1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

সুনীল অর্থনীতি ও উন্নয়নের নতুন দিগন্ত

নিউজ এডিটর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৩

বেলজিয়ামে জন্মগ্রহণকারী উদ্যোক্তা, অর্থনীতিবিদ ও লেখক গুন্টার পাওলি ১৯৯৪ সালে প্রথম সুনীল অর্থনীতির ধারণা প্রবর্তন করেন। অর্থনীতির পরিভাষায় সংক্ষেপে এটাকে সামুদ্রিক সম্পদের আহরণ, সংরক্ষণ ও পুনরুৎপাদন প্রক্রিয়াকে বোঝায়। তবে বিশ্বব্যাংক এর একটা সম্প্রসারিত সংজ্ঞা দিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে, সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থানের স্বাস্থ্য অক্ষুন্ন রেখে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, উন্নত মানের জীবন ও জীবিকা এবং কর্মসংস্থান অর্জনের লক্ষ্যে সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার হলো সুনীল অর্থনীতি। আমাদের দেশে এর অর্থ ও আওতা আরও ব্যাপক; এখানে এর মানে হলো বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য অক্ষুন্ন রেখে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সমুদ্রের অনুন্মোচিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন, বাণিজ্য ও শিল্পোন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন।

বঙ্গোপসাগরের পৃষ্ঠদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ অনেক আগে থেকেই নানাভাবে সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ করে আসছিল। সেটা ছিল মূলত অপরিকল্পিত ও প্রধানত মৎস্য সম্পদ আহরণের মধ্যে সীমাবদ্ধ। সমুদ্র হলো অপার সম্ভাবনার এক উন্মুক্ত আধার; সেখানে শুধু যে পুঞ্জীভূত মৎস্য সম্পদ থাকে, তাই না, এর তলদেশে যেমন থাকে তেল-গ্যাসের মতো হাইড্রোকার্বনের ভাণ্ডার, তেমনি উপরিভাগে থাকে ঢেউ, স্রোত, বাতাস, জোয়ার ও তাপ থেকে উৎপাদিত নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের উৎস। আরও থাকে নানা ধরনের খনিজ পদার্থ, শৈবাল ও জলজ উদ্ভিদ, যেগুলো খাদ্য নিরাপত্তা, মানব স্বাস্থ্য ও পুষ্টির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য ২০৫০ সালে পৃথিবীতে প্রাক্কলন অনুযায়ী জনসংখ্যা যখন ৯ কোটিতে উন্নীত হবে, তখন খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে এই সমুদ্র এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে ধারণা করা হয়।

ভূমি-বুভুক্ষু বাংলাদেশে সুনীল অর্থনীতির গুরুত্ব অপরিসীম। এখানে খাদ্য উৎপাদনের জন্য মানুষ প্রধানত কৃষিজমির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু পৃথিবীর অষ্টম জনবহুল এই দেশে ভূমি-জন অনুপাত খুবই কম; জনপ্রতি ভূমির লভ্যতা মাত্র ১১.৪৪ শতাংশ (০.০৪৭৮৯ হেক্টর)। জনসংখ্যার ক্রমবর্ধন, নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে এখন দ্রুত গতিতে অনেক আবাদি জমি অকৃষি কাজে বেদখল হয়ে পড়ছে। অতি কর্ষণের ফলে ভূমির স্বাস্থ্যও এখন ক্ষয়িষ্ণু। কাজেই আগামীতে বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণে দেশের আবাদযোগ্য ভূমির পরিমাণ ও মান পর্যাপ্ত বলে বিবেচিত হবে না। এই প্রেক্ষাপটে সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনা দেশের সামনে এক নবদিগন্তের উন্মোচন।

বাংলাদেশ ২০১২ সালে মিয়ানমার ও ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে তার বিরাজমান সমুদ্র-সীমানা বিরোধ শান্তিপূর্ণ পন্থায় মিটিয়ে ফেলতে সক্ষম হয় এবং সমুদ্রের মধ্যে ১,১৮,৮১৩ বর্গকিলোমিটার জায়গার ওপর মালিকানা স্বত্ব লাভ করে। এই পরিমাণ জায়গা দেশের মূল ভূখণ্ডের ৮১ ভাগের সমান। তাছাড়াও দেশ দু’শ নটিক্যাল মাইলের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল লাভ করে। এই অর্জন দেশের সমুদ্র ও উপকূলীয় অঞ্চলে মৎস্য আহরণ, মৎস্য চাষ, প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ ও উন্নয়ন, জাহাজশিল্প, বন্দর ও সমুদ্র পরিবহন শিল্পের উন্নয়ন, পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, কর্মসংস্থান সৃজন ও প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে সম্ভাবনার এক নবদ্বার উন্মোচন করে। সমুদ্র বিজয়ের পর দশ বছরেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে, কিন্তু এক্ষেত্রে অগ্রগতি আদৌ আশাব্যঞ্জক নয়। যেটা হয়েছে, তা হলো ২০১৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি (BSMRMU) প্রতিষ্ঠা, কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগ, ২০১৭ সালে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে একটা সুনীল অর্থনীতি সেল গঠন, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেরিটাইম রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (BIMRD) প্রতিষ্ঠা ও তার আগে জলসীমা নির্ধারণে ন্যায্যতা পেতে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার প্রাক্কালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মেরিটাইম অ্যাফেয়ারস ইউনিট নামে একটা বিশেষায়িত সেল গঠন। এগুলোকে আক্ষরিক অর্থে কাগুজে অগ্রগতি বললে অত্যুক্তি হবে না।

অনুমান করি গভীর সমুদ্রে দ্রুত অর্থায়নযোগ্য হাইড্রো-কার্বন প্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে সুনীল অর্থনীতি সেল গঠন করা হয় এবং এ মন্ত্রণালয়কে এই ব্যাপক কর্মযজ্ঞের জন্য লিড মিনিস্ট্রি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। নির্দেশ দেওয়া হয় যে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো নিজ নিজ অংশের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবে এবং জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এই সেলের মাধ্যমে এ কাজের সমন্বয় করবে। এরপর সেলের প্রধান কাজ হয়ে যায় প্রতি দুমাসে অংশীজনদের নিয়ে অন্তত একবার সভা অনুষ্ঠান করা এবং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে অগ্রগতির প্রতিবেদন প্রেরণ করা। সমস্যা হলো, ১০ জন কর্মচারী বিশিষ্ট এই সেলটি এখনো অস্থায়ী অবস্থায় রয়েছে; এখনো ‘সুনীল অর্থনীতি কর্র্তৃপক্ষ আইন’ প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। ফলে সেলের কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণ প্রদানসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও প্রণোদনা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এটা এখন হয়ে পড়েছে একটা ডাম্পিং গ্রাউন্ডে।

বাস্তবায়নে দক্ষ না হলেও দেশের কর্মকর্তারা পরিকল্পনা প্রণয়নে অত্যন্ত পারঙ্গম। এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে তিনটা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট ঘেঁটে যে অবস্থা দেখলাম, তাতে স্মার্ট বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশান্বিত হতে পারছিলাম না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট (এমএইউ) সংশ্লিষ্ট ৯টা খাতের জন্য চমৎকার একটা সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে এবং সেটা সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও সুষ্ঠু ব্যবহার বিষয়ক সমন্বয় কমিটি কর্র্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। কিন্তু সেটা যে কবে প্রণয়ন ও চূড়ান্ত করা হয়েছে, আর কবে যে আপলোড হয়েছে, তার কোনো উল্লেখ নেই। সর্বশেষ হালনাগাদের তারিখ লেখা রয়েছে ২৯ ডিসেম্বর ২০২১। কিন্তু এ কথাটা ঠিক নয়; ওয়েবসাইটে মন্ত্রণালয়ের ‘ – Bangladesh – An Introduction: know Bangladesh’ অংশের কয়েকটা তথ্য তার প্রমাণ দিচ্ছে। সেখানে অন্যান্যের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৬০ শতাংশ, দারিদ্র্যের হার ২৫ শতাংশ ও মাথাপিছু জিডিপির পরিমাণ ১০৪৪ মার্কিন ডলার হিসেবে দেখানো হয়েছে।

লিড মিনিস্ট্রির নিজের ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের করা দীর্ঘমেয়াদি, মধ্যম মেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা ওয়েবসাইটে শোভা পাচ্ছে। এসবেরও প্রণয়ন বা আপলোডের কোনো তারিখ উল্লেখ নেই। সর্বশেষ হালনাগাদ করার তারিখ লেখা রয়েছে ১৩ আগস্ট ২০১৮। মডেল পিএসসি যুগোপযোগী করা, তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে কূপ খনন করা, সিসমিক জরিপ সম্পন্ন করা, ৩ডি মাল্টি ক্লায়েন্ট সিসমিক সার্ভেকে ফাস্টট্রাকে অন্তর্ভুক্ত করা, নতুন বিডিং আহ্বান করা এই জাতীয় অনেক কাজের বিবরণ সেখানে রয়েছে। এগুলোর অধিকাংশের সময়সীমা ছিল ২০১৮ সাল, কয়েকটার জন্য ২০২০ সাল, আর মাত্র ২/৩টার জন্য সামনে কিছু সময় আছে। যেগুলোর সময় চলে গেছে, সেগুলো সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। প্রশ্ন হলো এই জাতীয় সময়াবদ্ধ পরিকল্পনার উপযোগিতা কতটুকু? তাছাড়া, সেলের কনসেপ্ট পেপারে বলা হয়েছে যে, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় ১,১৮,৮১৩ বর্গমাইল (?) এলাকার ওপর বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। তাহলে সেখানে কি দেশ নিজ আয়তনের দ্বিগুণেরও বেশি জায়গা পেয়ে যায়?

মৎস্য ও পশুপালন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে দেখলাম যে, তাদের কর্মপরিকল্পনা আপলোড করা হয়েছে ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ তারিখে। সেখানকার কাজের অগ্রগতি খুব ভালো না হলেও কিছু কিছু কাজ হয়েছে। যেমন গভীর সমুদ্রে কী কী মৎস্য সম্পদ ও খনিজ রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করার জন্য R V Dr. Fridtjof Nausen I R V Meen Shandhani দ্বারা ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সার্ভে কাজ পরিচালনা করা হয়েছে এবং প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করা হচ্ছে। আরও জরিপ ও অ্যাকশন রিসার্চ কাজের জন্য তারা পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। ২০০ মিটার গভীরতা থেকে টুনা মাছ ধরার জন্য তারা ২০২০-২৫ মেয়াদে একটা প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। এ প্রকল্পে তিনটা নৌযান ক্রয়ের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু কৃচ্ছ্র সাধনের ব্যবস্থা হিসেবে এ প্রকল্পে এখন দুটি নৌযান ক্রয় করা হচ্ছে।

তিনটা মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিকল্পনা পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, দেশে সুনীল অর্থনীতির ব্যাপকতা ও গুরুত্ব বিবেচনায় এটা যে রকম অগ্রাধিকারের দাবিদার, প্রকৃত অবস্থা তার ধারেকাছেও নেই। সবচেয়ে বড় কথা এখানে অংশীজনদের মধ্যে সমন্বয়ের বড়ই অভাব। একটা অভিন্ন মহাপরিকল্পনার আওতায় বিভিন্ন অংশীজন সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই কেবল তা সফল হতে পারে। কিন্তু সে রকম অবস্থা বাস্তবে তো নেই-ই, কাগজে-কলমেও দেখা যাচ্ছে না। যেমন এমএইউ-এর ৯ খাত বিশিষ্ট চমৎকার কর্মপরিকল্পনার ওপর অন্য কোন মন্ত্রণালয় কোন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে- এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

সুনীল অর্থনীতি সেল জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে খোলার সিদ্ধান্ত কতটুকু দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ছিল, সেটা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ আছে। প্রতিটা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কিছু পক্ষপাতিত্ব থাকে। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ও নিশ্চয়ই তার ব্যতিক্রম না। গভীর সমুদ্র থেকে তেল-গ্যাস উত্তোলন প্রক্রিয়ায় জ্বালানি মন্ত্রণালয় তার নিজের সিদ্ধান্তকেই বেশি প্রাধান্য দেবে। এ প্রক্রিয়ায় যদি সমুদ্রের স্বাস্থ্য, সমুদ্রের প্রাণিজ, উদ্ভিজ্জ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ক্ষতি হয়, তবে সে ক্ষতি এই মন্ত্রণালয়ের কাছে অকিঞ্চিৎকর মনে হতে পারে। আসলে সমুদ্র তলদেশের হাইড্রোকার্বন সম্পদের চেয়ে এর প্রাণিজ, উদ্ভিজ্জ ও অন্যান্য অপ্রাণিজ সম্পদের মূল্য অনেক বেশি। প্রথমোক্ত সম্পদের মূল্য এককালীন; এর উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যয়বহুল, পরিবেশের ওপর এর প্রতিক্রিয়া মারাত্মক। অন্যদিকে শেষোক্ত শ্রেণির সম্পদ বহুবর্ষজীবী, বিনিয়োগের মাধ্যমে উন্নয়নযোগ্য এবং মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। এখন পর্যন্ত এ সম্পদের আহরণ, ব্যবহার ও বিপণনের সঙ্গে বেশি মানুষ জড়িত। কাজেই শেষোক্ত সম্পদের স্থায়িত্ব ও গুরুত্ব অনেক বেশি। সে বিবেচনায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ই সুনীল অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে। তবে তারাও পক্ষপাতিত্বের বাইরে যাবে, এমনটা মনে করা দুরাশা।

বঙ্গোপসাগর বিশ্বের ৬৪টি বৃহত্তম সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থানের অন্যতম। এর সমৃদ্ধ বাস্তুসংস্থান ১০৯৩ প্রজাতির সামুদ্রিক জলজ প্রাণীর পরিবৃদ্ধি সাধন করে থাকে, যার মধ্যে ৪৪.৫ শতাংশ ফিনফিশ, ৩২.২৩ শতাংশ শেলফিশ, ১৫.১০ শতাংশ সমুদ্র-শৈবাল এবং মাত্র ৮.৩২ শতাংশ অন্যান্য জীব। সেখানকার আহরণযোগ্য মৎস্য সম্পদের পরিমাণ ৮০ লাখ টন, অথচ এখন আহরণ করা হয় মাত্র ৬.৭০ লাখ টন। মূলত অনুন্নত, সনাতনী ও অযান্ত্রিক নৌযান ব্যবহার করে মৎস্য আহরণই এর প্রধান কারণ (BIMRAD Journal,3rd Edition)। তাছাড়া, ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও মাত্র ৭০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে ১০০ মিটার গভীরতায় মৎস্য সম্পদ আহরণ করা হয়। অথচ টুনাসহ বেশ কিছু মূল্যবান সামুদ্রিক মাছ ২০০ মিটার গভীরতা থেকে শিকার করতে হয়। কিন্তু উপযুক্ত প্রযুক্তিসমৃদ্ধ জলযান দিয়ে মজুদ চিহ্নিতকরণ ও নিরূপণ সম্ভব না হওয়ায় এই গভীরতা থেকে মৎস্য আহরণ সম্ভব হচ্ছে না; ১৯টা বেসরকারি সংস্থাকে অনুমতি দেওয়া সত্ত্বেও উল্লিখিত সমস্যার কারণে তারা কাজে লাগছে না (TBS, dt.17 December, 2023)।

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধিক্ষেত্রে সুনীল অর্থনীতি উন্নয়নে এক দ্রষ্টব্য কীর্তি। আবার সুরক্ষিত না হলে সেখানকার কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প সাগর-স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিও হতে পারে। এখন সমুদ্রে ও উপকূলীয় অঞ্চলে অনেক দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে এগিয়ে আসছে। গভীর সমুদ্র থেকে হাইড্রোকার্বন উত্তোলনে আসতে চাচ্ছে অনেক শক্তিশালী বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, উপকূল ও সমুদ্রের তলদেশ থেকে মূল্যবান খনিজ সংগ্রহে আসবে অনেকে। আবার অনেকে শুরু করবে মৎস্য চাষ ও মেরিকালচার। ফলে সমুদ্রের বহুবিধ প্রতিযোগিতামূলক ব্যবহার শুরু হবে। এই প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন অংশীজনের স্বার্থ ও পক্ষপাত সাংঘর্ষিক হয়ে উঠতে পারে। সে অবস্থায় সাবধান না থাকলে সমুদ্রের উন্নয়নের পরিবর্তে তার স্বাস্থ্যহানি ঘটার আশঙ্কাই বেশি। আবার এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করাও এক কঠিন কাজ। এজন্য এর ব্যাপক কর্মকাণ্ড একটা সমন্বিত কাঠামোর ভেতর দিয়ে পরিচালনার জন্য একটা স্বাধীন ও শক্তিশালী কর্র্তৃপক্ষ গঠন করা দরকার এবং সেখানে অগ্রাধিকার বিবেচনায় পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন। তবেই এটা দেশ উন্নয়নে ইঞ্জিনে পরিণত হতে পারবে।

লেখক : বদরুল হাসান – খাদ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও কলামিস্ট


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ