1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে ওএমএস-টিসিবির পণ্য, ডিলার গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০২৩

সরকারি গুদাম থেকে ডিলারদের মাধ্যমে খাদ্যপণ্য চলে যাচ্ছে কালোবাজারে। সরকারের ভর্তুকি দেওয়া যেসব পণ্য সরাসরি ভোক্তার কাছে বিক্রি করার কথা, সেসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে দোকানদারদের কাছে। সরকারি গুদাম থেকে নিজেদের গুদামে নিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী খাদ্যপণ্যের সরকারি প্যাকেট পরিবর্তন করে। তারপর নতুন মোড়কে বিক্রি করে দোকানদারদের কাছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে অন্তত ২০ থেকে ২২টি চক্র এই ব্যবসায় সক্রিয়। ঢাকার কেরানীগঞ্জ, নন্দীপাড়া, দয়াগঞ্জ, পোস্তগোলা, কামরাঙ্গীরচর, শ্যামপুর এলাকায় বিভিন্ন সাইনবোর্ডের আড়ালে চক্রগুলোর গোডাউন রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গুদামে দায়িত্বরত অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করে চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরেই স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সরকারি ভর্তুকির খাদপণ্য নিয়ে প্রতারণা করে আসছে। মজুত করছে সাধারণ মানুষের জন্য বরাদ্দ করা খাবার।

বুধবার (২১ জুন) রাজধানীর নন্দীপাড়ায় একটি বাসার নিচতলায় সরকারি খাদ্যপণ্যের গোডাউনের সন্ধান পেয়ে সেখানে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মতিঝিল বিভাগের একটি দল। সেখান থেকে এক হাজার বস্তা সরকারি গুদামের প্যাকেটজাত চাল ও আটা উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় আটক করা হয়েছে আসাদুজ্জামান ওরফে আসাদ নামে এক ব্যবসায়ীকে।

গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, আটক করা ব্যবসায়ী আসাদ নিজেও একজন ওএমএসের ডিলার। তার নামে বরাদ্দ করা সরকারি পণ্য খোলাবাজারে বিক্রির বদলে পাইকারি দরে বিভিন্ন দোকানদারের কাছ থেকে বিক্রি করতেন। এছাড়া দয়াগঞ্জের তরিকুল নামে একজন ওএমএসের ডিলার ও বাড্ডার দিপ্তী নামে একজন ডিলারের কাছ থেকে ওএমএসের চাল এবং আটা কিনে পাইকারি দামে বিক্রি করতেন। অবশ্য আসাদের কাছে আটা বিক্রি করার কথা এই প্রতিবেদকের কাছে অস্বীকার করেন দয়াগঞ্জ এলাকার ওএমএস ডিলার তরিকুল। তিনি বলেন, আসাদ মিথ্যা বলেছে। আমি ভোক্তাদের বাইরে কখনও সরকারি পণ্য বিক্রি করি না।

ডিবির কর্মকর্তারা জানান, তারা অভিযানের সময় আসাদের মেরাদিয়ার গোডাউনে সরকারি মোড়ক পরিবর্তন করে চাল ও আটা অন্য মোড়কে স্থানান্তর করার বিষয়টি দেখতে পান। জিজ্ঞাসাবাদে আসাদও জানিয়েছে, গোডাউনে সরকারি পণ্য ঢোকানোর পরপরই মোড়ক পরিবর্তন করা হয়। সম্প্রতি তিনি তরিকুলের কাছ থেকে ১০০ বস্তা আটা কেনার পর সেগুলোর মোড়ক পরিবর্তন করছিলেন বলে স্বীকার করেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, আসাদের গোডাউনে সরকারি চাল, আটা, ডাল মজুত ছিল। খাদ্য অধিদফতরের আটার বস্তা পাল্টে মেসার্স লক্ষ্যা ফ্লাওয়ার ইন্ডাস্ট্রিজ ড্যানিশ মার্কা আটা, ময়দা, ডাল প্যাকেটজাত করছিলেন। প্যাকেটজাত করার পর এগুলো রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করতেন তিনি। মেরাদিয়া এবং নন্দীপাড়া এলাকাতেই তার দুটো গোডাউন রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিবি’র এক কর্মকর্তা জানান, রাজধানীসহ সারা দেশে সরকারের ভর্তুকি পণ্য কালোবাজারে বিক্রি করে এমন অন্তত ২০টি চক্র রয়েছে। গুদামের লোকজনকে ম্যানেজ করে চক্রটি এই কাজ করছে। গরিবের হক মেরে চক্রের সদস্যরা কোটি কোটি টাকা নিজেদের পকেটে ভরছে।

জানা গেছে, সারাদেশে খাদ্য অধিদফতরের ওএমএস-এর পণ্য বিক্রি করেন আড়াই হাজারের বেশি ডিলার। টিসিবি’র (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) পণ্য বিক্রির জন্য সাত হাজারের বেশি ডিলার রয়েছে। এছাড়া খাদ্যবান্ধব প্রোগ্রামেরও ১০ হাজার ১১০ জন ডিলার রয়েছে। এদের মধ্যে অসাধু কিছু ডিলার এবং দুর্বৃত্ত সরকারি গুদাম সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তির সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে তাদের অপকর্ম চালিয়ে আসছেন। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তেজগাঁও কেন্দ্রীয় গুদাম থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় খাদ্যপণ্য কালোবাজারে বিক্রির বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় হয়। এলিট ফোর্স র‌্যাব সে সময় একাধিক অভিযান পরিচালনা করে। পরে ২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর র‌্যাব অভিযান চালিয়ে শ্যামপুরের দুই ডিলারের গুদাম থেকে সরকারি ৪৮ টন আটা ও ৪ টন চাল জব্দ করে।

খাদ্য অধিদফতর সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, গুদাম থেকে চালানের বাইরে এক ছটাক চাল বা আটা বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সাধারণত ডিলাররা তাদের নামে বরাদ্দ করা চাল-আটা তুলে নিয়ে কালোবাজারে বিক্রি করে দেন। খোলাবাজারে ভর্তুকির চাল-আটা বিক্রির বিষয়টি দেখভাল করতে অধিদফতরের একটি শাখা রয়েছে। রাজধানী ঢাকাকে ৯টি অঞ্চলে ভাগ করে একজন করে অ্যাসিস্ট্যান্ট রেশনিং অফিসার (এআরও) বিষয়টি তদারকি করেন। এআরও-র অধীনে পরিদর্শক ও সহকারী পরিদর্শকও রয়েছেন। কিন্তু লোকবল সংকটের কারণে যথাযথভাবে তদারকি করা হয় না। এই ফাঁকে ডিলাররা অনেক সময় খোলাবাজারে বিক্রি না করে কালোবাজারে বিক্রি করে দেয়।

গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানের বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে খাদ্য অধিদফতরের সরবরাহ, বণ্টন ও বিপণন বিভাগের পরিচালক তপন কুমার দাস জানান, অভিযানের বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় গুদামসহ সবগুলো গুদাম খাদ্য অধিদফতরের মাধ্যমে কঠোরভাবে মনিটরিং করা হয়। এখানে গাফিলতির কোনও সুযোগ নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কালোবাজারে সরকারি পণ্য বিক্রির চক্রের সদস্যরা লাইসেন্সধারী। তারা বৈধভাবেই খাদ্যপণ্য নিজেরা গুদাম থেকে সংগ্রহ করেন। পরবর্তী সময়ে কার্ডধারীদের পণ্য না দিয়ে নিজেরা গায়েব করে দেন। স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে কম মূল্যে খোলাবাজারে (ওএমএস) বিক্রির জন্য সরকারি আটা ও চাল নিয়ে যাওয়ার পর তা সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করা হয় না। আবার কেউ কেউ বাজারমূল্যের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম দামে তেল, চিনি, পেঁয়াজ ও মসুরের ডাল কেনার জন্য বিভিন্ন স্পটে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের ঘনিষ্ঠ পরিচয়ে প্রতিদিন পণ্য কিনতে লাইনে ‘ভাড়াটে’ লোক দাঁড় করিয়ে পণ্য সংগ্রহ করেন। পরবর্তী সময়ে এসব পণ্য বেশি দামে (বাজারমূল্যের চেয়ে কিছুটা কম দামে) পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানে বিক্রি করে দেওয়া হয়।

টিসিবি’র মুখপাত্র যুগ্ম পরিচালক হুমায়ুন কবির বলেন, চলতি মাসের ১৪ তারিখ থেকে টিসিবি থেকে কেবল তেল ও মসুর ডাল বিক্রি করা হচ্ছে। এক কোটির মতো কার্ডধারীদের পণ্য দিচ্ছে টিসিবি। আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে অ্যাপসের মাধ্যমে ডিলারদের মনিটরিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা হবে।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ