1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বিদেশে বসে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা

আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ২২ মার্চ, ২০২২

আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াত তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় সুবিধা করতে না পেরে বর্তমানে সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রচারের আশ্রয় নিয়েছে। তাতেও কোনো ক্ষতি ছিল না। কিন্তু বর্তমানে তারা বিশ্বব্যাপী যে প্রচারণা-যজ্ঞ শুরু করেছে, আওয়ামী লীগ সে সম্পর্কে কতটা সচেতন জানি না। এই টেকনিকটা হচ্ছে- গণতন্ত্র রক্ষার নামে বিভিন্ন সংস্থা গঠন করে বাংলাদেশ সম্পর্কে সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রচার করা। আওয়ামী লীগের বহু অপকর্ম আছে, যেমন- চুরি, দুর্নীতি, বাটপারি, সেগুলো সম্পর্কে নির্বাচনী প্রচারণা চালালে দেশের ক্ষতি ছিল না। এটা দু’দলের ভেতরে নির্বাচনী যুদ্ধ। সুতরাং পাল্টাপাল্টি প্রচারণা চলবেই। কিন্তু এখন যা শুরু হয়েছে তা দলীয় প্রচারণা নয়, নিরপেক্ষ এবং নিজেদের গণতন্ত্রের রক্ষক সাজিয়ে বিশ্বময় সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রচার।

এই প্রচারণায় বিভিন্ন সংস্থা যুক্ত হয়েছে। এ সংস্থাগুলোর নাম দেখে কারও মনে হবে না, এগুলো জামায়াতি বা হেফাজতি প্রতিষ্ঠান। গণতন্ত্র ও নিরপেক্ষতার লেবাস পরে এই প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি হয়েছে এবং কোনো কোনোটি সরাসরি বৈদেশিক অর্থ পাচ্ছে। যেমন- লন্ডনের একটি প্রতিষ্ঠান বিরাটভাবে প্রচার চালাচ্ছে, বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ চলছে। কিন্তু কথাটি যে সত্য নয়, বাংলাদেশের যে কোনো নাগরিক তা জানে। বাংলাদেশে চাল, ডাল, তেলের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে- এটা সত্য; শেখ হাসিনা সরকার তাদের নিদারুণ প্রচেষ্টা দ্বারা বাজারে চালের ঘাটতি ঘটতে দেননি। কিন্তু দাম যে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে, তার জন্য সরকার দায়ী নয়। ইউক্রেনের যুদ্ধের পর বিশ্বের সর্বত্র অস্বাভাবিক হারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তেলের বাজারে প্রভাব পড়েছে বেশি। লন্ডনে দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী হয়েছে। তাই বলে বিরোধী লেবার পার্টি এ কথা বলছে না যে, সরকার দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করেছে কিংবা ব্রিটেনে দুর্ভিক্ষ চলছে। এই প্রচারণাকেও নির্বাচনী প্রচারণা হিসেবে গ্রহণ করা যেত। কিন্তু বাংলাদেশ সম্পর্কে রাষ্ট্রদ্রোহমূলক প্রচারণার উপযুক্ত জবাব না দিলে আওয়ামী লীগ শুধু নির্বাচনে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, রাজনৈতিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বহির্বিশ্বে ছদ্মবেশী জামায়াতি সংস্থাগুলোর তৎপরতার একটি নমুনা দিই। সেই তৎপরতার তাৎপর্য হচ্ছে, গণতন্ত্রের রক্ষক হিসেবে তারা বিভিন্ন নাম গ্রহণ করে। তাতে এখন প্রবীণ আওয়ামী লীগার এবং বিখ্যাত বাঙালিদের সংযুক্ত করে সংস্থাটি যে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ এবং সর্বদলীয়, তা প্রমাণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ ভয়েস ফর গ্লোবাল বাংলাদেশিজ নামে একটি সংস্থা ২৯ মার্চ ব্রিটিশ হাউস অব পার্লামেন্টের একটি কক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান প্রদর্শনের নামে এক সম্মেলন ডেকেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে এবং পুরস্কৃতও করেছে। বেসরকারিভাবে তাদের সম্মান প্রদর্শন করা হোক, তাতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আগেও দেখা গেছে, বিলেতে একটি বাংলা টেলিভিশন সংস্থার উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান প্রদর্শনের নামে তেল-জল মেশানো হয়েছিল। অর্থাৎ কয়েকজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে যেমন সম্মান দেখানো হয়েছে, তেমনি অনেক বিতর্কমূলক ব্যক্তিকেও এই সম্মান প্রদর্শন করে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা হয়েছিল। অর্থাৎ কিছু ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাকেও বাজারে প্রতিষ্ঠাদানের চেষ্টা করা হয়েছিল। অভিযোগ উঠেছে, এই ভয়েস অব গ্লোবাল বাংলাদেশিজ প্রতিষ্ঠানটিরও আসল মতলব নির্বাচনের আগে লন্ডনে বসে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা। এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতিকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তাকে তারেক রহমানের বিভিন্ন সভায় উপস্থিত থাকার এবং মুক্তিযুদ্ধ ও তার নেতাদের সম্পর্কে বিভ্রান্তকর বক্তব্য দিতে শুনেছি। এ সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও আছে। লন্ডনের একটি বাংলা টেলিভিশনে টক শোতে যোগদান করতে গিয়ে তার সঙ্গে আমার বিতর্ক অসৌজন্যতার পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। তার পর থেকে আমি তার সঙ্গে কোনো টক শোতে যোগ দিই না। এই ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দেবেন কই, আমি তো বিদেশে আছি, আমার সঙ্গেও তো যোগাযোগ করেননি! সম্ভবত তারা তাকে না জানেন এমন বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য বিদেশে অবস্থানরত কয়েকজন বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা এবং নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক নেতাদেরও এই সংস্থার লন্ডন সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই নিমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে আছেন বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদ ড. নুরুন নবী (আমেরিকা) এবং আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি সুলতান শরীফ। এমনকি মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে নিয়ত সংগ্রামরত আমার বন্ধু ফতেহ মোল্লাও এই প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর বোর্ডে আছেন। সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে ব্রিটিশ হাউস অব কমন্সে। সম্মেলনের প্রধান বক্তা ডা. নুরুন নবী। কারও পক্ষে সন্দেহ করার কোনো অবকাশ নেই, এই সম্মেলনের আসল চরিত্র কী। আমি ব্যক্তিগতভাবে ড. নুরুন নবীকে এ সম্পর্কে জানিয়েছি, লন্ডনে অবস্থানরত বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেলকেও (তাকে আমন্ত্রণ করা হয়নি) জানিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের সময় লন্ডনে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককেও জানিয়েছি। তিনিও আমন্ত্রিত হননি। কিন্তু আমন্ত্রিত হয়েছেন ডা. জাফরুল্লাহ। বিএনপি নেতা বা সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানো হোক, কোনো আপত্তি নেই। আপত্তি রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কাজে বিদেশে লিপ্ত ব্যক্তিরা দেশটির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে প্রচারণা চালাচ্ছে, সে সম্পর্কে। আপত্তি প্রচারণা চালাচ্ছে তাদের নেতৃত্বে গঠিত সংস্থাগুলো সম্পর্কে।

বিষয়টি তদন্ত করে দেখা উচিত। এই তদন্ত কার্যটি করার দায়িত্ব বাংলাদেশ দূতাবাসের। দূতাবাসের একটি গোয়েন্দা সংস্থাও আছে। তারা কী করে, আমি জানি না। আমি যখন দূতাবাসের একজন উচ্চ পর্যায়ের অফিসারকে বিষয়টি জানালাম, তখন দেখি তিনিও এ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনবহিত। হাইকমিশনার সাহেবাও কিছু জানেন না। তারা সম্মেলনটিকে কোনো গুরুত্বই দেননি। আমার ধারণা, হাইকমিশনার সাহেবাকে চিফ গেস্ট করা হলেই তিনি এত সভা-সমিতিতে দৌড়াদৌড়ি করেন, লন্ডনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ধ্বংসের জন্য কোনো ষড়যন্ত্র চলছে কিনা, সে খবর রাখেন না। আওয়ামী লীগ সরকারের উচিত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রচার চালানোর জন্য লন্ডনভিত্তিক যে নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে, সে সম্বন্ধে খবরাখবর রাখা এবং সে প্রচার ব্যর্থ করার চেষ্টা চালানো। লন্ডনের দূতাবাসে যেসব গোয়েন্দা অফিসার পাঠানো হয়েছে, তারা কী করেন সে সম্পর্কেও সরকারের অবহিত থাকা উচিত।

আমাদের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদেশে ষড়যন্ত্রকারীদের তৎপরতা সম্পর্কে অবহিত এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তি। তিনি আমার ব্যক্তিগত বন্ধুও। তার কাছে অনুরোধ জানাই, বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশবিরোধী এই তৎপরতা সম্পর্কে দূতাবাসগুলোকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেওয়ার। আমি একবার নিউইয়র্কে গিয়েছিলাম এবং আমার সভায় জামায়াতিরা আমার বক্তব্য বিকৃত করে প্রচারণা করে আমার জীবন বিপন্ন করে তুলেছিল, সে কথা তিনি জানেন। আমি ড. নুরুন নবী এবং তার সঙ্গে কিছু প্রগতিশীল ব্যক্তির সহায়তায় সেবার আত্মরক্ষা করেছিলাম। লন্ডনের আওয়ামী লীগেরও অনেক কর্তাব্যক্তি প্রকাশ্যে আমার সম্পর্কে জামায়াতি প্রচারণা সমর্থন করেছেন এবং আমাকে একপ্রকার কোণঠাসা করার চেষ্টা করেছেন। আমি সেই অবস্থা থেকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সমর্থনেই লন্ডনে টিকে আছি।

আমার একার চেষ্টায় বিএনপি-জামায়াতের প্রচারণার দানবকে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব প্রগতিশীল ব্যক্তিকে দেশে ও বিদেশে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিএনপি-জামায়াতের এই বিশ্বব্যাপী অপপ্রচারণার দানবের বিরুদ্ধে অবশ্যই যুদ্ধে নামতে হবে। তা না হলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ রক্ষা করা যাবে না। ড. নুরুন নবীকে আমি টেলিফোনে অনুরোধ করেছি, লন্ডনের সম্মেলনে যোগদান করার আগে সে সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়ার। তিনি আমার অনুরোধ রক্ষা করবেন কিনা, জানি না। আমি রোগশয্যায় শুয়ে আমার কর্তব্য পালন করেছি।

লেখক : আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী – জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও কলামিস্ট।  


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ