1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ছিটমহল বিনিময় এবং বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী 

ইয়াহিয়া নয়ন : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ৩১ জুলাই, ২০২২

২০১৫ সালের ৩১ জুলাই বাংলাদেশ ও ভারতের ছিটমহল বিনিময় হয়েছিল। দুটি প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্রের সীমান্তের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় উভয় দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর দৈর্ঘ্যের কারণে এর ব্যবস্থাপনা খুবই কঠিন। উভয় দেশের মধ্যে ৪,০৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত, যা বিশ্বের পঞ্চম দীর্ঘতম স্থল সীমান্ত।

১৯৪৭ সালের দেশভাগের আগে বাংলাদেশ ও ভারত একটি দেশ ছিল। দেশভাগের ফলে পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি আলাদা দেশ গঠিত হয়। ১৯৪৭ সালের ভাগের মধ্যদিয়ে দ্বিতীয় বঙ্গভঙ্গ হয় (১৯০৫ সালে প্রথম বঙ্গভঙ্গ), বাংলা দুইভাগে বিভক্ত হয়। পশ্চিম বাংলা ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং পূর্ব অংশ পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ব বাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তান নামে যুক্ত হয়।

১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ও ভারতের সহযোগিতায় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতের যেসব রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত আছে সেগুলো হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ, মিজোরাম, আসাম, ত্রিপুরা এবং মেঘালয়। অন্যদিকে, ময়মনসিংহ (২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি গঠিত), রংপুর, খুলনা, সিলেট, রাজশাহী এবং চট্টগ্রাম এই ছয়টি বিভাগ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অবস্থিত।

ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) এবং বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রহরীর দায়িত্ব পালন করে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলকে এবং গাঙ্গেয় বদ্বীপকে ভাগ করার সঙ্গে সঙ্গে অনেক নদ-নদী দুই দেশের মধ্যদিয়ে এঁকে-বেঁকে গেছে। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো খুবই ঘনবসতিপূর্ণ। কিছু কিছু স্থানে সীমান্ত রেখার গ্রামগুলোকে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঘর-বাড়ি দালান-কোঠার মধ্যদিয়ে অতিক্রম করেছে।

ছিটমহল হলো রাষ্ট্রের এক বা একাধিক ক্ষুদ্র অংশ, যা অন্য রাষ্ট্র দ্বারা পরিবেষ্টিত। বন্দিত্ব বা দেশহীন মানুষের আবাসস্থল ছিটমহল। ইতিহাস পাঠে জানা যায়, ষোড়শ শতাব্দীতে মোগল সম্রাট শাহজাহানের হঠাৎ অসুস্থতার কারণে কুচবিহারের রাজা প্রাণনারায়ণ কামরূপের সুবেদার মীর লুৎফুল্লাকে আক্রমণ করে মোগল সাম্রাজ্যের বেশ কিছু বাড়তি অংশের ওপর নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন।

পরে আওরঙ্গজেবের নির্দেশে বাংলার সুবেদার মীর জুমলা বিশাল বাহিনী নিয়ে কুচবিহার আক্রমণ করেন এবং অধিকৃত মোগল সাম্রাজ্যর হৃত অংশগুলো পুনরুদ্ধার করে রাজধানী কুচবিহারও অধিকার করে ফেলেন। পরে ইসফান্দিয়ার বেগকে কুচবিহারের দায়িত্ব দেন। রাজা প্রাণনারায়ণ পালিয়ে গিয়ে পরে স্বসৈন্য শক্তি সংগ্রহ করে পুনরায় রাজ্য উদ্ধার করেন। তখন থেকেই মোগলদের সাথে দফায় দফায় রাজার যুদ্ধ লেগেই থাকত, যা শেষ হয় ১৭৭২ সালে। কুচবিহারের রাজা হন শান্তনুনারায়ণ।

তখন খাঞ্জা খাঁ কুচবিহারের বোদা, পাটগ্রাম এবং পূর্বভাগ এ চাকলা তিনটি অধিকার করেন। রাজা বেনামে চাকলা তিনটি ইজারা নেন। অন্য ভূ-সম্পত্তি দ্বারা পরিবেষ্টিত হলেও মূলত এ তিনটি চাকলার অন্তর্ভুক্ত অঞ্চলগুলোই কুচবিহারের ছিটমহল। পরে বহু বছরব্যাপী খণ্ড খণ্ড যুদ্ধের ফলে কুচবিহার রাজ্যের বেশ কয়েকটি ভূখণ্ডে মোগলদের দখলদারি কায়েম হয় এবং কালক্রমে এ অংশগুলো রংপুরের জমিদারির অধীনে চলে আসে, যা পরে রংপুরের ছিটমহল নামে পরিচিত।

পলাশী যুদ্ধের পর ১৭৮৯ থেকে ১৮০০ সালে ইংরেজরা কৌশলে কুচবিহারের রাজাকে নিজেদের বশে আনেন। সে প্রেক্ষাপটে প্রথমেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কুচবিহার রাজার নিকট হতে বোদা, পাটগ্রাম ও পূর্বভাগ এ তিনটি চাকলা অধিকার করেন এবং পুনরায় কুচবিহারের রাজার নিকট ফিরিয়ে দেন। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগের সময় সমস্যা বাধে কুচবিহারকে ঘিরে। কুচবিহারের রাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণের কিছু জমিদারি স্বত্ব ছিল বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুর জেলার আওতাধীন। অন্যদিকে রংপুর ও দিনাজপুরের জমিদারদের কিছু তালুক ও জোর ছিল কুচবিহার সীমানার মধ্যে।

উভয়পক্ষ সমঝোতায় ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশের মধ্যে ভারতের এবং ভারতের মধ্যে বাংলাদেশের কিছু এলাকা পড়ে। দেশ বিভাগের মতো এত বড় জটিল কাজটি (৮ জুলাই ১৯৪৭ থেকে ১৩ আগস্ট ১৯৪৭) অখণ্ড ভারতের দীর্ঘদিনের স্থল ও জলযোগাযোগ ব্যবস্থা, সংস্কৃতি, সমন্বিত অর্থনীতি ও স্থিতি সম্পন্ন এলাকা ব্রিটিশ ভারতের পূর্ব-পশ্চিম দুই অঞ্চলের দুটি প্রদেশ বাংলা ও পাঞ্জাবকে মাঝ বরাবর ধরে ম্যাপের ওপর দাগ টেনে ভাগ করেন।

সীমারেখা নির্ধারণীর মূলকপি ১৬ই আগস্ট ১৯৪৭ সালে জনসম্মুখে প্রকাশ করা হলে বিতর্কের ঝড় ওঠে এবং সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাওয়ায় ছিটমহলবাসীর ১৬২টি ছোট-বড় ভূখণ্ড অনিষ্পত্তি অবস্থায় রাখে, যার ফলে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। পৃথিবীর মানচিত্রে এই অঞ্চলকে বিধ্বস্ত বলয় বলা হয়।

আমার মনে হয় পৃথিবীতে রক্তপাত ছাড়া এক দেশের সাথে অন্য দেশের যত চুক্তি হয়েছে তার মধ্যে সেরা চুক্তি হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চুক্তি। বৈশ্বিক রাজনীতির কারণেই শেখ হাসিনা আর নরেন্দ্র মোদীকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়নি। এই চুক্তিই প্রমাণ করেছে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের গভীরতা অসীম। দুই দেশের দুশমনরাও স্বীকার করে এই গভীরতাকে।

২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হন ভারতের ১১১টি ছিটমহলের নাগরিকরা। অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হন বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের বাসিন্দারা। সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় এখন ছিটমহলের বাসিন্দারা বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, ভিজিডি, মাতৃত্বকালীন ভাতা ও শিক্ষাবৃত্তির সুবিধা পাচ্ছেন। তাদের শিক্ষা চিকিৎসা আজ হাতের নাগালে। ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে ছিটমহলগুলোতে। ওরা আর দেশহীন নয় ওরা এখন বাংলাদেশী।

লেখক : ইয়াহিয়া নয়ন – সাংবাদিক।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ