পাহাড়ি সৌন্দর্যে ঘেরা নেত্রকোনা জেলার সীমান্ত উপজেলা কলমাকান্দা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভরপুর উপজেলাটির ৮ ইউনিয়নের তিনটিই পাহাড়ি সীমান্তবেষ্টিত। আর সেই সীমান্তগুলো যেনো এক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আধার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার কমবেশি সবকটি ইউনিয়নের রয়েছে সুন্দরের ঢেউ। তার মধ্যে অন্যতম রংছাতি, লেঙ্গুরা এবং খারনৈ ইউনিয়ন। শুধু গ্রাম নয়, মেঘালয়ের পাদদেশে রংছাতি ইউনিয়ন শুরু হয়ে খারনৈ পাড় হয়ে লেঙ্গুরা ইউনিয়ন অব্দি শেষ হয়েছে। প্রায় অর্ধ শতাধিক কিলোমিটার সীমানার নানা জায়গায় রয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। তবে নেই চলাচলের জন্য ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা।
রংছাতি ইউনিয়নের পাঁচগাও সীমান্তে রয়েছে কথিত চাঁদ সওদাগরের ডুবে যাওয়া নৌকার নাম ধরে পাহাড়ের নামকরণ চন্দ্রডিঙ্গা। যা দেখতে মানুষ দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসে। বন্ধুর পথ মাড়িয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভ্রমণ পিপাসুরা ছুটে চলেন সড়কবিহীন এ সকল সৌন্দর্য অবলোকনে। তবে ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য কষ্টসাধ্য হলেও চোরাকারবারিদের জন্য যেন সহজ পথ।
স্থানীয় এবং ঘুরতে আসা পর্যটকরা জানান, এসব পথ মসৃণ না করার অন্যতম কারণ চোরাচালান। কারণ মানুষ বেশি আসলে এবং পথ সহজ থাকলে এগুলো আর করা যাবে না। যেমন সাধারণ মানুষের পাহাড়ে চলাচলে বাধা না থাকলেও সাংবাদিক দেখলে বিজিবির টহল দল আটকে দেয়।
তারা জানান, সাংবাদিকরা তো সৌন্দর্য প্রচার করবে। তাহলে কেনো আটকানো হয়। এছাড়া প্রায় প্রতিদিন হাজারও দর্শনার্থী সহজে পাহাড়ের ভেতর যাচ্ছে আবার আসছে, বাধা নেই। ফেসবুকে ছবি দিচ্ছে। যে কারণে একজন আরেকজন থেকে জানার পর ঘুরতে আসছেন এসব এলাকায়। আবার হয়রানির শিকারও হচ্ছেন অনেকে। যা পাহাড়ের নিচে বসবাসকারীরাও স্বীকার করেন।
সীমান্তের হোতাপাড়া বাঘবেড় গ্রামের হানিফ সাইদুলসহ গ্রামের মানুষজন জানান, শত শত বছর পূর্বে চাঁদ সওদাগরের নৌকা ডুবেছিল। তাই পাহাড়টি কিছুটা নৌ আকৃতির দেখতে। যে কারণে এর নাম চন্দ্রডিঙ্গা বা চন্দ্রডিঙ্গি। যে যেভাবে পারেন চেনেন। এখানকার স্থানীয়রা পুরো বর্ষা মওসুমে বিপজ্জনক পথে চলাচল করেন। পাহাড়ি ঢলে এমনিতেই প্রতি বছর এসব এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার উপর নেয়া হয় না কোনো ধরনের সরকারি-বেসরকারিভাবে মেরামতের উদ্যোগ।
বেশিরভাগ পাহাড়ের নিচে বসবাস করেন হাজংসহ উপজাতি ও ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর বিভিন্ন সম্প্রদায়। তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা এ ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি।
রংছাতি ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান খান পাঠান জানান, সড়কটি বন্যায় ভেঙ্গে যাওয়ায় এমন অসুবিধা হচ্ছে। তবে চেষ্টা চলছে বাঘবেড় চন্দ্রডিঙ্গা সড়কের ভালো ব্যবস্থা করার। এছাড়া চোরাচালান চন্দ্রডিঙ্গা দিয়ে হয় না। হয় মহিষখোলা ও বড়ুয়াকোনা সীমান্তে। বড়ুয়াকোনা মহাদেব পাহাড়ি নদী। যেসব নদীর ডাক হয় না। কিন্তু এটি থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনসহ প্রতিদিন বিনা ডাকে কয়েক লাখ টাকার চাঁদাবাজি হয় বলেও জানান তিনি।
তবে সীমান্ত নিয়ে বিজিবি’র কর্নেল এবং স্থানীয় কমান্ডার কেউই এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।