1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

গণমুখী চরিত্র রাষ্ট্রের জন্য অধিক কল্যাণকর

মানিক লাল ঘোষ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ৬ মার্চ, ২০২৩

আর মাত্র মাস দেড়েক বাকি। আগামী ২৩ এপ্রিল শেষ হচ্ছে বাংলাদেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম সময় মহামান্য রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী আবদুল হামিদের মেয়াদকাল। এরপরই দেশের ২২তম মহামান্য রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে বঙ্গভবনের বাসিন্দা হবেন মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর হয়তো রাষ্ট্রীয় প্রটোকলের বেড়াজালে তাঁর সাথে সাধারণ জনগণের সাক্ষাৎ কমে যাবে। বঙ্গভবনে বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, বিজয়া দশমী, জন্মাষ্টমী, বড়দিন, বৌদ্ধ পূর্ণিমাসহ বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণপত্র থাকে সীমিত। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কপালে জোটে এই পত্র।

যে প্রসঙ্গে আমার এই লেখা বঙ্গভবনের বাইরে অবস্থান করলেও প্রটোকলের বাইরে নন দেশের ২২তম মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন তিনি। ওই দিন তাঁর বাসভবনে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের অবাধ বিচরণ, ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময় বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু এই ঘটনা যখন এক মাসের কাছাকাছি চলে আসে তখন তা আর স্বাভাবিক থাকে না। নিজের নিরাপত্তার কথা না ভেবে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের শুভেচ্ছা গ্রহণ, তাদের সাথে কুশলবিনিময়, সাধারণ মানুষকে কাছে টেনে নেওয়া নিঃসন্দেহে নবনির্বাচিত মহামান্যের উদারতা ও তাঁর হৃদয়ের বিশালতারই পরিচয়।

গণমানুষের কল্যাণে রাষ্ট্রের অভিভাবক খুঁজতে আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ভুল করেননি গত বেশ কয়েকদিনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নবনির্বাচিত মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এর সাথে বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের শুভেচ্ছা বিনিময়োর ছবি তার প্রমাণ।

প্রশাসনিক বা বিচারিক বিভাগের দায়িত্ব পালনকারী কর্তাব্যক্তিদের সাধারণত জনগণের সাথে সম্পৃক্ততা কম থাকে। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছাত্রজীবনে ছাত্ররাজনীতি, পরে যুব রাজনীতি, একসময় সাংবাদিকতায় জড়িত থাকা সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের কারণেই তার এই গণমুখী চরিত্র। গণমানুষের প্রতি তাঁর এই টান জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্রের জন্য ইতিবাচক।

নির্বাচন কমিশনে রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র দাখিলের আগ পর্যন্ত কেউ ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেননি নতুন মহামান্যের নাম। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও আলোচনার বাইরে ছিল তাঁর নাম। জানতেন শুধু একজন। তার নাম বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। প্রার্থী নির্বাচনে নিঃসন্দেহে চমক দেখিয়েছেন রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন ব্যাপক পরিচিত ছিলেন। সাবেক জেলা ও দায়রা জজ এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে অনেকে তাঁর নাম জানতেন। আর যারা নিয়মিত পত্রিকা দেখেন তাদের অনেকে মো. সাহাবুদ্দিনের কলাম পড়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ১২ ফেব্রুয়ারি যখন নির্বাচন কমিশনে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে আসেন, তখন টেলিভিশনের স্ক্রলে যাচ্ছিল- ‘রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন দুদকের সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন।’

একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে মেনে নিতে পারছিলাম না। বুকটা কেমন যেন চিন চিন করছিল। ভরসা রাখলাম বঙ্গবন্ধুকন্যার ওপর। কিছুক্ষণ পর ধোঁয়াশা কেটে গেলো। যখন উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর পরিচিতি তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এরপরই গণমাধ্যমে তার জীবনী চলে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে তৃণমূল রাজনীতিতে তার ভূমিকা, মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠন তার বিভিন্ন অবদানের কথা।

১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনা শহরের সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মো. সাহাবুদ্দিন। ১৯৭১ সালের ৯ এপ্রিল তিনি ভারতে যান এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের পদেও দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ১৯৭২-৭৫ সালে পাবনা জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক পদে থেকে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন মো. সাহাবুদ্দিন।

১৯৭১-৭৪ সালে তিনি পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৪-৭৫ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠিত হলে তিনি পাবনা জেলা কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মনোনীত হন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে শহীদ হলে সামরিক আইনবলে তাঁকে গ্রেপ্তার করে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। দীর্ঘদিন কারাভোগের পর মুক্ত হয়ে তিনি পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৮০ সালে আইন পেশায় যোগ দেন মো. সাহাবুদ্দিন। ১৯৮২ সালে বিশেষ বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে বিসিএস (বিচার) ক্যাডারের জন্য নির্বাচিত হয়ে যোগদান করেন মুন্সেফ (সহকারী জজ) পদে। একপর্যায়ে জেলা ও দায়রা জজ পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

বিচারিক কাজের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক হিসেবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাসহ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন মো. সাহাবুদ্দিন। ২০১১ সালের ১৪ মার্চ তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ২০১৬ সালে অবসরে যান মো. সাহাবুদ্দিন।

অবসর জীবনে এসে জড়িত হন গণমানুষের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য হিসেবে। পেশাগত জীবনে প্রথম দিকে সাংবাদিকতাও করেছেন তিনি। আশির দশকে কাজ করেছেন ওই সময়ের জনপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক বাংলার বাণীতে।

এ পর্যন্ত তাঁর উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন ও ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতাকর্মী দ্বারা সংঘটিত হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠন এবং মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অনুসন্ধান ও সুপারিশ প্রণয়নের জন্য গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান (সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির পদমর্যাদায়) দায়িত্ব পালন।

দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক উত্থাপিত কথিত পদ্মা সেতু-সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে অন্যতম ভূমিকা পালন করেন মো. সাহাবুদ্দিন এবং বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের মিথ্যা ও অন্তঃসারশূন্যতা প্রমাণে সমর্থ হন। তাঁর প্রেরিত তদন্ত প্রতিবেদন কানাডা কোর্ট কর্তৃক সমর্থিত হয়।

জাতীয় নির্বাচন সন্নিকটে। নির্বাচন সামনে রেখে সরকারবিরোধী আন্দোলন, দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবিলা আওয়ামী লীগ ও সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ওই নির্বাচনের সময় রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তি হিসেবে রাজনীতি, প্রশাসন ও আইনে অভিজ্ঞ ব্যক্তি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনকে বেছে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সত্যি চমক দেখিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর চমক মো. সাহাবুদ্দিন সাধারণ জনগণের সাথে গত কয়েক দিন মিশে গিয়ে হয়ে উঠেছেন গণমানুষের মহামান্য।

ক্ষমতার পালাবদল করতে এই গণমানুষের ভাগ্য নিয়ে কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে তা প্রতিরোধে অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করবেন বাংলাদেশের নবনির্বাচিত মহামান্য নতুন রাষ্ট্রপতি- এই প্রত্যাশায় তাঁর জন্য নিরন্তর শুভ কামনা।

লেখক: মানিক লাল ঘোষ – সভাপতি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ