1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

চাই সাংস্কৃতিক রোডম্যাপ

লীনা পারভীন : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৩

সামনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে সব দল তাদের নির্বাচনি ইশতেহার দেবে, রোডম্যাপ দেবে। আর তার প্রায় সবটাই হয় দলীয় ঘোষণা। বর্তমান সরকারও সামনের নির্বাচনের একটি বড় স্টেকহোল্ডার এবং আমরা ‘বাংলাদেশের দালাল’রা এই সরকারের কাছেই সব চাওয়াকে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের রোডম্যাপ আমরা সবাই পেয়েছি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়টি এখন আন্তর্জাতিকভাবেই স্বীকৃত বিষয় এবং আমরা নাগরিকেরা এই বিষয়টিতে অত্যন্ত আনন্দিতও বটে। কিন্তু যে বিষয়টি আমাদেরকে এত উন্নয়নের মাঝেও চিন্তিত করে বা উদ্বেলিত করছে সেটি হচ্ছে সাংস্কৃতিক অবনমনের বিষয়টি।

সারাদেশে ‘ধর্মীয় সংস্কৃতি’র উন্নয়নে সরকার কাজ করেছে এবং প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু একটা দেশ কেবল একটি সম্প্রদায়ের নয়। রাষ্ট্র কেবল একটি গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের উন্নয়নে কাজ করবে সেটি সাংবিধানিক স্বীকৃত উপায় নয়।

সংবিধানে বলা আছে– রাষ্ট্র তার প্রতিটি নাগরিকের উন্নয়নের দায়িত্ব সমানভাবে নিতে বাধ্য। আর এই উন্নয়ন মানেই কেবল অর্থের উন্নয়ন নয়। মগজে ও মননের উন্নয়নও বটে। প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ এলেই একটি বিশেষ গোষ্ঠী ধর্মের দোহাই দিয়ে কিছু নতুন নতুন ফতোয়া নিয়ে হাজির হয়। উগ্রপন্থার এই লোকগুলো প্রমাণ করতে চায় তারা যা বলছে সেটাই ধর্ম আর আমাদের পূর্বপুরুষরা যা করে গেছে সেগুলো সবই অধর্ম।

এখন এই ধর্ম বা অধর্মের বিষয়টির কোনও সমাধান মানুষের হাতে নেই কারণ ধর্মের বিষয়ে কাউকেই শুদ্ধাচার বলার উপায় নেই। আর সেজন্যই ধর্মীয় ব্যাখ্যা একেকজনের কাছে একেকরকম হয়ে যায়। ধর্ম সম্প্রদায় ভিত্তিক হয় আর একটি জাতি মানে অনেকগুলো সম্প্রদায়ের লোকের সম্মিলন। তাইতো রাষ্ট্রের কোনও ধর্ম হয় না।

পহেলা বৈশাখ আমাদের বাঙালি জাতীয় ঐতিহ্য। পহেলা বৈশাখের জন্মের পেছনে রয়েছে অনেক বড় একটি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা। সম্রাট আকবর একজন মুসলিম নেতা ছিলেন। তখন যেহেতু রাষ্ট্র ধারণা সেভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল না তাই রাজ্যসভার মাধ্যমেই নাগরিকদের সকল বিষয়কে সমাধান করা হতো। অর্থনীতি ছিল ১০০ ভাগ কৃষিভিত্তিক। কৃষকেরাই ছিল রাজ্যের কোষাগারের আয়ের উৎস। তাই সমস্ত পরিকল্পনা কৃষিকেন্দ্রিক ছিল।

পহেলা বৈশাখ হচ্ছে কৃষকদের অর্থবছরের হিসাব। এখন যেমন একটি বাজেট বছর থাকে, অর্থনৈতিক বছর থাকে ঠিক তেমনি কৃষকদের অর্থবছরের হিসাবকে নির্ধারণের সুবিধার্থে ১লা বৈশাখের সৃষ্টি। বুঝাই যাচ্ছে একজন মুসলমান রাজার মাথায় তখন ধর্মের কোনও হিসাবই আসেনি। পুরোটাই ছিল অর্থনীতির হিসাব। রাজ্য চলবে তার নীতিতে আর ধর্ম চলবে ব্যক্তির নীতিতে। এটাই আমাদের ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যকে যারা বাধাগ্রস্থ করতে চায় তারা কেউ ইতিহাস বা ঐতিহ্যের বিষয়ে শিক্ষিত নয়। তারা অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ দৃষ্টির মানুষ।

পহেলা বৈশাখ মানে পুরনো হিসেবের খাতাকে বন্ধ করে নতুন হিসেবের উন্মোচন। আর এই সময়টাকেই আমরা আনন্দপ্রিয় জাতি, উৎসব প্রিয় জাতি খাওয়া দাওয়া, মেলা পার্বনের মাধ্যমে উদযাপন করছি। কৃষকদের উৎসবকে আমরা সর্বজনীন করেছি।

‘মঙ্গল’ শব্দে যারা হিন্দুয়ানী খুঁজে পায় তারা হয়তো জানে না যে বাংলা ভাষার বেশিরভাগ শব্দই এসেছে সংস্কৃত শব্দ থেকে। বাংলার নিজস্ব শব্দ বলতে এগুলোই। এর বাইরেও ঊর্দু, আরবি, ফার্সি থেকেও অনেক শব্দ প্রচলিত হয়েছে। আছে ইংরেজির অবদানও। এখন কি তবে ধর্মের দোহাই দিয়ে তারা এসব ভাষাকেও উৎখাত করতে চায়? সকল ধর্মের মানুষই ভালো অর্থে ‘মঙ্গল’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকে।

অর্থাৎ, এগুলো হচ্ছে জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানোর কৌশল। এই একটি দিন আমরা সবাই সব বিভেদ ভুলে কেবল বাঙালি হয়ে যাই। এই দিনের যত আয়োজন সবকিছুই আমাদের মাটির উৎস থেকে পাওয়া। কোনও কিছুই কারও নতুন সৃষ্টি নয়। ফসলের ক্ষেতে ‘কাকতাড়ুয়া’ ব্যবহার করা হয় ফসলকে রক্ষাকবচ হিসেবে। এটি প্রকৃতি থেকে পাওয়া শিক্ষা। এখানে যদি ধর্মের ব্যাখ্যা কেউ খুঁজে তাহলে সেটিকেও বাদ দিতে হবে। ‘ইন্ডিজিনিয়াস নলেজ’ বা প্রকৃতি হতে শিক্ষা বা উৎস থেকে পাওয়া শিক্ষা বলে একটা বিষয় আছে যার অবদান হচ্ছে ভেষজ শিক্ষা যার মাধ্যমে চিকিৎসাও করা হয়। আমরা কেটে গেলে দুর্বা ঘাষের রস দেই এটা কোনও চিকিৎসা বিজ্ঞানের আবিষ্কার না, এটা মাটির শিক্ষা।

বৈশাখও ঠিক তেমনি। মঙ্গল শোভাযাত্রায় ব্যবহৃত বিষয়গুলোও আমাদের সেই মাটির শিক্ষা। তাই এই বিষয়ে যারাই কথা বলতে তাদেরকেই শক্ত হাতে রুখে দিতে হবে। আর এই রুখে দেওয়ার হাতিয়ার হচ্ছে সারাদেশব্যাপী বাঙালি শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে মগজে গেঁথে দেওয়া। অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিফলে যাবে যদি মানুষ জ্ঞানে ও চর্চায় উৎসকে ভুলে যায়। পরজীবী হয়ে এগিয়ে যাওয়া যায় না। আমাদের সবকিছু আছে। সেগুলোকে আবারও বাঁচিয়ে তুলতে হবে। এই বাঁচিয়ে তোলার পরিকল্পনা চাই আগামী নির্বাচনের আগেই। সামগ্রিক সাংস্কৃতিক উন্নয়নের ‘রোডম্যাপ’ চাই আমরা। আগামীতে যারাই ক্ষমতায় আসবে তাদেরকেই এই ঘোষণা আগে দিতে হবে যে তারা আমাদের বাঙালিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেবে না। বাংলা ও বাঙালিত্বকে বাঁচিয়ে রাখতে কী কী করবে সেই প্রতিজ্ঞা চাই।

ভুলে গেলে চলবে না পকেটে কেবল অর্থ গুঁজে দিলেই শেষ রক্ষা হবে না যদি না সেই টাকা খরচের প্রকৃত শিক্ষাটা না দেওয়া হয়।

লেখক : লীনা পারভীন – কলামিস্ট


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ