স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য উত্তরসূরি সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা উন্নয়ন আর অগ্রগতিতে বাংলাদেশকে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বে উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ আজ অপ্রতিরোধ্য। ২০০৯ সাল থেকে টানা তৃতীয় মেয়াদে দেশ পরিচালনা করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। প্রায় ১৫ বছরে অর্থনীতিসহ সব সূচকেই রয়েছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। নানামুখী উন্নয়নে বাংলাদেশ বিশ্বে আজ রোল মডেল। নানা প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, সাফল্য-ব্যর্থতা, অপ্রত্যাশিত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে নেতিবাচক প্রভাব, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে কিছু উত্তাপ-বিশৃঙ্খলা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য নেতৃত্বে কাটছে প্রায় ১৫ বছর। তৃতীয় মেয়াদের তার সরকারের উন্নয়নের খতিয়ানে সফলতার পাল্লা ভারী। পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ভ্রান্ত ইতিহাসের অন্ধকারের যবনিকা ঠেলে আলোকবর্তিকা হয়ে জাতির কাছে আবির্ভূত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। শেখ হাসিনা বেঁচে না থাকলে এ দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতো না। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে বাংলাদেশ হতো জঙ্গিরাষ্ট্র। ১৯৮১ সালে ৬ বছরের নির্বাসিত জীবনে যবনিকা টেনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুই শিশুসন্তানকে ছোট বোন শেখ রেহানার কাছে রেখে এ দেশের গণতন্ত্র আর প্রগতিশীল রাজনীতি ফেরাতে শেখ হাসিনা দেশে আসেন এবং আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনবার। ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় এসে ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণসহ বয়স্ক ও বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা চালু, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, বয়স্কদের জন্য শান্তি নিবাসসহ নানাবিধ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করেন।
বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর করতে উদ্যোগ নেন ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু করার। জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার জন্য শুরু করেন জাতীয় চারনেতা হত্যা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কার্যক্রম। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা এবং উদ্যোগ নেন বিদ্যুতের আলোতেও দেশকে আলোকিত করতে। শুধু উদ্যোগ গ্রহণ নয়, তার শতভাগ বাস্তবায়নেও চেষ্টা চালায় তার সরকার। আর এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বাংলার জনগণ আবারো বেছে নেয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ের পর টানা দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায় আওয়ামী লীগ। এই সময়ে বাংলাদেশ উন্নীত হয় মধ্যম আয়ের দেশে। ভারতের পার্লামেন্ট কর্তৃক স্থল সীমানা চুক্তির অনুমোদন এবং দুই দেশ কর্তৃক অনুসমর্থনের ফলে ৬৮ বছরের সীমানা বিরোধের অবসান ঘটে।
২০১৮ সালে টানা তৃতীয় মেয়াদে জনগণের সেবা করার সুযোগ পান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। আর তখন থেকে শত আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সফলতা অর্জন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষিসহ জনকল্যাণমুখী সব কর্মসূচি সফল বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে শেখ হাসিনার সরকার। দেশের প্রথম স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণ, পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসসহ অনেক মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে বাংলাদেশ এগিয়ে নেয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত অর্জনও কম নয়। জাতিসংঘের এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কারসহ এ পর্যন্ত ৪০টি আন্তর্জাতিক সম্মাননা ও পদকে ভূষিত হয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম ও ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন, সাহিত্য, লিবারেল আর্টস এবং মানবিক বিষয়ে অর্জন করেছেন ৯টি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি। শেখ হাসিনার জীবনের বড় প্রাপ্তি মাদার অব হিউম্যানিটি হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া। শুধু মানবিক কারণে নিজ দেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তার ঝুঁকির কথা উপেক্ষা করে ১০ লাখ নির্যাতিত রোহিঙ্গাকে মানবিক আশ্রয় দিয়ে তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। শেখ হাসিনা আজ মানবতার বাতিঘর। এই ঘরের আলো জ্বালিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার।
তার মানবিকতার আলোয় আলোকিত হোক বিশ্ব। শুভ জন্মদিনে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন সেই প্রিয়ভাজন নেত্রীর জন্য, যার হাতে নিরাপদ প্রিয় স্বদেশ আমার। জয়তু শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ প্রণয়ন করেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার পদে একজন নারীকে নির্বাচিত করেন। শেখ হাসিনাই তার মন্ত্রিসভায় প্রথম একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে নারীকে দায়িত্ব প্রদান করেন। এমনকি দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় একজন নারীকে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। সংসদ উপনেতাও করেছেন একজন নারীকে। তার সরকারই উচ্চ আদালতের বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য, প্রথম নারী সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল পদে পদায়ন করেছেন। দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে মানুষকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলে বর্তমান সরকার দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিকাশে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করে সফলতার মুখ দেখিয়েছেন দেশের মানুষকে। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের বিনা বেতনে শিক্ষার ব্যবস্থাও করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাল্যবিয়ে রোধ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কঠোর আইন করেছেন শেখ হাসিনা সরকার। সন্তান জন্মের পর আগে অভিভাবকের জায়গায় শুধু পিতার নাম লেখা হতো, এখন মায়ের নামও লেখা হয়। জননেত্রীর এ বিশেষ উদ্যোগের কারণে সমাজে মায়ের অধিকার এবং আত্মসম্মান কাগজে-কলমেও স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০২২ সালের ২৫ জুন শত্রু পক্ষের মুখে ছাই পদ্মা সেতুর উদ্বোধন শেষে তিনি আবারো জানান দেন বাঙালি ও তার ব্যক্তিগত সক্ষমতার কথা। পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর এক বছর পর এতে কাক্সিক্ষত ট্রেন চলাচলও শুরু হয়েছে। গত ১০ অক্টোবর পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পটি বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যাতায়াত ছাড়াও ট্রেনের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন সহজ হলো এবং দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটবে।
গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা নিজে সবুজ পতাকা উড়িয়ে ঢাকা শহরে মেট্রোরেলের যাত্রা উদ্বোধন করেন। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নতুন যুগের সূচনা হলো। গত ৪ নভেম্বর রাজধানীর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দীর্ঘ প্রতীক্ষিত মেট্রোরেল সার্ভিসের দ্বিতীয় ধাপের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে উত্তরা থেকে মতিঝিলের ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ মাত্র ৩১ মিনিটে অতিক্রম করতে পারছেন যাত্রীরা। ঢাকার মতো একটি শহরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প এই মেট্রোরেল। গত ১৪ নভেম্বর সারাদেশে ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ১৫৭টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
লেখক: সাব্বির আহমেদ সুবীর – কবি, সাংবাদিক ও কলাম লেখক।