1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

অগ্নিসন্ত্রাস: বিএনপির সহিংসতা-নাশকতার বলি আর কত?

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৩

১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের তিনটি বগিতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। একটি বগি থেকে মা, শিশু সন্তানসহ চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। একই দিন রাজধানীর গুলিস্তানে দুপুর ১টার পর একটি বাসে আগুন লাগানো হয়। যেকোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য এমন ঘটনা দুঃখজনক। রাজনৈতিক সহিংসতার বলি হতে হলো চারটি প্রাণকে। নিরীহ মানুষকে জিম্মি করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার এ অপপ্রক্রিয়া গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার জন্য চরম ক্ষতিকর। এমন ঘটনায় সাধারণ মানুষ তাদের ঘৃণা প্রকাশ করছে। সংঘাত-সহিংসতার মাধ্যমে রাজনৈতিক দাবি আদায় যে সঠিক প্রক্রিয়া নয়, তারই বহিঃপ্রকাশ এ ঘৃণা। যারা এমন অপকর্ম করছে বা করেছে এবং তারপর নানাভাবে এর দায় অস্বীকার করছে, তারা জনসমর্থন আদায় করতে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়বে, এ কথা বলা যায়। মূলত জনগণের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার চাপের মুখেও যারা হরতাল-অবরোধ ডেকেছে তারা সরকারের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছেন।

যারা হরতাল-অবরোধের মাধ্যমে রাজনৈতিক দাবি আদায়ের চেষ্টা করছেন তাদের জনগণ সমর্থন দিচ্ছে না, এমনটি বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ দিনের পর দিন যেভাবে হরতাল-অবরোধ ডাকা হচ্ছে, তাতে জনসমর্থন যে প্রায় শূন্য তা পথের দিকে তাকালেই স্পষ্ট। মানুষ পথে বেরোচ্ছে তাদের প্রয়োজনেই। রাজনৈতিক দাবি আদায়ের জন্য সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলা, তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত তৈরি করায় জনসমর্থন না থাকাই স্বাভাকি। তাই দেখা যাচ্ছে, যখনই হরতাল-অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে তখন বাসে বা গণপরিবহনে আগুন লাগিয়ে কর্মসূচি সফল করার অপচেষ্টা হচ্ছে। মূলত যে রাজনৈতিক দলগুলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে, তাদের কাছে রাজনৈতিক দাবি আদায়ের যত বিকল্প পথ ছিল তা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে এ দলগুলোর অস্তিত্বসংকট তৈরি হবে। আর তাই নির্বাচন ব্যর্থ করার জন্য হরতাল-অবরোধ ডেকে মানুষকে ভয়ভীতি দেখানোর জন্য ট্রেনে-যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে তারা তাদের বেপরোয়ানা প্রদর্শন করছে।

তেজগাঁও রেলস্টেশনে সংঘটিত মর্মস্পর্শী ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দিনাজপুরে রেললাইনের ওপর স্লিপার রেখে নাশকতার অপচেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। ২০ ডিসেম্বর প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর অনলাইন সংস্করণে বলা হয়েছে, গ্রামবাসী ও আনসার বাহিনীর চেষ্টায় অল্পের জন্য রক্ষা পায় খুলনাগামী সীমান্ত এক্সপ্রেস নামে ট্রেনটি। ১৯ ডিসেম্বর রাত প্রায় সোয়া ১০টার দিকে বিরামপুর রেলস্টেশনের দক্ষিণ সিগন্যালের কাছে এ ঘটনা ঘটে। যদি গ্রামবাসী ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা তৎপর না হতেন, তাহলে ওই ট্রেনের শত শত যাত্রীর কী পরিণতি হতো তা ভাবতেও শিউরে উঠতে হয়। যারা গণতান্ত্রিক-রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও আন্দোলনের নামে জীবনবৈরী ও সম্পদবিনাশী একের পর এক নাশকতার ছক কষে সবকিছু বিপন্ন-বিপর্যস্ত করে ফেলতে তৎপর, তাদের মাথায় যদি রাজনৈতিক বলবানদের হাত স্পর্শিত না থাকে তাহলে দুর্বৃত্তপনার এত সাহস তারা দেখাতে পারত না। অসংখ্য জনের এ অভিমত অমূলক বলে উড়িয়ে দেওয়ার অবকাশ নেই। এর নাম কোনোভাবেই রাজনীতি হতে পারে না। সাশ্রয়ী এবং নিরাপদ গণপরিবহন হিসেবে রেলপথ স্বীকৃত। মানুষের প্রয়োজনের কথা বিবেচনায় রেখেই সাম্প্রতিক হরতাল-অবরোধেও ট্রেনের চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। মানুষও সাশ্রয়ী ও নিরাপদ বাহনটি ব্যবহার করে ভ্রমণ করছে। কিন্তু এ স্বাভাবিকতা ব্যাহত করার উদ্দেশ্য থেকেই রাজনৈতিক দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলনকারীরা রেলপথ বেছে নিয়েছে।

নিরীহ মানুষের জন্য দুর্ভোগ সৃষ্টি করে রাজনৈতিক দাবি আদায়ের প্রচেষ্টা সঙ্গত কারণেই জনসমর্থন আদায় করতে ব্যর্থ হয়। বরং এ ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। গণতান্ত্রিক-রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় জনবিচ্ছিন্ন রাজনীতি বেগবান হতে পারে না। ফলে যারা নির্বাচন বর্জনের কৌশল নিয়েছেন, তাদের সে কৌশল ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে। অন্যদিকে সংঘাত-সহিংসতার মাধ্যমে রাজনৈতিক দাবি আদায়ের কৌশলের বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধ গড়ে ওঠার বিষয়টিও সঙ্গত। দেশে যখন মৌলবাদী গোষ্ঠী বা জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা বেড়েছিল তখনও সাধারণ মানুষ নানাভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করেছে। জঙ্গি আস্তানা সন্দেহ হলেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানিয়েছে। দেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়। তারা নিরাপত্তাকেই প্রাধান্য দেয় সর্বাগ্রে। কারণ রাজনৈতিক সংঘাত-সহিংসতা প্রাত্যহিক জীবনের ছন্দপতন ঘটায়। বিদ্যমান সংকটময় পরিস্থিতিতে এমন ছন্দপতন মানুষ সঙ্গত কারণেই মেনে নেবে না। তারও উদাহরণ কিন্তু ইতোমধ্যে দেখা গিয়েছে। কদিন আগে নীলফামারীতে দুর্বৃত্তরা ট্রেনের ফিসপ্লেট খুলে ফেলার ঘটনা ঘটায়; যা টের পেয়ে স্থানীয়রা দুর্বৃত্তদের ধাওয়া করে। অর্থাৎ সাধারণ মানুষও এমন কর্মকাণ্ড প্রশ্রয় দিতে রাজি নয়। তা ছাড়া জনগণের দায়িত্বসচেতনতা দুর্বৃত্তদের কাছেও স্পষ্ট বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। জনবিরুদ্ধতা গড়ে উঠলে কোনো রাজনৈতিক অপকৌশলই সফল হবে না।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলের স্বতঃস্ফূর্ততা ও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতকরণে তাদের অবস্থানের কারণে নির্বাচন বর্জনকারীদের দাবি হালে পানি পাচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনের মোট নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৪৪। এর মধ্যে ২৭টি দল অংশ নিচ্ছে। পাশাপাশি স্বতন্ত্রভাবেও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন অনেকে। সুষ্ঠু-অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মানুষের প্রত্যাশা ও অবস্থানের বিপরীতে হরতালের প্রতি সমর্থনের অভাব সচেতন মানুষের অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। জনকল্যাণমূলক রাজনীতির বদলে কোনো পক্ষ যদি ক্ষমতার রাজনীতি শুরু করে তাহলে তা সাধারণ মানুষের চাহিদার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে না। মূলত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হওয়ার বিষয়ে বর্জনকারীদের আত্মবিশ্বাস না থাকার ফলেই রাজনৈতিক সংকট ক্রমে গাঢ় হচ্ছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের ভিন্ন মাত্রা দেখা যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত হলেও ভোটারের অংশগ্রহণের বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। সংবাদমাধ্যমের বরাতে আমরা শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানই বুঝতে পারছি। নির্বাচনী প্রচারের প্রথম দিনেই সংঘাত-সহিংসতার চিত্র নতুন কিছু প্রশ্নও দাঁড় করিয়েছে। স্বল্প সময়ে সংঘাত-সহিংসতার মাত্রা বৃদ্ধি করে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে ভোটারের অংশগ্রহণের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির প্রচেষ্টা দৃশ্যমান। ভোটার যদি নিরাপদে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে না পারেন তাহলে নির্বাচন আয়োজন প্রশ্নবিদ্ধ করা সহজ হবে। নির্বাচন সফল হবে কি না নির্ভর করবে ভোটারের অংশগ্রহণের ওপর। তাই ভোটারের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ইসির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলো অংশগ্রহণকারী পক্ষের রাজনৈতিক কৌশলের কাছে পরাভূত হচ্ছে। যখনই বিপক্ষে অবস্থানকারী কোনো রাজনৈতিক দলের কৌশল পরাভূত হতে শুরু করে, তখন তারা সংঘাত-সহিংসতার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। চলমান প্রেক্ষাপটে বলা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ সংঘাত-সহিংসতার মাত্রা আরও বাড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে নাগরিক দুর্ভোগ যেমন বাড়বে তেমন মানুষের মনে শঙ্কাও বাড়বে। তাই সব দিক বিবেচনা করেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাদের নজরদারি কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থার প্রয়োজনে দরকার বাড়তি মনোযোগ।

গণতান্ত্রিক কাঠামোয় জনগণই সব ক্ষমতার উৎস। জনগণ সচেতন হলে যেকোনো অপপ্রক্রিয়া দমন সহজ। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রধান অস্ত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের দায়িত্বশীলতা এবং জনগণের সচেতনতায় যেকোনো অপরাজনৈতিক কৌশল দমন করা সম্ভব। জননিরাপত্তা যাতে কোনোভাবেই রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, তা নিশ্চিত করার দায় রাজনীতিকদের। জনগণকে আতঙ্কগ্রস্ত করার অধিকার কারওই নেই। অধিকার আদায়ের নামে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করার অধিকার কোনো রাজনৈতিক দলেরই নেই। জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কর্মসূচি জনসমর্থন পাবে এমনটি ভাবা মোটেও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা নয়। বরং তা বিদ্যমান গণতান্ত্রিক-রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য হবে চরম হানিকারক। নাশকতার আগুনে জীবন ও সম্পদ পোড়ানোর প্রতিবিধান জরুরি। আমাদের প্রত্যাশা, রাজনীতিকরা দায়িত্বশীলতা বা দায়বদ্ধতার পরিচয় দেবেন এবং গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের পথটি মসৃণ করবেন। সহিংসতার সব পথ রুদ্ধ করতেই হবে যদি রাজনীতির শ্রী ফেরাতে হয়। গণতান্ত্রিক-রাজনৈতিক সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় বিষয় হলো অহিংস আন্দোলন কিংবা অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জীবনবৈরী নয় এমন কর্মসূচি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা রাজনীতিতে এসব কিছুরই অনুপস্থিতি দেখছি। আমরা দেখছি, ভোট বর্জনকারীরা নানাভাবে বিদেশি শক্তির সহায়তায় দাবি আদায়ের চেষ্টা করছেন। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের নাক গলানোর সুযোগ করে দিয়েছেন। সেই বিদেশিরাও সম্প্রতি বিরোধীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা কমিয়েছেন। কারণ সংঘাত-সহিংসতা সৃষ্টি করে এমন কোনো রাজনৈতিক শক্তি আধুনিক সময়ে সমর্থন পেতে পারে না। জনগণ এমনকি বিশ্বসম্প্রদায়ও তাদের ত্যাগ করে। যেকোনো রাষ্ট্রে জননিরাপত্তাই প্রাধান্য পায় সর্বাগ্রে। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে তাই প্রয়োজন বাড়তি মনোযোগ।

লেখক: মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ – নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও নির্বাহী পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ