1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

স্মার্ট বাংলাদেশ: ই-কমার্সের প্রচার-প্রসার ও ভবিষ্যৎ

ড. এম মেসবাহউদ্দিন সরকার : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৩

ডিজিটাল যুগের আবিষ্কার ই-কমার্স বা অনলাইন ব্যবসার প্রসার মানুষের জন্য এক আশীর্বাদ। মানুষ এখন ঘরে বসেই অনলাইনে অর্ডার করছে পছন্দের পণ্যের। কোনো দোকান কিংবা আউটলেট ছাড়াই এই ব্যবসা এখন জমজমাট। কী নেই এখানে? খাদ্যদ্রব্য, প্রসাধনী, ওষুধ, পোশাক, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, অলংকার, মাছ-মাংস-সবজিসহ সব কিছুই মিলছে এখানে। মূল্য পরিশোধও করছে অনলাইনে, ঝামেলা নেই নকল, ছেঁড়া ও অচল টাকার। পণ্য পাওয়ার পর টাকা পরিশোধ কিংবা টাকা পরিশোধের পর পণ্য পাওয়া দুই ব্যবস্থাই আছে। এই বাণিজ্যের নাম ই-কমার্স, যা দেশে-বিদেশে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ২০০৯ সাল থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অভিযাত্রায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুবিধা শহর থেকে গ্রামেও বিস্তৃত হওয়ায় ই-কমার্সের সম্প্রসারণ হতে থাকে। একই বছর বাংলাদেশ ব্যাংক অনলাইন পেমেন্ট অনুমোদন করে এবং ২০১৩ সালে অনলাইন পেমেন্টের জন্য ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের অনুমোদন দেয়। এর এক বছর আগে ২০১২ সালে দেশের অন্যতম ই-কমার্স সাইট রকমারিডটকম যাত্রা শুরু করে। শুরুর দিকে বই বিক্রি করলেও বর্তমানে বইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন অ্যাকসেসরিজ ও খাদ্য সম্পূরক পণ্য বিক্রি করছে সাইটটি। তবে ২০১৩ সালে বাংলাদেশে প্রথম অনলাইনভিত্তিক গ্রোসারি ই-কমার্স সাইট চালডালডটকম যাত্রা করে আজ পর্যন্ত গ্রাহকদের আস্থা অটুট রেখে ই-কমার্স ব্যবসায় দেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসেবে সক্রিয় আছে।

সবচেয়ে বড় অনলাইন শপিং মল আজকেরডিলডটকম তাদের কার্যক্রম শুরু করে ২০১৩ সালে, যা বাংলা ভাষায় দেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ই-কমার্স ওয়েবসাইট। একই সময়ে যাত্রা করা এখনইডটকমও আরেকটি জনপ্রিয় বাংলা ভাষায় ই-কমার্স ওয়েবসাইট ও ডিল সাইট। ইন্টারনেট সেবা, অভিজাত রেস্তোরাঁ, হোটেল, পরিবহন, বিউটি পার্লার, ফ্যাশন হাউস, থিম পার্ক, জিমনেসিয়াম, আসবাবপত্রের দোকান, খেলাধুলা এবং বিনোদনকেন্দ্র ছাড়াও জনপ্রিয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পণ্য ও সেবা আকর্ষণীয় ছাড়ে ক্রেতার নাগালে পৌঁছে দিচ্ছে এখনইডটকম। এদিকে ২০১৫ সালে বাংলাদেশে যখন অনলাইন বাণিজ্যের মোক্ষম সময় তখন দারাজডটকমডটবিডি তাদের কার্যক্রম শুরু করে। এটি ইলেকট্রনিকস, হোম অ্যাপ্লায়েন্স এবং জামাকাপড়ের জন্য খুবই বিশ্বস্ত ই-কমার্স সাইট। প্রতিষ্ঠানটি এখন বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারে তাদের ই-কমার্স স্টোর বিস্তৃত করেছে। তবে এটি জার্মান বেইজড কম্পানি রকেট ইন্টারনেটের একটি শপিং সাইট। ডিজিটাল বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী মীনাবাজার তাদের ব্যবসায় নতুন করে মীনা ক্লিক নামে ই-কমার্স সাইট চালু করে এবং কভিড-১৯ মহামারিতে ঘরবন্দি ক্রেতাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বাসায় ডেলিভারিতে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। স্বপ্নডটকমও লকডাউনে কাস্টমারদের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে নিজস্ব ই-কমার্স সাইট চালু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী এবং গ্রোসারি ফ্রিতে হোম ডেলিভারি দিয়ে ভোক্তার আস্থা অর্জন করেছে, চলছে এখনো দাপটে। আরো আছে প্রিয়শপডটকম, যেমনতেমনডটকম, বিডিহাটডটকম ইত্যাদি।

বাংলাদেশের ই-কমার্স সেক্টরে সবচেয়ে সাড়া-জাগানো প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি। এরা অসম্ভবকে সম্ভব করে সামর্থ্যবান ক্রেতা এবং সামর্থ্যহীন ক্রেতাসাধারণকে একই কাতারে এনে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। ক্যাশব্যাক এবং গিফট কার্ডের অফার দিয়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল। একইভাবে জড়িয়ে পড়েছিল গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণায়। ই-কমার্স বা ডিজিটাল বাংলাদেশে ডিজিটাল প্রতারণার জন্ম দেয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি ২০১৮ সালে। সস্তায় মুঠোফোন আর মোটরসাইকেল কেনার লোভে এর গ্রাহক হয় লাখ লাখ মানুষ। তার এই ব্যবসার ধরনে আকৃষ্ট হয়ে তৈরি হয় ইভ্যালির মতো আরো কিছু প্রতিষ্ঠান। সঙ্গে যুক্ত হয় কিছু অসাধু লোক। সাধারণ মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে নেমে পড়ে মাঠে। ইভ্যালি, কিউকম, ধামাকা শপিং, আলেশা মার্ট, ই-অরেঞ্জ, সিরাজগঞ্জ শপ, আলাদিনের প্রদীপ, বুমবুম, আদিয়ান মার্ট, নিডডটকম ইত্যাদি কম্পানির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার পরও পণ্য বুঝিয়ে না দেওয়ার বিস্তর অভিযোগ উঠে আসে। আজকের দিনে ই-কমার্সের ব্যাপারে গ্রাহকদের আস্থা নষ্ট করার জন্য এই কম্পানিগুলোই বেশি দায়ী। শুধু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকমের গ্রাহকদের ৫৬ কোটি ৮৫ লাখ ৬৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারণা করে। অন্য কম্পানির গ্রাহকরা তাদের অর্থ আদৌ ফেরত পাবে কি না এ নিয়ে রয়েছে গভীর সন্দেহ, চলছে মামলা-মোকাদ্দমা।

তবে বিপুল সম্ভাবনাময় ই-কমার্সের মাধ্যমে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, দূর হয়েছে বেকারত্ব। ই-কমার্স সাইট পরিচালনায় বিজনেস এক্সিকিউটিভ, কাস্টমার কেয়ার, ওয়্যারহাউস ব্যবস্থাপনা, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, কলসেন্টার, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্ট, কনটেন্ট ক্রিয়েটর, কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজার, মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ, ডেলিভারি এক্সিকিউটিভ ইত্যাদি খাতে অসংখ্য শিক্ষিত বেকার কাজ করছেন, পরিচয় দিচ্ছেন স্মার্ট বিজনেসম্যান হিসেবে। সবচেয়ে আশার বিষয় হচ্ছে, এ ধরনের স্মার্ট কাজের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন লাখ লাখ শিক্ষিত নারীও। দেশের বহুল পরিচিত নারী ই-কমার্স প্ল্যাটফরম ‘উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম’ বা উই এখন দেশের ৬৪ জেলার ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের নির্ভরযোগ্য ই-কমার্স প্ল্যাটফরম। গুটিকয়েক তরুণী উদ্যোক্তার প্রচেষ্টায় ২০১৭ সালে যাত্রা করে বর্তমানে প্ল্যাটফরমটিতে দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করছেন ছয় লাখ ৪১ হাজারেরও বেশি উদ্যোক্তা। বর্তমানে বাংলাদেশে আনুমানিক দুই হাজার ৫০০ ই-কমার্স সাইট রয়েছে। ফেসবুকভিত্তিক বিভিন্ন ব্যাবসায়িক উদ্যোগ রয়েছে দেড় লাখেরও বেশি। এসব প্ল্যাটফরমে প্রতিদিন লক্ষাধিক পণ্যের অর্ডার ও ডেলিভারি হচ্ছে। সে হিসাবে ই-কমার্স খাতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি বর্তমানে প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং খাতটির বর্তমান আকার আট হাজার কোটি টাকার মতো। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ই-কমার্স সাইটের মাধ্যমে ১০ বিলিয়ন টাকা মূল্যের লেনদেন হয়, যা বেড়ে ২০২১ সালে দাঁড়ায় প্রায় ৫৬ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। গবেষণা সংস্থা লাইটক্যাসল পার্টনার্সের পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০২৩ সালে বাংলাদেশের ই-কমার্সের বাজার দাঁড়াবে ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকার মতো। ২০২৬ সালের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকায়, জানিয়েছেন ডাবলিনভিত্তিক বাণিজ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড মার্কেটস ডটকম। সব ধরনের প্রতারণা ও জটিলতা থেকে রেহাই পাক এই ডিজিটাল ব্যবসা, লাখ লাখ তরুণ-তরুণীর বেঁচে থাকার স্মার্ট হাতিয়ার হোক ই-কমার্স প্ল্যাটফরম।

 লেখক: ড. এম মেসবাহউদ্দিন সরকার – অধ্যাপক, আইআইটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ