1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

অঙ্গদান সংরক্ষণ, সংযোজন ও প্রতিস্থাপনে বাংলাদেশ

ডা. মো. জয়নাল আবদিন : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ২ নভেম্বর, ২০২২
ডা. মো. জয়নাল আবদিন

জনসংখ্যার বিচারে দেশে এখন ১৬ কোটিরও অধিক মানুষের বাস। বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। দেশ আজ স্বল্পোন্নত (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। সন্দেহ নেই, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের স্বাস্থ্য খাতেরও আধুনিকায়ন অনেকখানিই হয়েছে, দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও গর্ব করার মতো সাফল্য পেয়েছেন। বিশেষ করে বৈশ্বিক করোনাকালীন সংকট মোকাবেলায় এ দেশের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অবদান জাতির শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ রাখার কথা।

পরিতাপের বিষয়, এখনো গড়ে প্রতিবছর পাঁচ লাখ লোক দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে এবং বছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা চিকিৎসা বাবদ বিদেশে চলে যাচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিটি রোগীর ভ্রমণ, থাকা, খাওয়া ও আনুষঙ্গিক ব্যয় মিলিয়ে তা আরো অনেক বেশি। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৫০ বেডের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল উদ্বোধন করা হয়েছে। অঙ্গ প্রতিস্থাপনসহ সব আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ এই হাসপাতালে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা দেশের মানুষকে চিকিৎসা নিতে বিদেশে না যাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।

বলা চলে, এটি আমাদের জন্য একটি বড় অর্জন হবে, যদিও কিছু ভিন্ন বাস্তবতাও রয়েছে। বিশেষ করে দেশের অঙ্গ সংগ্রহ, সংরক্ষণ, সংযোজন ও প্রতিস্থাপনে ভয়াবহ সংকটাপন্ন অবস্থা রয়েছে। এ দেশে এখন কিডনি রোগীর সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার মানুষ কিডনি বিকল হয়ে মারা যায়। দেশে এক কোটির বেশি মানুষ হেপাটাইটিস বি-তে আক্রান্ত, যার অন্তত ১০ শতাংশের লিভার বিকল হয়ে যায়। কর্নিয়াজনিত সমস্যার কারণে অন্ধের সংখ্যা পাঁচ লাখ। প্রতিবছর আরো ৩০ হাজার মানুষ কর্নিয়াজনিত অন্ধত্ব বরণ করে। বছরে দেশে মাত্র ১৫০টির মতো কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। বছরে ২০ থেকে ৩০টি কর্নিয়া সংগ্রহ করা সম্ভব হয়।

এভাবে চলতে থাকলে দেশের কর্নিয়াজনিত অন্ধত্ব দূর করতেই ১০ হাজার বছর সময় লেগে যেতে পারে! বাংলাদেশে এ পর্যন্ত শুধু চারটি লিভার সংযোজন করা হয়েছে। ফুসফুস ও হৃিপণ্ড প্রতিস্থাপন একেবারেই হয়নি। অস্থিমজ্জা সংযোজন কিছুটা হচ্ছে। উন্নত বিশ্বে ৬০ শতাংশ রোগী কিডনি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনযাপন করে এবং এর ৯০ শতাংশ কিডনি মৃতদেহ থেকে সংগ্রহ করা হয়।

দেশে রক্ত ও মরণোত্তর চক্ষুদান আন্দোলন ছাড়া সত্যিকার অর্থে কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও সংযোজনে কোনো উল্লেখযোগ্য মানবিক আন্দোলন হয়নি। ১৯৭৮ সাল থেকে সন্ধানীর উদ্যোগে দেশে স্বেচ্ছায় রক্তদান শুরু হয় এবং পর্যায়ক্রমে জনপ্রিয় সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে স্বেচ্ছায় রক্তদান মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি অতি সাধারণ ব্যাপার হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। একটা সময় ছিল রক্তের অভাবে মৃত্যুশয্যায় শায়িত রেখেও মা-বাবা নিজের ছেলেমেয়ের জন্য, নিজের ছেলেমেয়েরা মা-বাবার জন্য রক্ত দিতে ভয় পেত। এখন আর সেই অবস্থা নেই। এখন যে কারো প্রয়োজনে মানুষ রক্ত দিতে আসে, অন্তত রক্ত দিতে ভয় পায় না। ১৯৮৪ সালের ২৫ নভেম্বর সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির উদ্যোগে দেশে মরণোত্তর চক্ষুদান আন্দোলন শুরু হয়। কিন্তু মরণোত্তর চক্ষুদান আন্দোলনকে স্বেচ্ছায় রক্তদানের মতো জনপ্রিয়, গ্রহণযোগ্য করা যায়নি।

দেশে অঙ্গদানের বেশ কিছু গলদ রয়ে গেছে। উন্নত দেশগুলোতে ৯০ শতাংশ কিডনি সংগ্রহ করা হয় মৃতদেহ থেকে এবং অন্যান্য অঙ্গ সংগ্রহের মূল উৎসও মূলত মৃতদেহ। ইরানের মতো কট্টরপন্থী ইসলামিক রাষ্ট্রেও মৃতদেহ থেকেই অঙ্গ সংগ্রহ করা হয়। সৌদি আরব, কাতারসহ ইসলামিক দেশেও অঙ্গদান, সংগ্রহ ও প্রতিস্থাপনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। বিপুল পরিমাণ জীবন রক্ষা পাচ্ছে এই অঙ্গদান ও সংগ্রহ জনপ্রিয় হওয়ার জন্য।

বাংলাদেশে রয়েছে সাড়ে ১৬ কোটি জনগোষ্ঠী, বাঙালি হৃদয়ে রয়েছে আবেগ, ভালোবাসা। বর্তমানে প্রতিবছর ১০ লাখ লোক মৃত্যুবরণ করে। এর শতকরা দুজন চক্ষুদান করলেও বছরে ৪০ হাজার কর্নিয়া পাওয়া সম্ভব। একটি মৃতদেহের বিভিন্ন অঙ্গ সংগ্রহ করে অন্য আটজন মানুষের দেহে সংযোজন করে আটজন মানুষের জীবন ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব! অথচ এই বিপুল পরিমাণ মৃতদেহ থেকে কর্নিয়া ছাড়া কোনো অঙ্গ সংগ্রহ এখনো শুরুই হয়নি।

চক্ষুদান ও অঙ্গদান এক সূত্রে গাঁথা। এই বিষয়টিতে যুগপৎ আন্দোলন বা কর্মকৌশল দরকার। বিপুল জনগোষ্ঠীকে অঙ্গদানে আন্দোলিত ও সচেতন করা গেলে এ দেশ চক্ষুদানসহ সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংগ্রহ ও প্রতিস্থাপনে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। এ জন্য সবার আগে দরকার দেশব্যাপী জনসচেতনতা তৈরি করা এবং পাশাপাশি মৃতদেহ থেকে অঙ্গ সংগ্রহ ও সংরক্ষণের সব আয়োজনের আধুনিক ব্যবস্থা করা। জনসচেতনতা তৈরির ব্যাপারে ‘স্বাধীনতা পদক’ পাওয়া সংগঠন সন্ধানী এক বড় ভূমিকা পালন করতে পারে, যেটি স্বেচ্ছায় রক্তদানের ক্ষেত্রে সন্ধানী করতে পেরেছে।

দেশের প্রায় সব মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে সন্ধানীর ইউনিট রয়েছে। সন্ধানীর রয়েছেন বেশ কিছু সুধীজন ও স্বনামধন্য সেলিব্রিটি, যাঁরা মরণোত্তর চক্ষু ও দেহ দান করেছেন। এই সেলিব্রিটিদের সন্ধানীর অ্যাম্বাসাডর করা যেতে পারে, যাঁরা প্রচারকাজে ভূমিকা রাখবেন। যেমন—ভারতের বিখ্যাত ও জনপ্রিয় নায়িকা ঐশ্বরিয়া রাই চক্ষুদানের জন্য প্রচারকাজ করেন। তা ছাড়া সন্ধানী ইউনিটগুলোর মাধ্যমে নিকটস্থ বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, ক্লাবসহ সব প্রতিষ্ঠানে মরণোত্তর চক্ষু ও দেহ দানের ব্যাপারে ব্যাপক প্রচার চালাতে পারে। মানুষকে নীতি-আদর্শ, সেবা ও মানবতায় উদ্বুদ্ধ করে মরণোত্তর চক্ষু ও দেহ দানে উদ্বুদ্ধ করে দেশব্যাপী সচেতনতার একটি প্রবাহ তৈরি করতে পারলে এই চক্ষু ও অঙ্গ দানে সারা বিশ্বে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যেতে পারে বাংলাদেশ। আমরা অবশ্যই এই কাজটি করতে পারি, যদি আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে তৎপরতা শুরু করি।

লেখক : ডা. মো. জয়নাল আবদিন – সহযোগী অধ্যাপক, কনজারভেটিভ ডেন্টিস্ট্রি অ্যান্ড এন্ডোডন্টিকস বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাবেক মহাসচিব, সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ