1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনা নিয়ে কিছু কথা 

গোলাম সারোয়ার : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ১৪ মে, ২০২৩

বিশ্ব এখন একটি টালমাটাল সময় অতিক্রম করছে। যেহেতু পৃথিবীতে রাজনীতি এবং অর্থনীতি নিবিড় সম্পর্কযুক্ত, তাই ছোট-বড় প্রতিটি অর্থনীতি এখন একটি অস্থিরতার ভিতর দিয়ে যাচ্ছে। গত দুই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মতো অর্থনীতির বড় তিনটি ব্যাংকের পতন ঘটেছে। ইউরোপের অর্থনীতি ক্রমাগত মুদ্রাস্ফীতির চাপে আছে। বৈশ্বিক অর্থনীতিবিদগণ ধারণা করছে, সামনের দিকে আর্থিকখাতের অশান্তি আরও প্রলম্বিত হতে পারে। এই অবস্থা যেখানে বিশ্বের বড় অর্থনীতিগুলোর সেখানে ছোট এবং মাঝারি অর্থনীতিগুলো আরো বেশি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবে, সেটাই স্বাভাবিক।

বাংলাদেশ যেহেতু বিশ্বের বাইরের কোনো দেশ নয়, তাই আমাদের অর্থনীতিও চ্যালেঞ্জের বাইরে নেই। বাংলাদেশের রপ্তানির প্রধান পণ্য তৈরি পোশাকের বেশির ভাগ গন্তব্য হলো ইউরোপ এবং আমেরিকা। তাই তাদের বাজারে মানুষের ক্রয়-ক্ষমতা কমে গেলে আমাদের রপ্তানি কমে যাবে, এটি অনেকটা অনিবার্য। আবার আমাদের যেহেতু জ্বালানিসহ বহু পণ্য আমদানি করতে হয়, তাই আমদানি মূল্য বাড়লে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপ পড়বে এটিও আরেক বাস্তবতা। এই বাস্তবতা মাথায় নিয়ে আমাদের অর্থনীতির ঝুঁকিগুলো আমাদের চিহ্নিত করতে হবে। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার পর সেগুলো কীভাবে সহনীয় পর্যায়ে রেখে অর্থনীতিকে গতিশীল রাখা যায় সেটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।

করোনার অভিঘাত শেষ হতে না হতে বিশ্ব পুড়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাতে। পৃথিবীর ছোট দেশগুলো এই যুদ্ধের সরাসরি অংশীজন না হলেও অর্থনৈতিকভাবে কেউ এই যুদ্ধের বাইরে নেই। যুদ্ধরত বড় অর্থনীতিগুলোর নিষেধাজ্ঞা পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে ছোট-বড় প্রায় সব অর্থনীতি কমবেশি ধুঁকছে। এর ভেতরেও আশার কথা হলো আমাদের অর্থনীতি একেবারে ধমকে যায়নি।

এখন কথা হলো আমাদের অর্থনীতি ভালো আছে এটি কি আমরা নিজেরা নিজেরা বললে হবে? হবে না। একটি দেশের মানুষ সার্বিকভাবে কে কীভাবে আছে তা ব্যক্তি হিসেবে একজন জানে না। ব্যক্তি জানে তার নিজের খবর। বড়জোর জানে তার প্রতিবেশী কিছু মানুষের খবর। কিন্তু সার্বিকভাবে একটি দেশের বেশির ভাগ মানুষ ভালো আছে নাকি ভালো নেই বলতে পারে গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো, যারা এগুলো নিয়ে নিরন্তর কাজ করে যায়। দেশীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো বললেও কিছু মানুষ আবার তা স্বীকার করে, কিছু মানুষ করে না। এর কারণ হলো, মানুষের বিশ্বাসের পক্ষপাত। এমন মানুষও আছে যারা সুখে থেকেও অনেকসময় রাজনৈতিক মতবাদের পক্ষপাতের কারণে বলে বেড়ান দেশের মানুষ ভালো নেই। আবার এমন অনেক মানুষও আছে যারা তীব্র রাজনৈতিক পক্ষপাতের কারণে নিজে কষ্ট করেও নানার কারণ দেখিয়ে বলে বেড়ান, দেশের অর্থনীতি অন্য অনেক দেশের চেয়ে ভালো আছে। কিংবা তারা তাদের দুর্দশার জন্যে বাইরের অন্য অনেক কারণকে দোষারোপ করে থাকে।

এসব দিক বিবেচনা করে আমাদের সার্টিফিকেট নিতে হয় আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে। সেক্ষেত্রেও পক্ষপাতের ঝুঁকি কিংবা অভিযোগ থাকে। তবুও বৈশ্বিক কিছু প্রতিষ্ঠানের উপর আমাদের আস্থা রাখতে হয়। এরকম একটি অধিক বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠান হলো আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল। বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর মূল্যায়ন কী? তারা বলেছে, বিদ্যমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখেও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে যারা দ্রুত হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে, বাংলাদেশ তাদের মধ্যে অন্যতম। নিঃসন্দেহে একটি একটি ভালো খবর। সে সাথে এটি বিশ্বাসযোগ্যও বটে। বাস্তবিক অর্থে আইএমএফের মূল্যায়ন অনেক বেশি সঠিক, অনেক বেশি সম্পৃক্ত। এটি সত্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগের অবস্থা, কিংবা করোনা মহামারীর আগের মতো আমাদের অর্থনীতিও স্বস্তিতে নেই। কিন্তু পৃথিবীর বহু দেশের বিরূপ অবস্থা বিবেচনাতে নিলে আমাদের অবস্থা একেবারে খারাপ নয়। এরই মাঝে এশিয়ার দুটো অর্থনীতির বিপর্যয় হলো। তার একটি হলো শ্রীলঙ্কা এবং অন্যটি পাকিস্তান। ভারতের মতো একটি জায়ান্ট অর্থনীতি চাপে পড়েছে। সেখানে ব্যাপক উন্নয়নের উচ্চাকাক্সক্ষা নিয়ে বৃহৎ বৃহৎ প্রকল্পে বিনিয়োগের মাঝপথে বৈশ্বিক দুটো বড় ইমার্জেন্সি মোকাবেলা করেও গতি ঠিক রাখা নিশ্চয় আমাদের দূরদর্শীতার পরিচয় বহন করে। সত্যিকার অর্থে আমাদের অবস্থা আরো খারাপ হতে পারতো যদি সরকার দূরদর্শীতার পরিচয় না দিতো, যদি ডলার সংকটের একেবারে শুরুর দিকে অর্থনৈতিকভাবে সরকার রেসপন্স না করতো। যদি আমদানী নিয়ন্ত্রণ না করতো এবং যদি অর্থনৈতিক পণ্যগুলোর গুরুত্ব আলাদা না করতো।

বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের এই সময়েও প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা নিশ্চয় বিচক্ষণ অর্থনৈতিক নেতৃত্বের পরিচয় বহন করে। সে সাথে আমাদের সামনের দিকের দিকনির্দেশনাও ঠিক করতে হবে। এটি ঠিক যে, সেটা ঠিক করবে আমাদের দেশীয় নেতৃত্ব। সেটা বিশ্লেষণ করবে আমাদের রাষ্ট্রীয় থিঙ্ক-ট্যাংকগুলো। সেটা করতে গিয়ে আমাদের দেশীয় প্রাইভেট গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো কী বলছে সেদিকে নজর রাখতে হবে, সাথে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিক্ষেপগুলোও আমাদের আমলে নিয়ে গবেষণা করতে হবে।

এ ব্যাপারে খোদ আইএমএফ কী বলেছে আমরা একটু নজর দিই। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বাংলাদেশের সামনে তিনটি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে। তাদের মতে, বাংলাদেশের সামনে থাকা তিনটি চ্যালেঞ্জ হলোÑধারাবাহিক উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈশ্বিক আর্থিক খাতের অস্থিরতা বৃদ্ধি পাওয়া ও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধির শ্লথগতি। আইএমএফ মনে করে, এসব কারণে দেশের প্রবৃদ্ধি, বিদেশি মুদ্রার মজুত ও স্থানীয় মুদ্রা টাকার ওপর চাপ অব্যাহত থাকবে।

আমরা আইএমএফের চিহ্নিত করা চ্যালেঞ্জগুলো খতিয়ে দেখি। উচ্চ মূল্যস্ফীতির ব্যাপারটি এখন অনুন্নত, উন্নয়নশীল কিংবা উন্নতÑ প্রায় প্রতিটি অর্থনীতির অনিবার্য বাস্তবতা। এর কারণ হলো, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বড় অর্থনীতিগুলোর নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে সাপ্লাই-চেইন ভেঙে পড়া। অর্থনীতিগুলো এখন তাদের সামর্থ্য অনুসারে উৎপাদন সাইকেলে নেই। সে হিসেব মাথায় নিলে চ্যালেঞ্জটি ঠিক আছে।

আমাদের inflation rate ৯.৩৩ শতাংশে পৌঁছে গেছে। তবে আমাদের প্রতিবেশী ভারতের মার্চে Inflation ছিলো ৫.৬৬ শতাংশ এবং পাকিস্তানের গত মাসের ডাটা মতে ৩৬.৪ শতাংশ। সে হিসেবে আমাদের অবস্থা এখনো সহনীয় পর্যায়ে আছে, যা আমাদের আরো ভালো করতে হবে। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় যে খাতগুলোতে আমাদের চ্যালেঞ্জ আসতে পারে তা হলো বৈশ্বিক আর্থিক খাতের অস্থিরতা বৃদ্ধি এবং গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধির শ্লথগতি। এ দুটি মূলত আমাদের হাতে নেই। যেহেতু এগুলো আমাদের হাতে নেই সেহেতু এসব কারণে যেসব চ্যালেঞ্জ উদ্ভুত হবে তা প্রশমনের জন্য আমাদেরকে নতুন নতুন বাজারের সাথে কানেন্টিভিটি বাড়াতে হবে। আমদানী রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। অপ্রয়োজনীয় এবং কম প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে হবে।

আইএমএফের চিহ্নিত খাতগুলো ছাড়াও আমাদের আরো কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। যেমন, আমাদের ব্যাংক ব্যবস্থায় বিপুল পরিমাণে খেলাপি এবং অবলোপনকৃত ঋণ আছে। এগুলো কন্ট্রোল করতে হবে। ঋণ খেলাপিদের সামাজিকভাবে বয়কটের সময় এসেছে। ঋণ খেলাপিরা ঋণ নিয়ে তা ফেরত না দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় তা পাচার করে দিচ্ছে। অর্থপাচার একটি বড় সমস্যা। পাচার এবং ঋণ খেলাপি অর্থনীতির ব্ল্যাকহোল। এগুলো প্রতিরোধ করা না গেলে সব অর্জন বৃথা যাবে।

আবার ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাওয়া, ডলার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার বাইরে চলে যাওয়ার প্রবণতা, ডলারের দর জোর করে ধরে রাখা, জোর করে ধরে না রাখলে ডলারের দাম হু হু করে বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি এবং ডলার সংকটে মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যাওয়া ঝুঁকি, জোর করে দর ধরে রাখাতে ডলার অপ্রাতিষ্ঠানিক চ্যানেলে চলে যাওয়ার ঝুঁকি ইত্যাদি আরো নানাবিধ ঝুঁকি আমাদের সামনে আছে। এসব ঝুঁকি মোকাবেলায় আমাদের একটি সমন্বিত শক্তিশীলী কমিটি গঠন করতে হবে। তাহলেই সামনের দিনগুলোর ঝুঁকি মোকাবেলা করে আমাদের অর্থনীতি কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছে যাবে।

সম্ভাবনার কথা হলো, বৈশ্বিক এতো চ্যালেঞ্জের পরেও আমাদের অর্থনীতির প্রতিটি ইন্ডিকেটর ঠিকমতো পারফর্ম করছে। আমরা জানি অর্থনীতির মন্দা এবং চাঙ্গার সাইকেল থাকে। অসময়ে যেসব পশ্চিমারা এখন জামা কিনছেনা তারা সময় অনুকূল হলে দ্বিগুণ তিনগুণ কিনবে। মন্দার পর চাঙ্গার সময়ে সে অর্থনীতিগুলোই সাধারণত ভালো করে যেগুলো মন্দার সময়েও সব ইন্ডিকেটরে পারফর্ম করে। কারণ তাদের উৎপাদনের সকল স্তরের উপায়, রসদ এবং অবকাঠামোগুলো টিকে যায়। সে হিসেবে আমাদের এতো চ্যালেঞ্জের এই সময়েও আমরা ভবিষ্যৎ অবারিত সম্ভাবনা দেখতে পাই।

লেখক : গোলাম সারোয়ার – কলামিস্ট


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ