1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

কারা করবে রাষ্ট্র মেরামত?

রাহাত মিনহাজ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২২

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা নিয়ে বিএনপির অবস্থান কী, তা কমবেশি সবার জানা। দলটির নেতা-কর্মীরা এখনো বলে বেড়ান, ২১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে ঘটিয়েছেন। এর জন্য একমাত্র দায়ী শেখ হাসিনা নিজে! বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এ-সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রয়েছে। তাতে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, এই হামলার জন্য দায়ী শেখ হাসিনা! তারেক রহমানের যুক্তি, সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল মুক্তাঙ্গনে যা সরিয়ে নেয়া হয়েছিল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে। আর হামলার আগে শেখ হাসিনা আইভি রহমানকে বারবার ট্রাকের ওপর আসতে বলেছিলেন। তাই এ হামলার পেছনে দায়ী আওয়ামী লীগ ও এতে শেখ হাসিনার হাত রয়েছে। কী ভয়াবহ যুক্তি! বলা বাহুল্য, তারেক রহমান এই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি।

যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নিই, তারেক রহমানের দাবি সত্য, শেখ হাসিনাই নিজের ও নিজের দলের নেতা-কর্মীদের ওপর আত্মঘাতী হামলার আয়োজন করেছিলেন। তাতেও পাল্টা প্রশ্ন জাগে, শেখ হাসিনাই যদি দায়ী হবেন তাহলে আপনারা কোন যুক্তিতে জজ মিয়া নাটক মঞ্চস্থ করলেন? খালেদা জিয়ার সরকার তো শেখ হাসিনাকেই এক নম্বর আসামি করে মামলা করতে পারত। সংবাদপত্রের পাতায় খবর হতো, ‘শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি শেখ হাসিনা।’ সব সম্ভবের এই বাংলাদেশে এমন ঘটনা ঘটতেও পারে। অদূর ভবিষ্যতে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে আবার নতুন করে মামলা দায়ের করতে পারে। কারণ বিএনপি আমলে ২১ আগস্ট নিয়ে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির প্রধান বিচারপতি জয়নুল আবেদীন তার প্রতিবেদনে, এ ঘটনায় পার্শ্ববর্তী একটি দেশ অর্থাৎ ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়ী করেছিলেন। কী অদ্ভুত প্রহেলিকা!

রাষ্ট্র মেরামতের জন্য কয়েক দিন আগে বিএনপি ২৭ দফা দাবি দিয়েছে। তাদের প্রস্তাবের দুই নম্বরে প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতি পরিহারের কথা বলা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিশদ কিছু বলা হয়নি। বিশেষ করে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা প্রসঙ্গে। এই হামলা সম্পর্কে দলটির প্রধান ও দলের অবস্থান পরিষ্কার করলে জনগণ উপকৃত হতো।

বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি। সারা দেশে দলটির ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে। দলটি আবারও রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেতে পারে সেটাও অলীক নয়, খুবই বাস্তবসম্মত বিষয়। রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্য নিয়েই দলটি সম্প্রতি রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা রূপরেখা দিয়েছে। যার মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা রয়েছে। নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের অঙ্গীকার খুবই ইতিবাচক। ১১ নম্বর দফায় বলা হয়েছে প্রশাসনিক সংস্কারের কথা। কিন্তু ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত হাওয়া ভবন নামক প্রশাসনিক বিকল্প কেন্দ্রের কথা কি এত দ্রুত বিস্মৃত হওয়া সম্ভব? বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় সরকারের আমলে হাওয়া ভবনের দৌরাত্ম্য, দুর্নীতি, প্রভাব বিস্তার মানুষ কি ভুলে গেছে? মনে হয় না। বিএনপির রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবে নতুন করে আর কখনো হাওয়া ভবন তৈরি হবে না- এমন অঙ্গীকার থাকলে ভালো হতো। অন্তত এটুকু আমরা বলতে পারতাম, দলটি ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছে।

২০০১ থেকে ২০০৬ সালের বিএনপি সরকারের আমল ছিল জঙ্গিবাদের অবাধ বিস্তার আর ভয়াবহ সব বোমা হামলার আতঙ্কজনক ক্রান্তিকাল। রাজশাহীতে বিএনপির ছত্রচ্ছায়ায় বাংলা ভাইয়ের উত্থান হয়েছে। হরকাতুল জিহাদ বোমা হামলা চালিয়েছে ফ্রি স্টাইলে। জঙ্গিবাদের বিষবৃক্ষ ডালপালা মেলেছে রাষ্ট্রযন্ত্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। বিচ্ছিন্নতাবাদ ও জঙ্গিবাদের আন্তর্জাতিক চক্রগুলো বাংলাদেশকে ব্যবহার করেছে অবাধ বিচরণ ভূমি হিসেবে। দশ ট্রাক অস্ত্র এর সাক্ষ্য বহন করে। রাষ্ট্র মেরামতের প্রস্তাবে এসব বিষয়ে দু-চার ছত্র থাকলে ভালো হতো। প্রস্তাবের ১৯ নম্বর দফাতে কোনো সন্ত্রাসবাদী তৎপরতাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় না দেয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে। কিন্তু ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়ে যে লালন-পালন আর তোষণ হয়েছে, তার জন্য একটু দুঃখ প্রকাশ করলে জনগণ আশ্বস্ত হতো। মনে রাখা প্রয়োজন, নতুন করে আশ্বাস দেয়ার আগে অতীতের ভুল স্বীকার করলে তার মাধ্যমে মানুষের বেশি কাছে পৌঁছানো যায়।

২০০৮ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আমি টেলিভিশন সাংবাদিকতা করেছি। গণজাগরণ মঞ্চের উত্থান ও হেফাজত হুঙ্কারের উত্তাল সময়ে আমি এটিএন বাংলায় জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত ছিলাম। গুলশানে বিএনপি অফিসে অনেক অ্যাসাইমেন্টে গেছি। অনেক বিএনপি নেতার সাক্ষাৎকার নিয়েছি। ক্যামেরায় সাক্ষাৎকার রেকর্ড শেষে আপ্যায়িত হওয়ার সময় অনেক শীর্ষ বিএনপি নেতার সঙ্গে খোলামেলা আলাপ হয়েছে। অনেক নেতাকে প্রশ্ন করতাম, বিএনপি কেন জামায়াত ছাড়তে পারে না? কেন যুদ্ধাপরাধী এই দলটির দায় বিএনপি বহন করছে? তখন তারা নাম না প্রকাশের শর্তে বলতেন, বিএনপির একটি বড় অংশ চায় না, জামায়াত তাদের সঙ্গে থাকুক। জামায়াতের কারণে ভারতও বিএনপিকে আস্থায় নিতে পারে না। কিন্তু জামায়াতের অর্থনৈতিক ভিত্তি ও ভোটব্যাংকের কারণে বিএনপি দলটিকে ছাড়তে পারে না।

সম্প্রতি বিএনপি দলটিকে ছেড়েছে। কিন্তু যুগপৎ আন্দোলনে আবার তারা একসঙ্গে আছে। হিসাবটা গোলমেলে। তাই রাষ্ট্র মেরামতের প্রস্তাবে জামায়াত সম্পর্কে অঙ্গীকার থাকলে ভালো হতো। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আবারও ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধী দলটির কারও হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেবে না, এমন অঙ্গীকার থাকলে মানুষ আশ্বস্ত হতে পারত। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকেও একটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া হতো। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো আলোচনা ২৭ দফাতে নেই।

একই সঙ্গে পাকিস্তান ও ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক কেমন হবে সে বিষয়েও ইঙ্গিত থাকতে পারত। এখানে একটি বিষয় প্রাসঙ্গিক। বাংলাদেশের রাজনীতিতে নানা দলে দায়িত্ব পালন করা মওদুদ আহমদ এক আলোচিত নাম। তিনি তার ‘ইমারজেন্সি অ্যান্ড দি আফটারম্যাথ: ২০০৭-২০০৮’ শিরোনামের একটি বইয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণ করেছিলেন। তাতে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, জঙ্গিবাদের উত্থান, জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ও হাওয়া ভবনসহ নানা কারণে বিএনপির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল জনগণ। বিষয়টি খুবই বাস্তব ও যুক্তিসঙ্গত। সেই ফিরিয়ে নেয়া মুখ আবার ফিরিয়ে আনতে, বা জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে পারে- এ-সংক্রান্ত কোনো বিষয় বিএনপির দফাগুলোতে নেই। কেন ভুলও স্বীকার করেনি, বিষয়টি আমলেও নেয়নি। যার অর্থ একটাই, তারা অতীতে কোনো ধরনের ভুল করেনি।

এবার আসা যাক কার নেতৃত্বে রাষ্ট্র মেরামত? খালেদা জিয়ার পর বিএনপির প্রধান নেতা নিঃসন্দেহে তারেক রহমান। শিক্ষাগত যোগ্যতা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, শিষ্টাচার আর সহনশীলতাসহ অন্যান্য মাপকাঠিতে এ কাজে তারেক রহমান কতটা যোগ্য তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। হ্যাঁ, বিএনপির কাছে তারেক রহমান আস্থার প্রতীক, তিনিই প্রধান নেতা। তাদের সিদ্ধান্তের প্রতি আমার পূর্ণ সম্মান রয়েছে। কিন্তু একটি রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী হিসেবে, এক নম্বর ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে তারেক রহমান এ কাজে নেতৃত্ব দিতে যোগ্য বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। অন্তত ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়ে তিনি যা যা করেছেন তাতে রাষ্ট্র মেরামতের যোগ্য বলে বিবেচনা করা যায় না। তাহলে বিকল্প কে? মির্জা ফখরুল। অসম্ভব। কারণ মির্জা ফখরুলকে বিএনপিই সামনে আসতে দেবে না। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে বগুড়া থেকে নির্বাচিত হলেও সংসদে যোগ দিতে না দেয়া, আর সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার বিষয়ে দলটির রহস্যজনক নীরবতা অন্য কোনো কিছু ইঙ্গিত বহন করে। সে বিষয়ে অন্য আরেক দিন আলোচনা করা যেতে পারে। তবে এটুকু বলা যায়, পুরো বিষয়টি গজনীর সুলতান মাহমুদের ভারত আক্রমণের মতো। আসলাম, দেখলাম, লণ্ডভণ্ড করে দিলাম, তারপর চলে গেলাম। উপসংহারে বলার মতো বা উল্লেখ করার মতো কিছুই নেই।

 

লেখক: রাহাত মিনহাজ – সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

 


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ