1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

৫০ বছরে পাকিস্তানের সংকট এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন

সালাম সালেহ উদদীন : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ৬ এপ্রিল, ২০২২

আবারও পাকিস্তানে রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকট নতুন নয়। নানা কারণে পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গন অশান্ত হয়ে উঠেছে বারবার। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে হটাতে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি নাকচ করে দিয়েছেন। জাতীয় পরিষদ (পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ) ভেঙে দিয়ে একটি দাপ্তরিক নোটিশ জারি করা হয়েছে। ৯০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইমরান খানের সুপারিশে দেশটির পার্লামেন্ট ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। নিয়মানুযায়ী, প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যদিও নির্বাচন কমিশন বলেছে, বিদ্যমান অস্থির পরিস্থিতিতে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব নয়।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সহায়তায় ইমরান খান ক্ষমতায় এসেছিলেন বলে মনে করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি সেই সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। তার রাজনৈতিক বিরোধীরা সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে। তার জোট সরকারের বেশ কয়েকজন সহযোগী প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়ে বিরোধীদের দলে যোগ দেন। এ অবস্থায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন। অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে খানকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অপসারণের প্রচেষ্টা চালায় পাকিস্তানের বেশ কিছু বিরোধী দল। ২০২২ সালের ৮ মার্চ অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও ভুল পররাষ্ট্রনীতির অভিযোগে ইমরান খানের জোট সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার ঘোষণা দেয় পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলো। গত ২৮ মার্চ পাকিস্তানের পার্লামেন্টে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করে বিরোধী দলের নেতারা। গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেকটা ঝড় বয়ে গেছে, যার ধারাবাহিকতায় ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির (পিটিআই) বেশ কয়েকজন সদস্য দলত্যাগ করেন। ফলে বিরোধী শিবির বেশ ভারী হয়ে ওঠে। দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসবাদের অর্থনৈতিক প্রভাবের এই বিশৃঙ্খলার একটি ভূমিকা রয়েছে, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই খারাপ কর্মদক্ষতা, দায়িত্বহীনতা, অনুপযুক্ত এবং অপ্রত্যাশিত নীতি অনুসরণ এবং আধাআধি সংস্কারের ফলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অবাক ব্যাপার যে এ পর্যন্ত পাকিস্তানের কোনো প্রধানমন্ত্রীই তার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই রাজনৈতিক অস্থিরতা লেগেই আছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন- লিয়াকত আলী খান, স্যার খাজা নাজিমুদ্দিন, মোহাম্মদ আলী বগুড়া, চৌধুরী মোহাম্মদ আলি, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, ইব্রাহিম ইসমাইল চন্দ্রিগর, ফিরোজ খান নুন, নুরুল আমিন, জুলফিকার আলী ভুট্টো, মোহাম্মদ খান জুনেজো, বেনজির ভুট্টো, মিয়া মুহম্মদ নওয়াজ শরিফ, জাফরুল্লাহ খান জামালি, শওকত আজিজ, চৌধুরী সুজাত হুসাইন, ইউসুফ রাজা গিলানি, রাজা পারভেজ আশরাফ, শাহীদ খাকান আব্বাসী ও ইমরান খান।

রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা রক্ষার নামে ১৯৭১ সালে দেশের বাঙালি নাগরিকদের বিরুদ্ধে চরম হত্যা নির্যাতনের পথ নিয়েও বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছিল পাকিস্তানের তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী। স্বাধীন একটি রাষ্ট্র গঠনের মাত্র ২৪ বছরের মাথায় রক্তাক্ত এক যুদ্ধের ভেতর দিয়ে ভেঙে যায় পাকিস্তান। অথচ বাঙালিরা ছিল পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী। ১৯৪৭-এ দেশভাগের সময় বেঙ্গল ছিল পাকিস্তানের একমাত্র অঞ্চল যেখানে মুসলিম লীগ ক্ষমতায় ছিল। অথচ দেশ সৃষ্টির পর পূর্ব বাংলার মানুষ সমান প্রতিনিধিত্ব পায়নি। এর প্রধান কারণ ছিল পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতা চলে গিয়েছিল আমলা এবং সেনাবাহিনীর হাতে। সেখানে গোষ্ঠী স্বার্থ ছিল প্রধান বিবেচনা। পাকিস্তানের সংবিধান তৈরি করতে নয় বছর লেগেছে। ফলে বৈষম্য ঘোচানোর আইনি এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরিতেই বহু সময় চলে যায়। ১৯৭০-এ পাকিস্তানের দুই অংশ মিলে জনসংখ্যা ছিল ১৩ কোটির মতো। এখন ৩৮-৩৯ কোটি। বর্তমান জনসংখ্যার প্রায় ৮৮ ভাগই একাত্তর দেখেনি। পাকিস্তানে নাগরিকদের ৮৯ ভাগের বয়স ৫০-এর কম। বাংলাদেশে একই বয়সসীমার নিচে আছে লোকসংখ্যার ৮৬ ভাগ। অর্থাৎ উভয় দেশে ‘একাত্তর’-এর প্রত্যক্ষদর্শী আছে অতি অল্পজন। কিন্তু জাতীয়তাবাদ তুমুল এক আবেগের নাম, যা সব সময় তরুণ থাকে। ফলে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ককে স্বাভাবিক ও সাবলীল করতে একাত্তরের সব অমীমাংসিত বিষয়ের ফয়সালা করে এগোনো উচিত ছিল। কিন্তু পাকিস্তান তা করেনি। একাত্তরের অপরাধের জন্য তারা বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চায়নি।

স্বাধীনতার আগে পাকিস্তানিরা বলতো, স্বাধীন হলে তোমরা খাবে কী? পাট, চা ও চামড়া এই তিন পণ্য রপ্তানি করে কি তোমাদের ভাত-কাপড় হবে? আরও মারাত্মক কথা বলেছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার। পাকিস্তানিদের এ দোসর স্বাধীনতার পর বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ একটা তলাবিহীন ঝুড়ি।’ কিন্তু বাংলাদেশ যে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ নয়, উল্টো অনেক ক্ষেত্রেই পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তা দুদেশের রিজার্ভ পরিস্থিতি তুলনা করলেই প্রমাণ মেলে।

তা ছাড়া ধর্মীয় চরমপন্থা ও সন্ত্রাস মোকাবিলায় পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। সুখি দেশের তালিকায় এবং মানব উন্নয়ন সূচকেও বাংলাদেশ এগিয়ে। বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও ধর্মীয় চরমপন্থা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের কার্যক্রমের প্রশংসা করেছে ইউরোপিয়ান ফাউন্ডেশন ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ (ইএফএসএএস)। ব্যাপক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তৈরি মন্তব্য প্রতিবেদনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বীকৃত সংস্থাটি বলেছে, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রতিবেশী পাকিস্তান যেখানে চরমপন্থি ও সন্ত্রাসীদের উৎসাহ, আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে, সেখানে এদের দমনে বাংলাদেশের ভূমিকা যথেষ্ট ইতিবাচক। বাংলাদেশ অ্যান্ড পাকিস্তান: অ্যাকটিং অ্যাগেইনস্ট এক্সট্রেমিজম ভারসাস মেকিং এ শো অব অ্যাকটিং অ্যাগেইনস্ট এক্সট্রেমিজম’ শিরোনামে এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের কট্টরপন্থী ইসলামি গোষ্ঠী হেফাজতে ইসলাম ও পাকিস্তানের কট্টরপন্থী তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তানের (টিএলপি) কার্যক্রম তুলে ধরে ইএফএসএএস বলেছে, এ সব গোষ্ঠী এই দুই দেশে সরকারের উদ্বেগের কারণ সৃষ্টি করেছে। নিজ নিজ দেশের সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সহিংস ও প্রাণঘাতী বিক্ষোভে জড়িয়েছে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, জঙ্গিবাদ বা উগ্রবাদ দমনের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সরকারের রয়েছে জিরো টলারেন্স। তার সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ ব্যাপারে তৎপর ও মনোযোগী। যার কারণে সফলতা এসেছে।

অথচ পাকিস্তানে টিএলপি সে দেশ থেকে ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়ে পার্লামেন্টে বিতর্ক করতে তাদের সরকারকে বাধ্য করেছে। সামাজিক অস্থিতিশীলতা এবং রুগ্ন অর্থনীতির পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের প্রশাসন নাজুক অবস্থায় পড়েছে। যা কাজে লাগিয়েছে বিরোধীরা। ইমরান খানের ভাগ্য এখন ঝুলে আছে।

দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রতিবেশী পাকিস্তান যেখানে চরমপন্থি ও সন্ত্রাসীদের উৎসাহ, আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে, সেখানে এদের দমনে বাংলাদেশের ভূমিকা যথেষ্ট ইতিবাচক। যেখানে শেখ হাসিনার সরকার কট্টরপন্থী ইসলামি গোষ্ঠী হেফাজতকে মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে, সেখানে পাকিস্তান এ ব্যাপারে নাটকীয় সংকটে পড়ে ধারাবাহিকতা রাখতে পারেনি এবং টিএলপির মতো গোষ্ঠীকে মোকাবিলায় দুর্বল বিবেচনা ও দুর্বল পদক্ষেপ বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছে।

কেবল উগ্রপন্থা দমনের ক্ষেত্রেই নয়, পাকিস্তান অর্থনীতিসহ সব ধরনের সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। পাকিস্তানের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি রিজার্ভ এখন বাংলাদেশের। শুধু রিজার্ভের নিরিখেই যদি বিচার করা হয়, তাহলে বাংলাদেশের অগ্রগতি অসামান্য। বাংলাদেশে রিজার্ভে ভর করে টাকার মান এখন পাকিস্তানি রুপির দ্বিগুণ। মাথাপিছু আয়েও পাকিস্তানের দ্বিগুণ এখন বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ এখন অতিদ্রুত বিকাশমান একটি দেশ হিসেবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ। ১৯৭৫ সাল থেকে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে থাকা বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে সব শর্ত পূরণ করে ২০১৮ সালে। জাতিসংঘের নিয়মানুযায়ী, কোন দেশ পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায়। সিডিপি তিনটি সূচকের ভিত্তিতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করে। তিনটি সূচকেই বাংলাদেশ শর্ত পূরণ করে অনেক এগিয়ে গেছে। আর পাকিস্তানের কথা বলাই বাহুল্য।

বিভিন্ন দিক দিয়েই বাংলাদেশের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। অথচ এই বাংলাদেশের অগ্রগতির লাগাম টেনে ধরে রেখেছিল পশ্চিম পাকিস্তান। বিভিন্নভাবে তারা পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের মানুষকে শোষণ করেছে। ৫০ বছর পর সেই পাকিস্তান কেমন আছে এটা বিশ্ববাসী জানে? অনেকেই ভেবেছিলেন বাংলাদেশ টিকতে পারবে না। সেই বাংলাদেশ পারমাণবিক বোমা ছাড়া আর্থ-সামাজিক সব সূচকে আজ পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলেছে। আর পাকিস্তানে উন্নয়ন তো দূরের কথা রাজনৈতিক সংকট পিছু ছাড়ছে না। যদি আবার নির্বাচন হয়, তাতেও এ সংকট কাটবে বলে মনে হয় না। এটা প্রকৃতির প্রতিশোধ বলব না, তবে এটা বলব যে, বাংলাদেশের কাছ পাকিস্তানের অনেক কিছু শেখার আছে।

লেখক : সালাম সালেহ উদদীন, কবি কথাসাহিত্যিক কলাম লেখক প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক। 


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ