1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

সৃষ্টিশীল নারী নেতৃত্বের আদর্শ সায়মা ওয়াজেদ পুতুল

তাপস হালদার : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২১

বাংলাদেশে একযুগ আগেও অটিজম শব্দটিকে এভাবে কেউ চিনত না। যিনি চিনিয়েছেন তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নাতনি, প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সুযোগ্য কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। মানুষের জন্য কাজ করা বঙ্গবন্ধু পরিবারের স্বভাবজাত ধর্ম। পরিবারের প্রতিটি সদস্য স্ব-স্ব অবস্থান থেকে মানুষের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন-

“একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানব জাতি নিয়েই আমি ভাবি।”

জাতির পিতার সুযোগ্য নাতনি সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এমন এক শ্রেণির মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করছেন, যা অতীতে এমনটি দেখা যায়নি। তিনি আজ প্রতিটি অটিস্টিক শিশুদের মায়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।

একসময় দেশে অটিজম-আক্রান্ত শিশুদের অভিশাপ হিসেবে ভাবা হতো। পরিবার থেকে অটিজম-আক্রান্ত সন্তানদের লুকিয়ে রাখা হতো, বাবা-মা সন্তানদের নিয়ে সমাজে বিরূপ পরিস্থিতির শিকার হতেন। অটিস্টিক শিশুরা পরিবার ও সমাজের বোঝা ছিল। প্রধানমন্ত্রীকন্যা সায়মা ওয়াজেদের বিশেষ উদ্যোগে অটিস্টিক শিশুরা আজ শিক্ষিত হয়ে নিজেরাই স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম শিশুদের নিয়ে কাজ শুরু করেন। বিশেষ করে তারই আগ্রহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার প্রতিবন্ধীর অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩ প্রনয়ন করেন। সেখানে অটিজম, শারীরিক প্রতিবন্ধী, মানসিক অসুস্থতাজনিত প্রতিবন্ধী, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, বাক প্রতিবন্ধী, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, শ্রবণ প্রতিবন্ধী, শ্রবণ-দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসি, ডাউন সিনড্রোম এবং অন্য প্রতিবন্ধীসহ ১২ ধরনের প্রতিবন্ধীর কথা বলা হয়েছে।

সাধারণত কাউকে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, অন্ধ এবং জন্মগতভাবে অস্বাভাবিক শিশুদের নিয়ে কাজ করতে দেখা যায় না। বরং বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের সমাজের ‘বোঝা’ এবং ‘বিরক্তকর’ মনে করে এড়িয়ে চলেন। কিন্তু সায়মা ওয়াজেদ পুতুল সেই অস্বাভাবিক কাজটিকেই বেছে নিয়েছেন; এবং অটিজম শিশুদের সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অটিজম মোকাবিলায় বাংলাদেশ আজ বিশ্বে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দক্ষ-অভিজ্ঞ প্রশিক্ষিতদের তত্ত্বাবধান, বিশেষ শিক্ষা কর্মসূচির ব্যবস্থা, খেলাধুলা, শরীরচর্চা, বইপড়া, প্রত্যেক প্রতিবন্ধী শিশুর বিশেষ চাহিদা পূরণ, বিকলাঙ্গ শিশুদের আর্থিকভাবে বিশেষ ব্যবস্থার আওতায় আনা এবং মানসিক-শারীরিক অটিস্টিক শিশুদের উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য স্কুলে ভর্তির অবকাঠামোগত পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, নিবিড় শিক্ষাগ্রহণের জন্য প্রত্যেক প্রতিবন্ধীকে ভাতা বা উপবৃত্তির ব্যবস্থা, অটিজম কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত সমন্বিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা গ্রহণ করা হয়েছে। যার ফলে নীতিমালার আওতায় ৫০টি বিদ্যালয়ে প্রায় ১০ হাজার প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রী লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে।

প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিশেষ বা একীভূত শিক্ষা কার্যক্রম, প্রশিক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম, অটিস্টিকদের বিনামূল্যে বিভিন্ন সেবা প্রদান, অটিজ- আক্রান্ত শিশুদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট অব নিউরো ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম প্রতিষ্ঠা, প্রতিবন্ধীদের বিনামূল্যে ফিজিওথেরাপিসহ অন্য চিকিৎসা প্রদানের জন্য ৬৪ জেলায় ১০৩ প্রতিবন্ধী সেবাকেন্দ্র স্থাপন, ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার চালু করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অটিজমকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। দশটি মেডিক্যাল কলেজে শিশুদের অটিজমজনিত সমস্যা শনাক্ত করার জন্যে বিশেষ ইউনিট চালু করা হয়েছে। সরকারি চাকরিতে প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ কোটা ব্যবস্থা চালু করেছে সরকার।

সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম বিশেষজ্ঞ হিসেবে সারা বিশ্বেই পরিচিত। তিনি বাংলাদেশের অটিজম বিষয়ক জাতীয় কমিটির সভাপতি। অটিজম শিশুদের অধিকার নিয়ে তিনি শুধু বাংলাদেশই নয়, সারা বিশ্বেই কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১১টি দেশের (বাংলাদেশ, ভুটান, উত্তর কোরিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নেপাল, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও তিমুর) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল এক্সপার্ট এডভাইজারি প্যানেলের একজন সম্মানিত সদস্য।

তার উদ্যোগেই ২০১১ সালের ২৫ জুলাই ঢাকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে প্রথমবারের মতো –‘Autism Spectrum disorders and developmental disabilities in Bangladesh and South Asian’-এর আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ১১ দেশের অংশগ্রহণে ‘ঢাকা ঘোষণা’ গৃহীত হয়। যা অটিস্টিক শিশুর উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। যেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন ভারতের অটিজম আন্দোলনের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী।

এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি, পাকিস্তান পার্লামেন্টের স্পিকার ফাহমিদা মির্জা, শ্রীলঙ্কার ফার্স্ট লেডি শিয়োস্থি রাজাপাকসে, মালয়েশিয়ার ফার্স্ট লেডি ইনিবোংবাং ও মালদ্বীপের ভাইস-প্রেসিডেন্টের স্ত্রী ইহাব উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে গঠিত হয় ‘South Asian Autism Network (SAAN)’। যার সদর দফতর করা হয় বাংলাদেশে।

অটিজম বিষয়ে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ‘এক্সিলেন্স ইন পাবলিক হেলথ অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত করে। এছাড়াও সংস্থাটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সম্মান জানিয়েছে। তিনি নির্বাচিত হয়েছেন ইউনেস্কোর ‘ইউনেস্কো-আমির জাবের আল-আহমদ আল-সাবাহ পুরস্কার’-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক জুরি বোর্ডের সভাপতি।

‘বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস’ উপলক্ষে ২০১৬ সালে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশ, ভারত, কাতার, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র মিশন এবং বেসরকারি সংস্থা অটিজম স্পিকস যৌথ উদ্যোগে ‘অটিজম মোকাবিলা: এসডিজির আলোকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কৌশল’ শীর্ষক সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তার দেয়া ‘অটিজম-আক্রান্ত শিশু ও তাদের পরিবারের জন্য স্বাস্থ্যসেবা এবং আর্থ-সামাজিক সহায়তা বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রস্তাব গৃহীত হয়।

অটিজম নিয়ে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত ‘ফাইভ অন ফ্রাইডে’ নামক জরিপে বিশ্বের সৃষ্টিশীল ১০০ নারী নেতৃত্বের আসনে স্থান করে নিয়েছেন।

বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির ৪৮টি দেশের জোট (সিভিএফ)-এর হয়ে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। সংস্থাটির চারজন মর্যাদাপূর্ণ বিশেষ দূতের একজন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। অন্য তিনজন হলেন মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট নাশিদ কামাল, ফিলিপাইনের ডেপুটি স্পিকার লরেন লেগ্রেডা এবং কঙ্গোর জলবায়ু বিশেষজ্ঞ তোসি মাপ্নু।

সায়মা ওয়াজেদ পুতুল যুক্করাষ্ট্রের ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক, ২০০২ সালে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির উপর মাস্টার্স, ২০০৪ সালে স্কুল সাইকোলজির ওপর বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি লাভ করেন।

বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও সচেতনতা তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে তার পরিচালিত সূচনা ফাউন্ডেশন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) একজন ট্রাস্টি।

মানুষের জন্য কাজ যেকোনো মাধ্যম থেকেই করা যায় তার প্রকৃত উদাহরণ সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। টানা একযুগেরও বেশি সময় ধরে মা প্রধানমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও তাকে কখনও ক্ষমতার লোভ স্পর্শ করতে পারেনি। তিনি কখনও সরাসরি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হননি। কিন্তু রাজনীতি না করেও যে মানুষের জন্য কাজ করা যায় সেই উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। এই মানবিক নারী ৯ ডিসেম্বর ১৯৭২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। আজ শুভ জন্মদিনে আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ কর্মময় জীবন কামনা করছি।

লেখক: তাপস হালদার, সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ ও সাবেক ছাত্রনেতা। haldertapas80@gmail.com


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ