1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বিএনপিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সাক্কুর নির্বাচন করার ঘোষণা

কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২২

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৫ জুন ভোট গ্রহণ করা হবে। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার এ তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১৭ মে, বাছাই ১৯ মে, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৬ মে, প্রতীক বরাদ্দ ২৭ মে।

এদিকে তফসিল ঘোষণার পরপরই কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বড় দলগুলোতে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৫ জুন নির্বাচন। মেয়র পদে আওয়ামী লীগে সম্ভাব্য প্রার্থীর ছড়াছড়ি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে দলটির বেশ কয়েক নেতা প্রার্থিতা জানান দিতে নগরীতে রঙিন পোস্টার লাগিয়েছেন। কেউ কেউ ফেসবুকে প্রচার অব্যাহত রেখেছেন। বিএনপি থেকে সম্ভাব্য কোনো মেয়র প্রার্থীর পোস্টার এখানো চোখে পড়েনি। তবে দলটি থেকে বর্তমান মেয়র মনিরুল হক সাক্কু আবারও নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন।

গতকাল তফসিল ঘোষণার পর তিনি এই প্রতিবেদকে বলেন, জনগণ আমার কাছে এসে অবারও ভোটে দাঁড়াতে চাপ দিচ্ছে। তারা চাইছে আমি আবারও নির্বাচন করি। ইনশাআল্লাহ এবারও আমি নির্বাচন করব। দল নির্বাচনে যাক বা না যাক তা দলের ব্যাপার। আমি নির্বাচন করব এটা নিশ্চিত। সাক্কু আরও বলেন, আমি বিজয়ী হলে সরকারের কোনো ক্ষতি হবে না। একজন মেয়র সরকারের কোনো ক্ষতি করতে পারে না। এটা সংসদ সদস্যরা পারেন। একজন সংসদ সদস্য কম হলে একটি দল সরকার গঠন করতে পারে না। তাই সংসদ সদস্যরা সরকারে জন্য ফ্যাক্টর, মেয়র নয়।

মেয়র সাক্কু বলেন, গত বছরগুলোয় কুমিল্লা নগরীর কল্যাণে অনেক কাজ করেছি। এরই মধ্যে আমার অনেক ভক্ত-অনুরাগী সৃষ্টি হয়েছে। তারাও আমাকে চাপ দিচ্ছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে নির্বাচনী দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করব। তিনি আরও বলেন, শিশু সিটি করপোরেশন আমার হাতে শুরু। হাটি হাটি পা পা করে আজ অনেক দূর এসেছে। অনেক কাজ বাকি আছে। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে সিটি করপোরেশনকে সকল নাগরিকের জন্য যোগ্য আবাসস্থল হিসেবে গড়ে তুলতে হলে এখানে আরও অনেক কাজ আছে। এর অনেক কিছু এখনই শুরু হয়ে গেছে। আগামী কয়েক বছরে মধ্যে এর সুফল পাবেন নাগরিকগণ।

মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে কেন্দ্র করেই কুমিল্লা সিটি নির্বাচনী আলোচনা জোরালো হচ্ছে। এই দুই দলের বাইরে এসে এ মূহূর্তে কুমিল্লার মেয়র পদে নির্বাচন করার সামর্থ্য বা জনপ্রিয় কোনো নেতা অন্য কোনো দলে নেই।

এরই মধ্যে মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। এখন পর্যন্ত যাদের নাম আলোচনায় আছে, তারা হলেনÑ বর্তমান মেয়র ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মনিরুল হক সাক্কু, মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য কাউসার জামান বাপ্পি, কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদ পারভেজ খান ইমরান, মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম, মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক কবিরুল ইসলাম শিকদার, মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান মিঠু।

এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরীও দলীয় মনোনয়ন পেলে বিএনপি থেকে নির্বাচন করবেন বলে লোকমুখে শোনা যাচ্ছে। তিনি নির্বাচন সামনে রেখে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য অতি সম্প্রতি ঢাকা-কুমিল্লা সরাসরি রেলপথ ও দক্ষিণাঞ্চলের জলাবদ্ধা দূর করতে দুটি সংগঠন গঠন করেছেন। এ দুই সংগঠনকে তিনি নির্বাচনী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন বলে কেউ কেউ মনে করছেন।

কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো সভা করে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাতের নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজি আকম বাহাউদ্দিন বাহারের সমর্থন নিয়ে আরফানুল হক রিফাতের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের বহুমুখী উন্নয়নের জন্য সরকার সম্প্রতি ১ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এটিকে অবশ্য মনিরুল হক সাক্কুর সাফল্য হিসেবে দেখছেন নগরবাসী। অনেকে মনে করেন, নগরীর উন্নয়ন এই বিপুল অর্থবরাদ্দ এবার সিটি নির্বাচনে ভিন্ন আবহ সৃষ্টি করতে পারে। সে কারণেই এবার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী বেশি।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে সাধারণ ভোটার ও দুই দলের সমর্থক ভোটারদের বড় দাবি হচ্ছেÑ একজন ক্লিন ইমেজের নেতা। যাকে নিয়ে জনগণের দরজায় গেলে অন্তত নাক ছিটকাবে না কেউ। কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে প্রার্থী যাকেই দেওয়া হয়, সেখানে বড় ফ্যাক্টর থাকেন সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজি আকম বাহাউদ্দিন বাহার। তাকে ডিঙ্গিয়ে এখানে নির্বাচনী কলাকৌশল করে বৈতরণী পার হওয়া বড় কঠিন বলে মনে করেন অনেকে।

এদিকে ঢাকায় দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করার দায়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের দুবারের নির্বাচিত মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকে কেন্দ্রীয় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে জেলার পদ রয়েছে। এটিকে অনেকে মনে করছেন বিএনপির একটি নির্বাচনী চাল। তারা যেহেতু ভোটে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং নানা সমীকরণে কুমিল্লা সিটি মেয়রের পদটি বিএনপির অনুকূলে, সেহেতু মেয়র পদটি নিশ্চিত করতেই আগাম এই পথরেখা তৈরি করে রাখা।

২০০৬ সালের তৎকালীন কুমিল্লা পৌরসভা নির্বাচনে মনিরুল হক সাক্কু চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর পর ২০১২ সালে কুসিকের প্রথম নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন। ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এর পর ২০১৭ সালে আবারও কুসিক নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন। মোট কথা ২০০৬ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৫ বছর ধরে তিনি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব পালন করছেন।

নির্বাচন প্রসঙ্গে মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘৪০ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতি করি। সফলভাবে সিটি করপোরেশনের কাজ করেছি। একটি নতুন ঘর গোছাতে যত কষ্ট, তার সবই আমি করেছি। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এখন অনেকটা দাঁড়িয়েছে। এটা এমনি এমনি হয়নি। অনেক কষ্টের পর হয়েছে। আশা করি কুমিল্লার মানুষ আমার কষ্টের মূল্য দেবেন।

শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে দল থেকে মনিরুল হক সাক্কুর জায়গায় মনোনয়ন চাইতে পারে শিল্পপতি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য কাউসার জামান বাপ্পি। তিনি মনে করেন, কুমিল্লায় একজন শিক্ষিত ও সৃষ্টিশীল মেয়রের প্রয়োজন। নগরীকে পরিকল্পিতভাবে সাজাতে সৃষ্টিশীল মেয়রের বিকল্প নেই। এতবছরে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন যে গতিতে এগুনো উচিত ছিল, তা হয়নি। কাউসার জামান বাপ্পি বলেন, দল নির্বাচনে গেলে এবার তিনি দলীয় মনোনয়ন অবশ্যই চাইবেন। কুমিল্লা নগরীকে নিয়ে তার অনেক পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ নগরীর আদি সন্তান আমরা। আমাদের আন্তরিকতা আছে ভেতর থেকে। কুমিল্লা নগরীকে দেশে একটি মডেল নগরী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। আর সুযোগ পেলে আমি সে দায়িত্ব নিতে চাই। দল যদি নির্বাচনে অংশ না নেয়, তাহলে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তখন আমাদের মুরুব্বী ও নিজেদের লোকদের নিয়ে বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে এগুবো।

কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগে সব সময়ই দুটি গ্রুপ সক্রিয়। ফলে দলের কেউই নির্বাচনে তেমন সুবিধা করতে পারেন না। এক গ্রুপ মনোনয়ন পেলে অন্য গ্রুপ বিপক্ষে অবস্থান নেয়। এটি অনেকটা কুমিল্লা আওয়ামী লীগের রীতিতে পরিণত হয়েছে। এ কারণে ভোটার থাকা সত্ত্বেও ভোটের বৈতরণী পার হতে পারেন না আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি নির্বাচনেও তাই ঘটেছে বলে অনেকে মনে করেন। কুমিল্লায় বিগত নির্বাচনগুলোর ইতিহাস পর্যালোচনা করলেও এমন চিত্রই দেখা যায়। এখানে দলীয় লোকরাই দলের প্রার্থীর বেশি ক্ষতি করছে বলে মনে করেন সাধারণ নেতাকর্মীরা। সাধারণ নেতাকর্মীদের মতে, ওই পরিস্থিতিতে তারাও বিব্রত বোধ করেন। অনেকে নিরুপায় হয়ে গ্রুপে যুক্ত হয়ে কাজ করেন।

নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা আরফানুল হক রিফাত বলেন, ‘কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণে আমি আগ্রহী। স্থানীয় এমপি আকম বাহাউদ্দিন বাহার ভাইও আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। এখন দলীয় সভানেত্রীর সিদ্ধান্তের ওপর সবকিছু নির্ভর করছে। রিফাত বিভিন্ন সভা-সামাবেশে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে কথা বলছেন।

কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদ পারভেজ খান ইমরান বলেন, এবার দলীয় মনোনয়ন চাইব। আশা করি আমার অতীত কর্মকাণ্ড দল মূল্যায়ন করবে। আমি এবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেব ইনশাআল্লাহ। এ জন্য সকলের সহযোগিতা ও দোয়া চাই।

মহানগরী আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম বলেন, আমি এবার দলীয় মনোনয়ন চাইব। দলের প্রতি আমার ত্যাগ ও অতীত কর্মকাণ্ডের কারণে আমাকে দল মনোনয়ন দেবে বলে বিশ্বাস করি। তিনি আরও বলেন, ‘আমি ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। দীর্ঘসময় ধরে দলের জন্য কাজ করেছি। আল্লাহর রহমত ও দলীয় সভানেত্রীর স্নেহদৃষ্টি আমার প্রতি রয়েছে। আশা করি দল আমাকে নগরবাসীর সেবা করার সুযোগ দেবে।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ