1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের অপপ্রচার

সাজিদ ইউসুফ শাহ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২২

একটি প্রবন্ধে হুদভয় লিখেছিলেন, “১৯৭১ সালের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানিরা নিজেদের ভুল স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল। এর মাধ্যমে দ্বি-জাতিতত্ত্বের সাফল্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিল। পশ্চিম পাকিস্তান নিজেদের নামকরণ করেছিল পাকিস্তান হিসেবে। অনেকে ভেবেছিলেন, এ ব্যবস্থা সাময়িক।

তারা বলেছিলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে টিকে থাকতে পারবে না, নরম সুরে ফের পাকিস্তানে অঙ্গীভূত হওয়ার অনুরোধ জানাবে। ” পাকিস্তানের সেই ইচ্ছা কখনো পূরণ হয়নি। বাংলাদেশ গৌরবের সাথে স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করেছে। আর সারা বিশ্ব দেখেছে, সামাজিক-অর্থনৈতিক সূচকে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ পরবর্তী এশিয়ান টাইগার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। বৈদেশিক রিজার্ভ, মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণ, গড় আয়ু, নারী শ্রমশক্তির অংশগ্রহণের হারসহ বহু সূচকে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ ।

২০২১ সালের মার্চে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি লিখেছিলেন। ঢাকা সেই চিঠির জবাব দিয়েছে।

যাই হোক, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে অবশ্যই আগে ‌’কাঁটা’ অপসারণ জরুরি। পাকিস্তান এখনো নিঃশর্ত ক্ষমা চায়নি। অন্ধকার অতীতের মোকাবেলা না করে কোনো জাতি সামনে এগিয়ে যেতে পারে না। পাকিস্তানের পূর্বের অনেক পদক্ষেপ বাংলাদেশকে বিরক্ত করেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পাকিস্তানের সংসদ বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে প্রস্তাব গ্রহণ করে।

এর মধ্যে এমন অপরাধী ছিল যারা ১৯৭১ সালে মানবতার বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল এবং তাদের ফাঁসির রায় হয়েছিল। শেখ হাসিনা ২০১৯ সালে দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করলে পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্কের অবনতি ঘটে। পাকিস্তান সবসময় ১৯৭১ সালের তিক্ত অতীতকে ইতিহাসকে অন্ধকারেই রাখতে বেশি আগ্রহী।
একদিকে পাকিস্তান বাংলাদেশের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার ভান করে, অন্যদিকে তারা ইন্টার সার্ভিস ইনটেলিজেন্সের (আইএসআই) পুতুল পাবলিক নিউজের উপস্থাপক মারিয়া জাদুনের দ্বারা মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুর হত্যার পেছনে যে ষড়যন্ত্র – তার পেছনের সত্যটা আজও জানা যায়নি। যাই হোক – এটি নিশ্চিত পাকিস্তান সেনাবাহিনী-আইএসআই এবং বাংলাদেশে তাদের সহযোগীরা ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে কলকাঠি নেড়েছে – যার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও তার পুরো পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হয়।

ইসলামাবাদ ভিত্তিক থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে একটি নীতিগত সংলাপের আয়োজনের উদ্যোগ নেয়, যার আলোচ্য বিষয়, অতীত ভুলে যাওয়া এবং এখনো ক্ষমা চাওয়া সম্পর্কিত দাবির যৌক্তিকতা- আছে কী না তা নিয়ে! গত ৯ নভেম্বর পাকিস্তান-বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে আরও একটি উদ্যোগ নিয়েছিল আইএসআই। এর আগে ‘খেল খেল মে’ নামের একটি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের যুদ্ধ নিয়ে নিজেদের দাবির পক্ষে প্রচার চালিয়েছিল তারা। আইএসআই তাদের সেই আক্রমণমূলক প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে ১২ ডিসেম্বরে প্রদর্শিত পাকিস্তানের ড্রামা সিরিজ ‘জো বিচার গায়ি’- এর মাধ্যমে। সেখানে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের নেতিবাচকভাবে এবং পাকিস্তানি সৈনিকদের ‘নিপাট ভদ্রলোক’ হিসেবে জাহির করা হয়েছে। বিজয়ের মাসে বাংলাদেশের আবেগকে ক্ষুন্ন করতে তারা ‘সেপারেশন অব ইস্ট পাকিস্তান : দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ নামের একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করে। পাকিস্তান তাদের ভুয়া প্রোপাগান্ডা নানাভাবে অব্যাহত রেখেছে। চলতি বছর তারা লাহোরে দ্বিতীয়বারের মতো পাকিস্তান-বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মেলনের উদ্যোগ নেয়।

প্রায় সব জাতি তাদের গৌরবের মুহূর্তের চেয়ে দুর্যোগকালীন মুহূর্তকে স্মরণ করে বেশি। এর মাধ্যমে তারা এর থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যৎ দুর্যোগ এড়াতে পারে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ড বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে পাকিস্তান তার অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যা ও এক তৃতীয়াংশ অঞ্চল হারিয়েছিল। এর চেয়ে বেশি হারিয়েছে সম্মান। কিন্তু পাকিস্তান তাদের এ ভুল স্মরণ করতে চায় না, এ থেকে শিক্ষা নিতে চায় না। এ ইতিহাস তারা ভুলে যেতেই বেশি আগ্রহী।

১৯৭১ সালে যুদ্ধে পরাজয়ের পর এ সম্পর্কিত সবকিছুই পাকিস্তানি নাগরিকদের কাছে গোপন রাখা হয়েছিল। বাংলাদেশ সৃষ্টির পেছনে যেসব কারণ অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছিল তা তদন্তে কমিশন গঠন করা হয়েছিল। কমিশনের নেতৃত্বে ছিলেন পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হামুদুর রহমান। এখনো সেই কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। কয়েক দশক পরে সেটা ফাঁস হয়েছিল। এ নিয়ে পাকিস্তানের গণমাধ্যমে আলোচনা হয়েছিল। সেখানেই শেষ। এ নিয়ে আর কোনো কথা উঠেনি পাকিস্তানে। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরা নিজ স্বার্থের খাতিরে দেশের ভবিষ্যৎকে ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছিলেন। সেনাবাহিনীই দায়ী ছিল বেশি। প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান মার্শাল ল উপদেষ্টা জেনারেল ইয়াহিয়া খান এবং তার সহযোগীদেরও দায়ী করা হয়েছিল।

পাকিস্তানকে ভরসা করা যায় না- বিষয়টি উপলব্ধি করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ইসলামাবাদে গত ডিসেম্বরে তার সফর বাতিল করেন। আফগানিস্তানের বিষয়ে ওআইসির ডাকা যৌথ অধিবেশন উপলক্ষে পাকিস্তান সফরে যাওয়ার কথা ছিল তার। শাহরিয়ার আলম পাকিস্তানে গেলে, নয় বছরে সেটিই হতো পাকিস্তানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর প্রথম সফর।

গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরে পাকিস্তানের ক্রিকেট টিম বাংলাদেশ সফর করে। দলের অনুশীলনে পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের নিজ দেশের পতাকা বহন বাংলাদেশের অনেকেই ভালোভাবে নেয়নি। বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব বর্ষে পাকিস্তানের ক্রিকেট দলের এমন কাণ্ডের অনেকেই সমালোচনা করেছেন। সিভিল সোসাইটি নির্মল কমিটিও পাকিস্তানের এমন আচরণের সমালোচনা করেছিলেন।

নিকটতম প্রতিবেশী ভারতের সাথে বাংলাদেশে সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। যার বড় উদাহরণ হলো একই বছরে বাংলাদেশে ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সফর। শুধু ২০২১ সালেই ভারত থেকে ১১-১২টি দ্বিপাক্ষিক সফর অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা অতীতে কখনো হয়নি। এসব কিছুই ইন্দো-বাংলাদেশ সুসম্পর্কের ইঙ্গিত বহন করে। গত বছরের ১৫-১৭ ডিসেম্বর ব্যাপী ভারতের প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ বাংলাদেশ সফর করেন- করোনা মহামারী শুরুর পর সেটি ছিল তার প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর। রামনাথ কোবিন্দ বলেছেন, ভারতের ‘প্রতিবেশীই প্রথম’ নীতিতে- বাংলাদেশের স্থান বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেছেন, উন্নয়নে ভারত-বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব অনেক বেশি সুসংহত ও বহুমুখী। একইসাথে, একই সম্পর্ক জটিলতম সমস্যা মোকাবেলার সামর্থ্য রাখে। ৫০ বছর আগে বাংলাদেশ-ভারত বিশেষ মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হয়, যার ভিত্তি হলো ভাষা, আত্মীয়তা, ধর্ম এবং সাংস্কৃতিক ঐক্য এবং পারস্পরিক সম্মানবোধ।

লেখক : সাজিদ ইউসুফ শাহ – সোশ্যাল মিডিয়া এক্টিভিস্ট।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ