক্তিক মনে করছেন, সে ক্ষেত্রে তফসিল বাতিল করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকার তথাকথিত যৌক্তিক অবস্থান ভীষণভাবে প্রশ্নবোধক হয়ে পড়েছে।

২২ নভেম্বর বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যতম শরিক দলগুলোর মধ্যে তিনটি নিবন্ধিত দল বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে কল্যাণ পার্টির প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম জানিয়েছেন, সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তারা পেরে উঠতে না পেরে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিষয়টি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে বলা যায়, কল্যাণ পার্টি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ছোট দল হলেও উপলব্ধিবোধ থেকে তারা বুঝতে পেরেছে আন্দোলনকে একটি যৌক্তিক পরিণতিতে নিয়ে যেতে হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। তা ছাড়া তারা এও উপলব্ধি করতে পেরেছে, বিগত জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে এমনকি ২০০৯ সালের পর থেকে বিএনপির নেতৃত্বে জোটবদ্ধভাবে সরকারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলন পরিচালিত হয়ে এলেও এ ক্ষেত্রে জনগণের দিক থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। তফসিল ঘোষণার আগে আরেক বড় রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি বর্তমান সরকারের অধীনে এ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না এ নিয়ে সংশয় থাকলেও তাদের পক্ষ থেকেও ২২ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের তরফে সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে বিএনপির বর্জনের ফলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা হারাবে এ ভাবনাটি এখন অমূলক হয়ে পড়েছে।

শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে বিএনপি নির্বাচন বয়কট করতে যাচ্ছে। একে বৈধতা দেওয়ার জন্য দলটির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দূতাবাস এবং বিদেশিদের কাছে নতুন করে চিঠি পাঠিয়ে বলা হয়েছে, দেশজুড়ে যে নানা ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটছে, তা সরকারের পক্ষ থেকেই করা হচ্ছে কিন্তু বিএনপির নাম জড়ানো হচ্ছে। এর যুক্তি হিসেবে তাদের তরফে বলা হয়েছে, এ ধরনের ঘটনায় অপরাধী ধরার ক্ষেত্রে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা প্রমাণ করে সরকারই এসব করাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তারা ২৮ অক্টোবর তাদের মহাসমাবেশ এবং তৎপরবর্তী সহিংস কর্মকাণ্ড কেন্দ্র করে দলীয় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতার গ্রেপ্তার, মামলা এবং চলমান ধরপাকড়কে সরকারের পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে বর্ণনা করেছে। তবে এখানে উল্লেখ করতে হয়, ২৮ অক্টোবরের আগে দেশের বিদেশি মিশনগুলোর পক্ষ থেকে তাদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন এবং সরকারের প্রতি সংলাপের বিষয়ে চাপ থাকলেও ওই ঘটনার পর পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে যায়। এ ক্ষেত্রে কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে কিছুটা তৎপরতা এখনও অবশিষ্ট রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে তফসিল ঘোষণার আগের দিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর বাংলাদেশে অবস্থানরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির কাছে পৃথক পত্রে সংলাপের মাধ্যমে চলমান সংকট সমাধানের বিষয়ে অনুরোধ। এর বাইরে এ নির্বাচনে বিএনপির দাবি এবং তাদের নির্বাচনে আনার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে কোনোরকম প্রচেষ্টাই লক্ষণীয় নয়, বরং তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে সার্বিক নির্বাচনী পরিবেশ মূল্যায়নে নির্বাচনের আগে-পরে মিলিয়ে ছয় থেকে আট সপ্তাহের জন্য সে দেশ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি মূল্যায়নকারী দল বাংলাদেশে অবস্থান করবে। সর্বশেষ খবরে জানা যায়, ২৩ নভেম্বর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাদের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন তাদের নিজস্ব বিষয়, যুক্তরাষ্ট্র কেবল একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়।’

অবস্থাদৃষ্টে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের অনেকটা নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ছুটির নামে বর্তমানে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। ধারণা করা যায়, তার এ অতিতৎপরতা মার্কিন সরকারের জন্য বেশ অস্বস্তিকর হয়েছে। তিনি যেভাবে একের পর এক বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে কথা বলেছেন এবং রাজনৈতিক সংকট নিয়ে জ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, অতীতের কোনো মার্কিন রাষ্ট্রদূতের আচরণে এমনটা দেখা যায়নি। এ বিষয়ে ২২ নভেম্বর রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, ‘সরকারবিরোধী আন্দোলন এবং সভাসমাবেশের পরিকল্পনার জন্য দেশের বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। এ ধরনের ঘটনা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে স্থূল হস্তক্ষেপের চেয়ে কম নয়।’ তিনি আরও বলেন,‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে চাওয়ার আড়ালে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা প্রভাবিত করতে চাইছে।’ সেই সঙ্গে রাশিয়ার পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে, এ ধরনের প্রচেষ্টা কূটনীতিসংক্রান্ত ভিয়েনা কনভেনশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

একদিকে দেশে নির্বাচনের আমেজ শুরু হয়েছে, অন্যদিকে এ উৎসবের আড়ালে অনেকটাই নিষ্প্রভ বিএনপি। একের পর এক অবরোধ এবং হরতালের কর্মসূচি দেওয়া হলেও এর পক্ষে নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের রাজপথে অনুপস্থিতি থেকে স্পষ্ট যে বার্তাটি উঠে এসেছে তা হলো, বিএনপির মধ্যে এ মুহূর্তে কাজ করছে চরম হতাশা। ফলত তাদের কর্মসূচিগুলো মাঠে মারা যাচ্ছে। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগুলো বর্জন করে নৈমিত্তিক কাজে ব্যস্ত রয়েছে। ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচন বয়কট করে তারা একতরফাভাবে আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনের সুযোগ করে দিয়েছিল। পরে এটি উপলব্ধি করতে পেরে ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এখন আবারও যেন ২০১৪ সালের পথেই হাঁটছে! তাদের এ হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে দল ভেঙে নতুন দলের সৃষ্টি এবং উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতার দলত্যাগের যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তা রোধ করতে হলে তাদের উচিত কালবিলম্ব না করে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা। অন্যথায় এবারের এ নীরবতা তাদের রাজনীতি অস্তিত্বহীনতার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

লেখক: ড. ফরিদুল আলম – কূটনীতি বিশ্লেষক, অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ