1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বেদনার নীল রঙে “শোকগাঁথা আগস্ট”

মাহমুদুল হক হাসান : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৩

”শোকগাঁথা আগস্ট” প্রতিবছর বেদনার নীল রঙে আবির্ভূত হয় আমাদের মাঝে। এদিন বারবার ফিরে আসে স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট কলঙ্কের কালিমায় কলুষিত,বেদনাবিধুর ও ইতিহাসের জঘন্যতম একটি দিন। এ কালো রাতে আমরা হারিয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

১৫ আগষ্ট শুধু বঙ্গবন্ধুকে নয় বরং হত্যা করা হয় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চেতনাকে। ১৫ আগষ্ট শুধু একটি হত‍্যা কান্ডই নয় একটি স্বাধীন স্বার্বভৌম ও অসাম্প্রদায়িক জাতিকে পরাধীন করার পাশবিক চক্রান্তও বটে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা। বাংলার ভাগ‍্যাকাশে যখন ঘোর অমানিশা তখন ধুমকেতুর মতো আবির্ভাব ঘটে বঙ্গবন্ধুর। বঙ্গবন্ধু শুধু একটি নাম বা রাজনৈতিক নেতা নয় বঙ্গবন্ধুর নামের সাথে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি।

পচাঁত্তরের ১৫ ই আগস্ট অসীম সাহস আর অকুতোভয় নেতৃত্বের অধিকারী বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতালোভী পাষন্ড, বর্বর,পাকিস্তানিদের দোসর,দেশী-বিদেশী কুচক্রী মহল দ্বারা সপরিবারে হত‍্যা করা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট আমাদের জাতীয় শোক ও বেদনার দিন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের ১৮জন সদস্যকে এ সময় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাদের মধ‍্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান,তার সহধর্মিনী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব,শেখ কামাল, শেখ জামাল,শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল,শেখ জামালের স্ত্রী রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, এসবি অফিসার সিদ্দিকুর রহমান, কর্নেল জামিল, সেনা সদস্য মাহবুবুল হক, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি, তার স্ত্রী আরজু মনি,,বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত,পুত্র আরিফ,নাতি সুকান্ত বাবু, আব্দুর রবের বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব ও এক আত্মীয় বেল্টু খান। শোকাবহ আগষ্ট বাংলা ও বাঙালির ইতিহাসে,নির্মম, নিকৃষ্ট, বেদনাদায়ক,গ্লানিকর এক ভয়ার্ত দিন। এ দিনটি ফিরে আসে স্বাধীনতার মহানায়ক,বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা এক মহান ব্যক্তি ও তার পরিবারকে নির্মম হত্যাকাণ্ডের অসহনীয় যন্ত্রণা নিয়ে।

৭৫ এর ১৫ ই আগস্ট ইতিহাসের জঘন‍্যতম হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে পুরোজাতি অবিভাবক শূন্য হয়ে পড়ে। এই বিভীষিকাময় রাতের পর থেকে দেশের সকল গণতান্ত্রিক চর্চা বন্ধ হয়ে যায়। সদ‍্য স্বাধীন দেশের গণমানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কথা তোয়াক্কা না করেই রাষ্ট্র পরিচালনা শুরু করে সামরিক লোকজন। অবৈধ পন্থায় রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে সংবিধানের উপর কুখ্যাত ইনডেমনিটি বিল চাপিয়ে খুনিচক্রের দোসর সামরিক সরকার ঘৃণ‍্য হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের বিচারের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিল।শোক মানুষকে এক ধরনের শক্তি দেয়।শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে না পারলে তা শুধু মাতম ই থেকে যায়। তাই শোককে শক্তিতে রুপান্তরিত করার বিকল্প নেই।

বঙ্গবন্ধু তার জীবন-যৌবন সবকিছু উৎসর্গ করেছিলেন বাংলার জন্য ও বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য।বাঙালি জাতির অগ্রদূত ও সম্মোহনী নেতৃত্বের অধিকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষক,শ্রমিক,দিনমজুর আর খেটে খাওয়া মানুষদের দুঃখ,দুর্দশা ঘুঁচাতে জীবনের দীর্ঘ একটা সময় কারাগারেই পার করেছেন। স্বাধীনতার পর মাত্র তিন বছরে বঙ্গবন্ধু পাল্টে দিয়েছিলেন দেশের চিত্র। সমগ্র বাঙালি জাতিকে তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রেরণায় উজ্জীবিত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা একটি অন্যটির পরিপূরক। প্রিয় মাতৃভূমি, বাঙালি জাতি ও বাঙালির দুঃখ-কষ্ট গভীরভাবে উপলব্ধি করতেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে ৩০ লক্ষ শহীদ ও দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে পাওয়া সদ‍্য স্বাধীন সোনার বাংলায় কলঙ্কের দাগ টেনে দিয়েছিল বাঙালি পরিচয় ধারণকারী কিছু নরপিচাশ ও দুর্নীতিবাজ। গোটা বিশ্বে নেমে এসেছিল শোকের ছায়া। শান্তিকামী বঙ্গবন্ধু শান্তির পক্ষে আজীবন সংগ্রাম করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ইউনেস্কো কর্তৃক ঘোষিত বঙ্গবন্ধুর নামে শান্তি পদক বাঙালি জাতিকে নতুন গৌরব দান করেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের চার বছর পর ১৯৭৯ সালে ১৫ ই আগস্টকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করা হয়।

১৫ আগস্ট বাঙালির জন্য এখন শুধু শোকের মুহূর্ত নয়,শোক এখন পরিণত হয়েছে শক্তির অনির্বাণ উৎসবিন্দুতে। মহাকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ যারা মানুষের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন,থমাস জেফাবসন, আব্রাহাম লিংকন,ইংল্যান্ডের উইনস্টন চার্চিল,ভারতের মহাত্মা গান্ধী,পন্ডিত জওহর লাল নেহরু দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা; রাশিয়ার লেনিন,চীনের মাওসেতুং,কিউবার ফিদেল কাস্ত্রোর মতো ব্যক্তিত্ব এর উজ্জ্বল উদাহরণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি নাম, ইতিহাস, দেশ,একটি অনুপ্রেরণা ও একটি আদর্শ। দেশ স্বাধীনের পর অসাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র,সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষ মূলনীতিতে সংবিধান প্রণয়ন করেন বঙ্গবন্ধু।

দেশের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ত‍্যাগ, তিতিক্ষা ও অবদানকে ভুলে যাবার নয়। তিনি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হয়েও সরকারি বাসভবনের পরিবর্তে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতেই বসবাস করতেন।বঙ্গবন্ধু একটি জাতি রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা। সমগ্র জাতিকে তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রেরণায় উজ্জীবিত করেছিলেন বাংলা ও বাঙালির মুক্তির জন্য। বঙ্গবন্ধু নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন বাঙালি ও বাংলাদেশের জন‍্য। বঙ্গবন্ধু সর্বদা চাইতেন দেশের প্রতিটা মানুষ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এ চারটি মূলনীতি যথা গণতন্ত্র,ধর্মনিরপেক্ষতা,জাতীযতাবাদ ও সমাজতন্ত্র বৈষম্যহীনভাবে এ দেশে বসবাস করবে। প্রতিটা ধর্মের মানুষ সমান সম্মান ও অধিকার নিয়ে দেশে বসবাস করবে। দেশের প্রতিটা সিদ্ধান্ত হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়, দেশের যেকোনো মানুষের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া হবে এবং সবাই সবকিছুতে সমান অধিকার ও সুযোগ সুবিধা পাবে। মুক্তিযুদ্ধে যেসব মেয়েরা ধর্ষিত হয়েছিল তাদের বাবার নামের জায়গায় আমার নাম লিখে দেও আর বাড়ির ঠিকানা দিও ধানমন্ডি ৩২ এমন মনোভাব যার আছে তিনি নিঃসন্দেহে মহান।

বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক ৩০ বছরের জীবনের ১৩ বছর কাটিয়েছেন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। তিনি সর্বমোট ১৮বার কারারুদ্ধ হয়েছিলেন জেল জুলুম ও নির্যাতন তাঁর জীবনের একটি নিয়মিত অধ্যায়ে পরিণত হয়েছিল। তিনি ২১ বার গ্রেফতার হয়ে ৪৬৭৫ দিন জেল খেটেছেন। সবগুলো মামলার বাদী ছিল সরকার/রাষ্ট্র। তিনি ১৯৭৪ এর দুর্ভিক্ষকালীন ৯ মাসের বেতন গ্রহণ করেন নি । সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ক‍্যারিশমাটিক নেতৃত্বে বহুদিনের শোষণ-নির্যাতনের অবসান ঘটিয়ে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ উপহার দিয়েছেন। বজ্রকণ্ঠের অধিকারী বঙ্গবন্ধু ছিলেন অতুলনীয় বাগ্মী। গণমানুষকে বক্তৃতের মাধ্যমে আন্দোলিত করতে পারতেন বলে রাজনীতির কবি হিসেবে বেশ পরিচিতি পান। তার রাজনৈতিক বক্তব্য ছিল অত্যন্ত মার্জনীয় ও নীতির প্রশ্নে ছিলেন আজীবন অটল। তিনি বলেছিলেন বাংলা একটি বক্তব্যে, বিশ্ব আজ দুটো ভাগে বিভক্ত একটি শোষক আর অন্যটি শোষিত। আমি সবসময় শোষিতের পক্ষে।

বঙ্গবন্ধু সাধারণ পেশাজীবী রাজনৈতিক ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থে একজন দূরদৃষ্টি সম্পন্ন জাতীয় নেতা। জার্মান দার্শনিক ফ্রেডরিক হেগেলের ভাষায়,মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হচ্ছে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে দীর্ঘ নয় মাস সংগ্রাম চালিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দেয়ার কৃতিত্ব বঙ্গবন্ধুর রয়েছে। শোকগাঁথা আগষ্টে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে সুশৃঙ্খল ও স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ‍্যে বাঙালির এ শোক পরিণত হোক জাতীয় শক্তির অনির্বাণ উৎসবিন্দুতে। সেইসাথে বিভিন্ন সময়ে দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্ব থেকে আজ অবধি মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের ক্রান্তিলগ্নে মাতৃভূমির কল‍্যাণে প্রাণ বিসর্জনকৃত সকল বিদেহী আত্নার প্রতি জাতীয় শোক দিবসে গভীর শ্রদ্ধা।……

লেখক: মাহমুদুল হক হাসান – মুক্তমনা কলামিষ্ট।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ