1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

আঁতাত ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতিই যাদের ভরসা

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ৫ জুলাই, ২০২৩

বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দল(বিএনপি) বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এমন একটি রাজনৈতিক দল যেটা জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত আঁতাত এবং ষড়যন্ত্রের উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে। স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার অবিসংবাদিত নায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ষড়যন্ত্র করে সপরিবারে হত্যা করার মধ্য দিয়ে উৎপত্তি হয় এই বিএনপি নামক দলটির। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের একজন জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নামে একটি রাজনৈতিক এই দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশকে ছায়া পাকিস্তান বানানোর যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীরা দেখেছিলেন তার এজেন্ডা বাস্তবায়নেই পরবর্তীতে কাজ করে বিএনপি। যেমন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় তেমনি ষড়যন্ত্রকে ভিত্তি করেই বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়া এই দলের কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন যুগের পর যুগ। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কখনোই এই দলের রাজনৈতিক কর্মকান্ড জনগণের সমর্থন নিয়ে হয়নি এবং তারা জনগণের শক্তি এবং গণতন্ত্রে কখনো বিশ্বাসী নয়। আর তারা কেনই বা জনসমর্থন ও গণতন্ত্রের রাজনীতিতে আগ্রহী হবে যদি আঁতাত ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে ক্ষমতায় আসতে পারে।

বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশ বিরোধী আন্তর্জাতিক চক্রের প্ররোচনায় পড়ে মিথ্যাচার করছে। তারা অপপ্রচার চালিয়ে সরকার ও দেশকে বিব্রত করার চেষ্টা করছে। দেশের উন্নয়নে অংশীদার না হয়ে দেশ ও সরকারের অর্জনকে বিতর্তিক ও ম্লান করার জন্য ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী এবং বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়তে নিরলসভাবে পরিশ্রম করছে। উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করতে সক্ষম হলেও বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে কুচক্রী মহল এই অর্জনের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে। বিএনপি-জামায়াত অনেক বছর ধরে চক্রান্তে জড়িয়ে পড়েছে। রাজপথের রাজনীতি ছেড়ে তারা অপপ্রচারের রাজনীতি করছে। সরকারের অর্জন ও ভালো কাজে তাদের গা জ্বলে, হিংসা হয় বলে সরকারের ভালো কাজের প্রশংসা না করে বরং সমালোচনা করছে।

২০০৪ সালের ২১ আগস্টে বিএনপি ষড়যন্ত্র করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে নিহত করা উদ্দেশ্যে ঘটিয়েছিল ইতিহাসের জঘন্যতম এবং ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা। ১৯ বছরের আগের এ দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম ঘৃণ্যতম দিন। দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে নেতৃত্বশূন্য করার জঘন্য অপচেষ্টার দিন। দেশের মানুষ আজও কেঁপে ওঠেন শনিবার দিনটির কথা ভেবে। কত শত মানুষ মনের অজান্তে কেঁদে ফেলেন। স্বজন হারানোরা খুঁজে ফেরেন প্রিয় মানুষের স্মৃতি।সেদিন যদি ঘাতকদের নিক্ষিপ্ত গ্রেনেড সমাবেশের জন্য ব্যবহৃত ট্রাকে বিস্ফোরিত হতো- আজ হয়ত বঙ্গবন্ধু কন্যা বেঁচে থাকতেন না। মারা পড়তেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারাও। মূলত আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতেই এমন পৈশাচিক হামলা চালায় ঘাতকরা।

এছাড়াও ২০০৯ সালে আওয়ামিলীগ সরকার জনসমর্থন নিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসার পরপরই বিএনপি ষড়যন্ত্র করে ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহ ঘটায় আওয়ামী লীগের জয়কে বানচাল করে দিয়ে তাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার জন্য। এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় প্রাণ হারায় হাজার হাজার বাঙালি শ্রেষ্ঠ সন্তান বিডিআরের বিভিন্ন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা।

বিএনপির ষড়যন্ত্রের আরেকটি উল্লেখ্যযোগ্য উদাহারণ হলো অপারেশন এপ্রিল ফুল। ৭০ দিন লাগাতার অবরোধ এবং শুক্র-শনি বাদে ফেব্রুয়ারির ১, ২০১৫ তারিখ থেকে দেড়মাসের লাগাতার হরতাল করে ১২১ জন নিরীহ মানুষকে পেট্রোলবোমায় পুড়িয়ে মেরে, দশ হাজার গাড়ি পুড়িয়ে, হাজার হাজার মানুষকে পঙ্গু করে দেশের অর্থনীতির বারটা বাজিয়েও জনসমর্থনের অভাবে সরকারের ঘাম ঝরাতে না পেরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের মাস্টারমাইন্ড তারেক জিয়া সরকার হটাতে সর্বনাশা পরিকল্পনা”অপারেশন এপ্রিল ফুল”-এর মাধ্যমে বাংলাদেশে নতুন করে অস্থিরতা এবং নাশকতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছিলেন। এ লক্ষ্যে লন্ডনে তার অনুসারি পরীক্ষিত ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের নিয়ে টানা ১৬ ঘণ্টা বৈঠক করেছেন তারেক জিয়া ।

শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করার লক্ষ্যে দেশকে অস্থিতিশীল করতে লন্ডনে তারেক জিয়া গোপনে বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যমতে জানা গেছে যে ওই বৈঠকে বাংলাদেশের অন্তত ১০০টি থানা এবং ১০০টি হাসপাতালে পেট্রোলবোমা এবং গ্রেনেড হামলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এ সময় তারেক রহমান নাকি মন্তব্য করেন, পেট্রোলবোমা থেরাপি এখন আর কাজ করছে না। এবার যা করতে হবে সরকার পতন ছাড়া গতি নাই। এই অপারেশনের নাম দেয়া হয়েছে অপারেশন এপ্রিল ফুল। এপ্রিলের ১ তারিখে এ হামলার প্রাথমিক তারিখও নির্ধারণ করা হয়েছিল। খবরে প্রকাশিত হয়েছিল যে, অপারেশন এপ্রিল ফুলের জন্য ২০০ স্পটে একসঙ্গে ২০০ কর্মী কাজ করবে। কোন ভাড়াটিয়া দিয়ে এই অপারেশন যেন না করা হয় সে ব্যাপারে কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন তারেক রহমান। এজন্য ছাত্রদলের সভাপতি, যুবদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন থেকে বিশ্বস্ত কর্মীদের তালিকা চাওয়া হয়েছিল। এই ২০০ জনকে মূলত তারেক রহমান নিজে মনিটর করবেন বলে জানানো হয়েছিল। পুরো বৈঠকে ২০০টি স্পটসহ কারা কী দায়িত্বে থাকবে, কত টাকা বাজেট, টাকার যোগাড় এসব বিষয়ে কথা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে।

এমনি করে দিনের পর দিন এবং বছরের পর বছর বিএনপি বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের সরকার ও জনগণকে নিয়ে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছেন। বর্তমানে তাদের রাজনীতি পরিচালিত হচ্ছে বাংলাদেশ মানুষের সম্পদ লুটপাট করে পাওয়া প্রাপ্ত সম্পদ ব্যবহার করে বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করে এবং বিদেশিদের সাথে আঁতাত করার মাধ্যমে। বাংলাদেশের বিএনপিপন্থীদের দুটি প্রতিষ্ঠান অধিকার এবং মায়ের ডাক এর তথ্যগুলো নিয়ে বিএনপির অবৈধ টাকা দিয়ে আঁতাত করা প্রতিষ্ঠান হিউম্যান রাইটস ওয়াচ একের পর এক বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড নিয়ে নানারকম মনগড়া বিদ্বেষ মূলক প্রতিবেদন তৈরি করতে থাকে। এমনকি সেগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর কাছেও বিতরণ শুরু করে যেন তারা প্রভাবিত হয়। সেই সময় বাংলাদেশের সরকার এটিকে উপেক্ষা করেছিল।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপির টাকা খেয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা অপতৎপরতায় লিপ্ত। মার্কিন ভিত্তিক এই মানবাধিকার সংস্থাটি বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারেও বাঁধা প্রদানের চেষ্টা করেছিল। সেই সময় যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী তাদেরকে বিপুল পরিমাণ আর্থিক অনুদান দিয়েছিল এমন অভিযোগ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

এছাড়াও বিএনপি টাকা দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেট দলের ৬ জন সদস্য এবং রিপাবলিকান দলের ৬ জন কংগ্রেসম্যানদের দিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চিঠি লিখিয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে এবং বাংলাদেশের গর্ব শান্তিরক্ষী বাহিনীকে নিয়ে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছেন। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিউনের ৬ জন এমপিকে দিয়ে লবিং করেও ঐ একই ধরনের অভিযোগ করে বাংলাদেশের উপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির যড়যন্ত্রে সরব হয়েছেন বিএনপি নামক রাজনৈতিকভাবে আদর্শহীন দলটি।

এমন করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল ও সরকারের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করতে নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। যুগপৎ আন্দোলন, দেশব্যাপী কর্মসূচি পালন করেও তারা সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে উসকে দিতে ব্যর্থ হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কূটনৈতিকদের সঙ্গে বারবার বৈঠক করেও সমালোচিত হয়েছে বিএনপি। তবে থেমে নেই তারা। প্রকাশ্যে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে না পেরে নতুন কৌশল অবলম্বন করছে বিএনপি। সমালোচনা এড়াতে এবার গোপনে বিদেশিদের দ্বারস্থ হচ্ছেন দলটির সিনিয়র নেতারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কূটনৈতিকদের সঙ্গে রীতিমতো আত্মীয়তা শুরু করেছে বিএনপি। সম্প্রতি দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর বাসায় একাধিকবার বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাপানসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিরা। সেসব বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ সিনিয়র নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি যেকোনো মূল্যে আগামী নির্বাচন বানচাল করতে এবং ক্ষমতায় বসতে চায়। এজন্য বিদেশিদের চাওয়া-পাওয়া এবং পরামর্শ চাইতেই কূটনৈতিকদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে।

কূটনীতিকদের কাছে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নালিশ করে বারবার তোপের মুখে পড়েছে বিএনপি। তবু তাদের ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। প্রকাশ্যে বৈঠক করে সফল না হওয়ায় এবার গোপনে বিদেশিদের বাসায় ডেকে আনছেন বিএনপি নেতারা।

সুতরাং আঁতাত ও ষড়যন্ত্রের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল বিএনপি জনসমর্থন এবং মাঠের রাজনীতিতে কোনোদিন সফল হতে পারবেনা বলেই পূর্বের ন্যায় রাজনীতির নতুন পথ ষড়যন্ত্রকে বেঁছে নিয়েছে তারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে। কিন্তু এসব ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পথকে রুদ্ধ করতে পারবেনা। গণতন্ত্রে ও স্বাধীনতার শক্তিতে বিশ্বাসী আওয়ামিলীগের সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনসাধারণের সমর্থন নিয়ে পূর্বের ন্যায় বিএনপি সব ধরনের ষড়যন্ত্র ও রাজনৈতিক অপতৎপরতাকে শক্ত হস্তে দমন করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।

লেখক : অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া – ট্রেজারার, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ